সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

(THE COMING OF MEN, A LONG, LONG WHILE AGO / Eskimo Folk-Tales Ed. by Knud Rasmussen [1921]  Kessinger Publishing, LLC (October 17, 2007)/ Author - Unknown)

অনেক অনেক দিন আগে পৃথিবীর উদ্ভব আর মানুষ যে ভাবে পৃথিবীতে এসেছিল সে বিষয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা অনেক কথা জানিয়ে গেছেন। এখন যেমন তোমরা ছোট ছোট কালো দাগে কথা লিখে রাখতে পার অনেক দিন আগে যারা পৃথিবীতে ছিলেন তারা তেমন পারতেন না। তারা শুধু গল্প বলতে পারতেন আর তারা অনেক বিষয়েই কথা বলেছিলেন সেইজন্য আমরা সেই সব বিষয়ে একেবারেই যে কিছু জানি না তা নয় কারণ আমাদের ছোটবেলায় ওই সব গল্প আমরা অসংখ্যবার শুনেছি। বুড়িরা তাদের গল্পগুলো শুধু শুধু বলত না, আমরা অক্ষরে অক্ষরে তাদের কথা বিশ্বাস করতাম, কারণ বুড়ো বয়েস মিথ্যে কথা বলে না।

অনেক অনেক দিন আগে আকাশ থেকে পৃথিবী খসে পড়ে। মাটি, পাহাড় আর পাথর সব আকাশ থেকে পড়ে আর পৃথিবী তৈরি হয়ে যায়। আর পৃথিবী তৈরি হয়ে গেলে মানুষের আবির্ভাব হয়।

এই রকম শোনা যায় যে তারা পৃথিবীর জঠর থেকে বেরিয়ে এসেছিল। ছোট্ট বাচ্চারা পৃথিবীর ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছিল। উইলো গাছের ঝোপের মধ্যে তারা আবির্ভূত হয়েছিল, তাদের আপাদমস্তক উইলো পাতায় ঢাকা ছিল। আর তারা সেই ছোট্ট ছোট্ট ঝোপঝাড়ে শুয়ে ছিল - শুয়ে শুয়ে হাত পা ছুঁড়ছিল কেন না তারা তখন হামাগুড়িও দিতে পারত না। আর তারা পৃথিবী থেকে খাবার পেত। 

তারপর একজন মানুষ আর একজন মানুষীর মধ্যে কিছু ব্যাপার কিন্তু কী ছিল তা কেউ জানে না। কখন তারা একে অপরকে খুঁজে পেল আর কখনই বা তারা বড় হয়ে উঠল - তা আমার অজানা। কিন্তু ওই মানুষী বাচ্চাদের জন্য জামাকাপড় সেলাই করল আর হেথাহোথা ঘুরে বেড়িয়ে বাচ্চাদের সন্ধান পেল, তাদেরকে কাপড়চোপড় পরাল আর তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে এল।

এইভাবে এক মানুষ থেকে বহু মানুষ হল। এইভাবে মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ার পর তাদের কুকুর পোষার সখ হল। তাই একজন মানুষ কুকুর বাঁধার একটা চামড়ার দড়ি হাতে নিয়ে বাইরে গেল আর মাটিতে পা ঠুকতে ঠুকতে “ভোক্-ভোক্-ভোক্” বলে চীৎকার করতে লাগল আর তারপরই কুকুররা টিলার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে লাগল আর খুব জোরে তাদের গা ঝাড়তে লাগল কারণ তাদের লোম বালিতে ভর্তি ছিল। এইভাবে মানুষরা কুকুরদের কাছে পেল।

কিন্তু এরপরে মানুষের বাচ্চারা জন্মাতে লাগল আর পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ভীষণ রকম বেড়ে গেল। অত অত দিন আগে মানুষের মরণ সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না আর তারা ক্রমশঃ প্রবীণ থেকে প্রবীণতর হতে লাগল। শেষে তারা হাঁটতেও পারত না, চোখেও দেখতে পারত না, শুয়ে থাকতেও পারত না। 

সূর্য কী তাও তারা জানত না, তাই তারা অন্ধকারে থাকত। কোনদিন ভোরের আলো ফুটত না বা সকাল হত না। শুধু তাদের ঘরগুলোর ভেতরে আলো ছিল কারণ তারা ঘরে ঘরে কুপিতে জল জ্বালাত কারণ তখনকার দিনে জলকে জ্বালিয়ে আলো পাওয়া যেত।

কিন্তু এইসব মানুষরা কীভাবে মরতে হয় জানত না, তারা সংখ্যায় বড্ড বেশী বেড়ে গেল আর পৃথিবী জনাকীর্ণ হয়ে গেল। আর তারপর সমুদ্র থেকে বিশাল প্লাবন এল। অনেকে ডুবে মরল, লোকসংখ্যা কমে গেল। সেই মহাপ্লাবনের স্মৃতি এখনও আমরা দেখতে পাই - উঁচু উঁচু পাহাড়ের মাথায় প্রায়ই (সামুদ্রিক) ঝিনুকের খোল খুঁজে পাওয়া যায়।

এখন যখন লোকেরা সংখ্যায় কমে গেল দু’জন বুড়ির এইরকম আলোচনা শোনা গেল:

“দিন না হওয়াই ভাল, তাতে যদি আমরা মৃত্যুকে এড়াতে পারি।” - এক বুড়ি বলল।

অন্য বুড়ি বলল - “না, আলো আর মরণ, আমাদের দুটোই থাকুক।”

আর যখন বুড়িমানুষ এই কথা বলল তখন তার কথাই ফলে গেল। আলো এল, আর মৃত্যু।

এই রকম শোনা যায় যে প্রথম মানুষ যখন মারা গেল অন্যরা শরীরটাকে পাথর দিয়ে চাপা দিল। কিন্তু শরীরটা আবার পাথর সরিয়ে ফিরে এল কারণ সে মরবার সঠিক পদ্ধতি জানত না। ওটা বেঞ্চ থেকে মাথা বের করল আর উঠবার চেষ্টা করতে লাগল। তখন একটা বুড়ি সেটাকে ঠুসে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল -

“আমাদের অনেক কিছু বয়ে নিয়ে যেতে হবে, আর আমাদের স্লেজগাড়িগুলো খুব ছোট। 

কারণ তারা একটা শিকার অভিযানে রওনা হচ্ছিল। আর তাই মড়াটাকে পাথরের স্তূপের নিচে যেতে তারা বাধ্য করল।

আর এখন, মানুষরা পৃথিবীতে যখন আলো পেল, তারা সফর করতে আর শিকার অভিযানে যেতে সক্ষম হল, মাটি থেকে ভক্ষণ করার প্রয়োজন তাদের আর রইল না। আর মরণের সঙ্গে সঙ্গে সূর্য, চন্দ্র আর তারারাও হাজির হল।

কেন না মানুষ যখনই মারা যায় তারা আকাশে উঠে যায় আর সেখানে উজ্জ্বলভাবে জ্বলজ্বল করে।

(www.theoffnews Eskimo folk tales)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours