সুস্মিতা পাল, লেখিকা ও শিক্ষিকা, কলকাতা:

বেডরুমের দরজাটা রাতে লক করে না রাই। ঘুমের মধ্যেই টের পায়। কোনদিন বাবা আসে। কোনদিন আবার মা। ভয় পায় বোধহয়। দেখে যায় মেয়েকে। মায়ের থমকে থাকা দীর্ঘশ্বাসটুকু শুনতে পায় রাই। তখন স্রোতকে আঁকড়ে ধরে। স্বপ্নের মধ্যেই। স্রোত ওর সঙ্গেই থাকে। প্রতিদিন, সবসময়।

যেমন এই একবছর ধরে পাশে ছিল। সাত মাস আগের একবছর। বিয়ের পর। তার আগে আরও বছরখানেক। ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ। রাইয়ের বাড়িতে অনেকরকম অনুশাসন। ছোট থেকে স্নেহের অভাব হয়নি। কিন্তু গন্ডি মেনে চলতে হতো। স্রোতের সঙ্গে আলাপ, তারপর বিয়ের পরে প্রথম নিজের ডানা দুটো মেলতে পেরেছিল রাই। কি সহজ, সুন্দর। নদীর মতো জীবন। 

রাই অনেক ভোরে বেরোয়। মর্নিং স্কুল। সেদিন ঘুমিয়ে পড়েছিল। অনেক রাতে একবার ঘুম ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখে, স্রোত তখনও ল্যাপটপে ব্যস্ত। দুজনে কিছুক্ষণ তাকিয়েছিল দুজনের দিকে।স্রোতের চোখের আদরে নরম হেসে আবার ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিল রাই। সকালে সেদিন বেরোবার সময় স্রোতকে ডেকে বলে যায়নি আর। কত রাতে শুয়েছে কে জানে! ন'টা নাগাদ প্রিন্সিপল ডেকে বললেন তক্ষুণি বাড়ি ফিরতে। বাড়িতে এত ভিড় কেন? বাবা মা এসেছে। সবাই সরে যাচ্ছে রাইকে দেখে। স্রোত এত চেঁচামেচি শুনেও উঠছে না কেন?বিশ্বাস হয় কখনও! মাত্র তেত্রিশ বছর বয়স। কম বয়সের ম্যাসিভ অ্যাটাকে নাকি এমনই প্রাণঘাতী। ঘোর কাটেনি কতদিন! এখনও কেটেছে কি? কি জানি। সবাই কতকিছু বলে। বেশীর ভাগটাই শেষ পর্যন্ত দু'ধরনের। একদল মনে করে দুর্ভাগ্য, কপালে ছিল তাই। সবার ভাগ্যে সব সয় না। আর একদল সাহস দেয়। এই তো বয়স রাইয়ের, তিরিশও হয়নি। জীবন পড়ে আছে। আজকাল কত এমন হচ্ছে। আবার সব হবে। এভাবে শুনতে, ভাবতে ভালো লাগে না রাইয়ের। 

কাল রাতে একটা কথা হঠাৎ মনে হলো। নিজেকে নিজেই কত কিছু বোঝায় সে। কোনও মানুষের সবচেয়ে বড় সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলর সে নিজেই। সবাই বলে সময় নাকি সবচেয়ে ভালো ওষুধ। স্রোতকে তো সবসময় সে অনুভব করে। পাশে, কাছে। চলুক না এভাবেই। হাসি, আনন্দ থাক। কান্না, হু হু করা কষ্টও। সব নিয়ে পথ চলতে থাকবে রাই। হয়তো অজান্তেই কেউ সঙ্গী হয়ে পড়বে তার চলার পথে। হয়তো বা সে নিজেই হয়ে উঠবে অন্য কারও চলার সঙ্গী। আপাতত না হয় চলার আনন্দটুকুই থাক।

রেহান এবার ক্লাস সিক্স। ও যখন থ্রিতে ছিল, রাই স্কুল জয়েন করে। ওদের ক্লাস টিচার ছিল সে। সেই থেকে প্রতিদিন সকালে রেহানের হাত থেকে একটা ফুল তার পাওনা। রেহানের মনটা ভালো না। কতদিন হয়ে গেল ম্যাম আর তেমন হাসে না। গালটা টিপে আদর করে না। আজ কিন্তু ফুলটা হাতে নিয়েই খোঁপায় গুঁজল রাই। গালে আঙুল ছোঁয়াতেই একগাল হেসে রেহান বলে উঠল, "গুড মর্নিং, ম্যাম।"

(www.theoffnews.com floting life)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours