সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
তামিলনাড়ুর শিবগিরি পাহাড় থেকে আবিষ্কৃত এ. বেড্ডোমির পরে অগস্ত্যগামা গণের এটি দ্বিতীয় প্রজাতি আবিষ্কৃত হল।
পশ্চিমঘাটের নানা প্রাণী ভর্তি জঙ্গলগুলি থেকে প্রাণীর বিবর্তনের আরেকটি বিস্ময়কর নিদর্শন পাওয়া গেল - ক্ষুদ্র গিরগিটির একটি নতুন প্রজাতি - যাকে গবেষকরা একটি “ক্ষুদ্রকায় ড্রাগন” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আগামিডি পরিবারের অন্তর্গত অগস্ত্যগামা এজ বা উত্তুরে ক্যাঙ্গারু গিরগিটি সর্বাধিক ৪.৩ সেমি লম্বা হয় বলে জানা গেছে। ক্ষয়িষ্ণু পঞ্চম আঙুলের কারণে এই সরীসৃপগুলি উঁচু জায়গায় ওঠায় দক্ষ নয় তাই এরা অন্য গিরগিটির মত গাছে ওঠে না। তার বদলে, এরা বেশিরভাগই ডাঙ্গায় ঘোরাফেরা করে আর ঝরা পাতার পুরু আস্তরণের জায়গা এদের খুব প্রিয়। ছোটখাটো পোকামাকড় দিয়ে তারা উদরপূর্তি করে আর শিকারীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এরা তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে শুকনো পাতার তলায় লুকিয়ে পড়ে। জার্মানীর সেনকেনবার্গ জাদুঘরের প্রকাশিত বিজ্ঞান পত্রিকা “ভার্টিব্রেট জুওলজি”তে প্রকাশিত হয়েছে। ভারত এবং বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একদল বিজ্ঞানী দক্ষিণ পশ্চিমঘাটের ইদুক্কির কুলামাভুতে নতুন প্রজাতিটি আবিষ্কার করেছেন।
সে যে চমকে বেড়ায়, দৃষ্টি এড়ায়, যায় না তারে বাঁধা/ সে যে নাগাল পেলে পালায় ঠেলে, লাগায় চোখে ধাঁধা।
কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সায়েন্স অ্যান্ড এঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ বোর্ড’-এর ন্যাশনাল পোস্টডক্টরাল ফেলো ও এই গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক সন্দীপ দাস জানান যে ২০১৫ সাল নাগাদ অন্য আর একটি বিরল দর্শন প্রাণী, মহাবলী ব্যাঙ বা বেগুনী ব্যাঙের অনুসন্ধানে একটি অভিযানের সময় গিরগিটির এই প্রজাতিটিকে প্রথম দেখা গিয়েছিল। গিরগিটিটিকে ইদুক্কির বনে একটি জলধারার কাছে দেখা গেছে। যদিও প্রথমে তাঁদের মনে হয়েছিল এটি একটি এ. বেড্ডোমি, কিন্তু সরীসৃপ বিশেষজ্ঞরা এমন কিছু প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন যাতে মনে করা হচ্ছে যে খুব সম্ভব এটি একটি নতুন প্রজাতি। কয়েক বছর পর তাঁরা ওই অঞ্চলে একই প্রজাতির আরও কিছু নমুনা পরীক্ষা করার পর তাঁদের ধারণা যে সঠিক সেটা প্রমাণিত হয়েছিল। তাঁদের বিশ্লেষণ থেকে ধারাবাহিক ভাবে আকারগত এবং জিন ঘটিত পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়াও, এগুলি ভৌগোলিক ভাবেও বিচ্ছিন্ন - তাদের বিচরণ ক্ষেত্রগুলির মধ্যে কমপক্ষে ৮০ কিলোমিটারের দূরত্ব নথিভুক্ত হয়েছে। নতুন প্রজাতির গোটা গা ম্যাটমেটে জলপাই-বাদামী রঙের কিন্তু মাথার রঙ কিছুটা গাঢ়। এটির গলাটি সাদা আর গলকম্বলের ওপর একটি চওড়া গাঢ় বাদামী ডোরা আর তার চারপাশে ইট রঙা হলুদ আঁশের আস্তরণ রয়েছে।
এজ (EDGE)
এই প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে ‘জুওলজিকাল সোসাইটি অভ লন্ডন’-এর ‘Evolutionary Distinct and Globally Endangered (EDGE)’ কর্মসূচীর নামে কারণ এটি সন্দীপ দাস এবং তাঁর সহ লেখক ‘আরণ্যকম নেচার ফাউন্ডেশনে’র সহলেখক কে পি রাজকুমার সহ বেশ কয়েকজন গবেষককে আর্থিক সহায়তা করেছে। গবেষণা দলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ‘বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি’র শৌনক পাল; ‘অশোক ট্রাস্ট ফর রিসার্চ ইন ইকোলজি অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট’-এর সূর্য নারায়ণন, ‘কেরালা ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর কে সুবিন, ‘জুওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’র মুহামেদ জাফর পালোট এবং উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি দীপক। গিরগিটির গিটকিরি এঁরা শুনেছেন কিনা জানা নেই, কিন্তু প্রাণীকুলের দ্রুত বিলুপ্তির কালে তাঁরা যে একটি নতুন প্রজাতির সন্ধান দিলেন এটা পৃথিবীর শুভার্থীদের কাছে অত্যন্ত আশাপ্রদ।
(www.theoffnews.com Agasthyagama Edge Kangaroo Lizard)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours