সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

(গুয়াতেমালার লোককথা, মূল লেখক: আন্তোনিয়ো রামিরেজ)

এক যে ছিল রাজা যার ছিল তিনটে ছা আর এক ভাইঝি, আর ভগবানের কী লীলা দেখ – বুইতে পাচ্ছো না তো কী ঘটল? কী আবার, তিনটে রাজছোঁড়াই একসঙ্গে রাজার ভাইঝি মানে তাদের খুড়তুতো বোনের প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খেইতে লাগল। রাজা মনে মনে শলা করল, “আমার ভাইঝি তো একসঙ্গে তিনজনকে বিয়ে করতে পারবে না, আর আমি যদি একজনের সঙ্গে বিয়ে দিই তাহলে আমার সোনার রাজ সংসারে আগুন লেগেই থাকবে।” 

ঝামেলা মেটাতে রাজা তার তিন গুণধর পুত্রকে ডেকে পাঠিয়ে বলল, “তিনজনেই কান খাড়া করে শোন! আমাকে এমন একটা দুর্লভ বস্তু এনে দাও যেটা আমি চোখেও দেখিনি। যে এটা করতে পারবে সেই আমার ভাইঝিকে বিয়ে করতে পারবে।”

প্রত্যেকেই বলল, “আমিই এটা করতে পারবো”

রাজা বলল, “তিন মাস সময় দিলাম।”

তৎক্ষণাৎ তারা রাজবাড়ি থেকে নিষ্ক্রান্ত হলো আর চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে গায়েব হয়ে গেল।

যাইহোক, তিনজনের মধ্যে বড়টা একটা চশমা বিক্রি হতে দেখে ঝট করে সেটা কিনে ফেলল। এই অবিশ্বাস্য চশমা যে পরবে সে দূর দূরান্ত শহরে কী হচ্ছে তা স্পষ্ট দেখতে পাবে। সে নিজের মনেই বড়াই করে বলল, “সারা পৃথিবীতে এরকম জিনিস আর নেই।”

তারপর মেজটা একটা ম্যাজিক কার্পেট বাগাল যেটা মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে এক শহর থেকে আর এক শহরে পৌঁছে যায়। সেও বড়াই করে বলল, “এমনটি আর কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।”

সবশেষে, ছোট ভাইটা একটা শক্তিশালী আপেল খুঁজে পেল যেটা মরা লোকের নাকের সামনে নাড়ালেও মরা জেগে উঠবে। সে ভাবল – “হ্যাঁ! এমন একটা জিনিস পেয়েছি রে রাম, এ দেশে এর ধারে কাছে কেউ আসতে পারবে না। আমি এবার থেকে মরা লোককে বাঁচাব আর প্রচুর পয়সা কামাব”

যে জায়গা তিন ভাই আবার একসঙ্গে হওয়ার জন্য বেছে ছিল সেই জায়গায় তারা এসে জুটল আর বলল, “যাক, আবার আমরা এক জায়গায় হয়েছি। এবার কার কাছে কী আছে বের কর।”

“একটা চশমা! দাঁড়াও, এটা খালি একবার আমাকে পরতে দাও, তাহলেই আমরা প্রাসাদে কী হচ্ছে দেখতে পাব। ওহ্ হো! এটা কী হল? একটা ভূমিকম্প শুরু হয়েছে আর রাজার ভাইঝির মড়াটা শোয়ান আছে!”

“হায় ভগবান! আমাদের বোন মরে গেল?”

“আমি যদি একবার ওখানে পৌঁছাতে পারতাম,” আপেলের মালিক ছোটভাই বলে উঠল, “তাহলে আমি ওকে আবার বাঁচিয়ে তুলতে পারতাম।”

“ঝটপট আমার এই কার্পেটটায় উঠে পড়”, মেজ ভাই সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল।

আর সত্যি সত্যি দশ মিনিটের মধ্যেই তারা অকুস্থলে হাজির হল। যার কাছে আপেল ছিল সে সটান কফিনের কাছে পৌঁছে গেল। আপেলটা হাতে ধরে সে মৃত ভাইঝির শরীরের ওপর ক্রুশ চিহ্ন আঁকল। ভাইঝি উঠে বসল। তারপরে সে রাজার দিকে ফিরে বলল, “বাপি, ও আমার। আমি ওকে বাঁচিয়ে তুলেছি।”

কিন্তু তার ভাই বলল, “কার্পেটটা যদি না থাকত তোর ছাতার আপেলটা কোন কাজে লাগত শুনি!”

আর বড় ভাইও বলল, “ছাতার আপেলই বল বা কার্পেট, চশমাটা যদি না থাকত তাহলে এখানে যে আমাদের আসতে হবে, সেটা কোন ছাতার ব্যাটা বলত, শুনি! আমিই একমাত্র আমাদের তুতো বোনকে বিয়ে করার আসল অধিকারী।”

“আরে, না, না, না!” রাজা বলে উঠল (দর্শকদের হাসি), “তোরা তিনজনেই সমান সমান। তোদের কারোর সঙ্গেই আমার ভাইঝির বিয়ে দিতে পারব না। এখন ফোট এখান থেকে। অন্য জায়গায় মেয়ে খুঁজগে যা!”

ভায়া, বুয়েচ কি না? দুর্লভ বস্তু খোঁজার সময় কোনও না কোনও শহরে চোখকাড়া মেয়েরা তাদের নজরে পড়েছিল। তাই রাজা বলল, “যা, নিজেদের পছন্দের মেয়েদের নিয়ে আয়, তারপর আমি তোদের বিয়ে দিয়ে দেব।”

(www.theoffnews.com Guatemala folk tales)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours