দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
গ্রাম বাংলার লৌকিক উৎসব মুঠ পুজো বা মুঠি পুজো। মূলত: কৃষক পরিবারগুলিতে এই উৎসব বিশেষ ভাবে প্রচলিত। মুঠি পুজোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমন ধান ঘরে তোলার পালা। মাঠ থেকে মুঠ বা ধানের মুঠি আনা হয় লক্ষ্মীর প্রতীক হিসেবে। মাঠের সোনালি ধান খামারের গোলায় তোলার আগে যাতে কোনও বিপত্তি সৃষ্টি না হয়, তার জন্য প্রথমেই মা লক্ষ্মীর পুজো শ্রদ্ধা ভরে পালন করেন কৃষকরা। দু'বেলা পুজো করা হয় বাড়িতে।
অঘ্রাণ মাস মানেই নবান্নের মাস। নতুন ধানের অন্ন নবান্ন। শ্রাবণের শুরুতে বৃষ্টিপাত শুরু হতেই কৃষকেরা সঠিক সময় বুঝতে পেরে, মাটিতে ছড়িয়ে দেয় ধানের বীজ। বর্তমানে বৃষ্টির উপর নির্ভর না করে কৃষকরা ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করে চাষ করেন। কয়েকদিন পর, দিগন্তের ক্ষেত বিদীর্ণ করে সবুজে-শ্যামলে-নীলিমায় ভরে ওঠে কানায় কানায়। কোজাগরীর চাঁদের আলো সেই ক্ষেতে পাকা ফসলে এসে লাগলেই, সোনালি রং ধরে ধানের শীষে। শুরু হয়ে যায় নবান্নের আয়োজন। কিন্তু তারও আগে অর্থাৎ কার্তিক সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে, অঘ্রাণের প্রথম দিনে তারা পালন করেন মুঠি পুজো। অর্থাৎ তাদের ভাষায়, সংক্রান্তি তিথি অনুসারে এই মুঠি পুজো হল এ বাংলার প্রথম লক্ষ্মী পুজো।
অধিকাংশ গ্রামে এখন শহরের ছোঁয়া লাগায় তেমনভাবে প্রাচীন রীতি লক্ষ্য করা যায় না। তবে শহর ছাড়িয়ে এখনও কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে রীতি মেনে সব কিছু করা হয়। সেই রকম কিছু গ্রাম আজও অঘ্রাণের প্রথম সকাল, ভোরের কুয়াশায় ভিজে যায় মাঠ-ঘাটে পায়ে হেঁটে মুঠ ধান নিয়ে আসেন। পরিবারের কোনও এক সদস্য শুভ সময় দেখে আড়াই মুঠ ধান কাপড়ে জড়িয়ে বাড়ি আনেন। সেই মতো শনিবার সকালে নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের ভদ্রপুর গ্রামের কৃষকের সকালবেলা স্নান সেরে, পবিত্র সাদা পোশাক পরিহিত হয়ে, হাতের কাস্তে নিয়ে চলে যান মাঠে। তারপর মাঠের এক কোণে আড়াই মুঠা ধান কেটে, ভক্তিভরে প্রণাম করে, সেই ধানের সমষ্টিকে মাথায় তুলে, নিঃশব্দে বাড়ি ফেরেন। মাঠ থেকে বাড়ির ফেরার পথে কোনও কথা বলতে নেই। আওয়াজ হলে নাকি মা লক্ষ্মী রুষ্ট হোন। নিজের বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়াতেই কৃষকের স্ত্রী অর্থাৎ বাড়ির গৃহবধূরা একটা কাঠের পিঁড়েতে গৃহস্বামীকে দাঁড় করান, তারপর মাটির মঙ্গল ঘটের জল দিয়ে কৃষকের পা ধুইয়ে, নিজের কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেন পা। তারপর সেই গৃহবধূ ভক্তিভরে প্রণাম সেরে, মা লক্ষ্মীকে সাদরে আহ্বান জানান ঘরে। এবং অবশেষে সেই ধানের সমষ্টিকে বাড়ির পবিত্র স্থানে রেখে শুরু হয় পুজো।
(www.theoffnews.con Muthi pujo West Bengal Village Birbhum)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours