সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

লিলিপুট দ্বীপের লিলিপুটিয়ান মানুষদের কথা তোমাদের নিশ্চয় মনে আছে। এরকম একটি লিলিপুট প্রাণীর কথা আজ তোমাদের বলব যেটি সদ্য সদ্য ক্ষুদ্রতম ব্যাঙ আর ক্ষুদ্রতম মেরুদন্ডী প্রাণীর জোড়া খেতাব জিতে নিয়েছে। যারা পুঁচকে প্রাণী পছন্দ করে তাদের পক্ষে এটা খুব আনন্দের খবর যে একটা মাছি ব্যাঙ ব্র্যাকিসেফালাস পিউলেক্স এই কামাল করেছে। যখন আমরা ছোট্ট বলছি তখন কিন্তু আমরা কোনও ভুল করছি না। ব্র্যাকিসেফালাস পিউলেক্স-কে নিয়ে নতুন যে গবেষণা হয়েছে তাতেই দেখা গেছে যে এটি একটি মটর দানার থেকেও ছোট - ছেলে ব্যাঙরা গড়ে ৭ মিলিমিটার বা ০.২৮ ইঞ্চি লম্বা আর মেয়েরা ৮ মিলিমিটারের  (০.৩২ ইঞ্চি) একটু বেশি লম্বা।

পকেটে রাখা যায় এমন উভচররা, ব্যাঙ হওয়া সত্ত্বেও, মাছি ব্যাঙ হিসেবে পরিচিত। এরা ব্রাজিলের দক্ষিণ বাহিয়ার পাহাড়ের চূড়ায় জঙ্গলের স্বাভাবিক এবং দেশীয় প্রজাতি এবং ২০১১ সালে এদের সম্বন্ধে প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। তখন কিন্তু এদের খুব সংখ্যক সদস্যের ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছিল এবং তাদের প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থা না বোঝার কারণে তাদেরকে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ব্যাঙ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়নি। 

নতুন গবেষক দলটি ব্যাখ্যা করে বলেছে -“বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ব্যাঙ নির্ধারণ করা কোনও সহজ কাজ ছিল না।” এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে তাঁরা ৪৬টি ব্র্যাকিসেফালাস পিউলেক্স ব্যাঙের শরীরের দৈর্ঘ্য মাপ করে এবং আগে স্বীকৃত “পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ব্যাঙ” পেডোফ্রাইন অ্যামাউয়েনসিস এবং অন্যান্য ক্ষুদ্রকায় ব্যাঙের প্রজাতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। এরপর তাঁরা দেখেছেন যে কিছু পুরুষ বি. পিউলেক্স ব্যাঙ পি. অ্যামাউয়েনসিস পুরুষ ব্যাঙের থেকে আকারে ছোট। অবশ্য, তাঁদের কাছে পি. অ্যামাউয়েনসিস মহিলা ব্যাঙের তথ্য খুব কম থাকায় তাঁরা পরবর্তী ক্ষুদ্রতম প্রজাতি পি. ভেরুকোসার সঙ্গে তুলনা করে দেখেন যে তাদের থেকেও বি. পিউলেক্স ছোট। ব্যাঙেদের পরিপক্কতা বিচার করে গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছিলেন যে ব্যাঙগুলি প্রাপ্তবয়স্ক ছিল। 

এই সবকিছু বিবেচনা করে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে ব্র্যাকিসেফালাস পিউলেক্স ব্যাঙকে “পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ব্যাঙ এবং মেরুদন্ডী প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে, যদিও পাপুয়া নিউ গিনির পেডোফ্রাইন তাদের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে।”

কোপেনহেগেনে “ন্যাচারাল হিস্টরি ম্যুজিয়াম অভ ডেনমার্ক”-এর মার্ক শেরজ “ন্যু সায়েন্টিস্ট”কে বলেছেন - “এগুলি সত্যিই বিশ্বের সম্ভাব্য ক্ষুদ্রতম ব্যাঙ, যা সত্যিই আশ্চর্যজনক।” গবেষণাপত্রটি “জুলজিকা স্ক্রিপ্টা” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

(www.theoffnews.com smallest frog Brachycephalus Pulex)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours