দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
বিভিন্ন দেশে অন্য পেশার মতোই দেশীয়, আন্তঃদেশীয় স্বীকৃতি নিয়ে ছত্রাকের মতো মেডিক্যাল কলেজের অভাব এ দেশেও নেই।
ঝাঁ চকচকে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েও জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না অনেকের। সরকারি রামপুরহাট গভর্ণমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি পলাশ দাসের সঙ্গে কিছু নাম করা মেডিক্যাল কলেজ প্রসঙ্গে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে উঠে আসে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কথা। সেটাও পরে বলবো।
সম্প্রতি অল ইণ্ডিয়া নিটে র্যাঙ্ক করা কয়েকজন ছাত্র ছাত্রীদের সাথে কথা বলার পর কিছু অভিজ্ঞতার সুযোগ হলো। তাদের মধ্যে জেনারেল কাস্ট ক্যাটেগরির তিন ছাত্র ছাত্রীদের সাথে কথা বলি। এবার আসি, তাদের মধ্যে একজন পাশ করেছে। একজন পাঠরত এবং তৃতীয় জন ভর্তি হয়নি।
তৃতীয় জনের কথা দিয়েই শুরু করি। প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়। বাড়ি বীরভূমে। ছাত্রীটি বুদ্ধিমতী। মাধ্যমিকে ৬৫০ এর বেশী পেয়েছিল ২০১৬ সালে। উচ্চমাধ্যমিকেও ভালো ফল করে। তারপর কোনও কলেজে ভর্তি নিয়ে কলকাতায় নামী প্রতিষ্ঠানে কোচিং শুরু করে। মনে হতে পারে, ধান ভানতে শিবের গীত গায়ছি কেন?
বাস্তবে দাঁড়িয়ে চিন্তা করলে বোঝা যাবে, উদাহরণই সব থেকে উত্তম শিক্ষক। যাহোক, সেই ছাত্রীটি অধ্যাবসায় করে ডেন্টালে পেলেও, যায়নি। তার লক্ষ্য এমবিবিএস। সেই ছাত্রী বর্ধমান জেলার একটি প্রতিষ্ঠানে টাকা পয়সা দিয়েও ভর্তি হয়নি। কেন হয়নি?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো মৌলিক চাহিদা থাকে যা বর্তমান "জেন জি" প্রজন্মের পড়ুয়ারা চায়।
১) ইনফ্রাস্টাকচার বলতে বিল্ডিং নয়।
২) গুড ফ্যাক্যাল্টি।
৩) ওপিডি / কেয়ার ইউনিট / ট্রমা সেন্টার / ওয়েল ক্লিনিকাল ফেসিলিটিজ।
৪) আধুনিক মানের ল্যাব
৫) আধুনিক মানের ক্লাসরুম
৬) সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পেশেন্ট ইন, পেশেন্ট আউট এবং যথেষ্ট বেডের সংখ্যা।
৭) মিউজিয়াম
৮) লাইব্রেরী
৯) গুড লোকেশন / ভালো ক্যাম্পাস/ ভালো হোস্টেল ও সর্বোপরি পড়াশোনা।
১০) পি পি পি মডেলে ন্যাশ্যানাল হেলথ কমিশনে র্যাঙ্ক।
১১) গবেষণার সুযোগ।
এই মৌলিক চাহিদা পূরণ না হলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনীহা দেখা দেবেই। সব শেষটি নিয়ে ওয়ার্লড হেলথ অর্গানাইজেশন একটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ২০১১ সালে। কোভিড ১৯ আমাদের প্রত্যেককে বুঝিয়েছে আমাদের প্রাণ বাঁচাতে সর্বাগ্রে কাদের প্রয়োজন? হেলথ সেক্টর কতো জরুরি। কারও অবিশ্বাস হলে, গুগুল সার্চ করলে চক্ষু কর্ণ বিবাদ ভঞ্জন হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু বলেছে, সঠিক স্বীকৃতি না থাকায় এই মহতী বৃত্তির কতটা ক্ষতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারতে কী দেখতে হবে?
---দেখতে হবে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তালিকা। ২০২৪ সালে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সেটা দেখতে পারেন।
তিনটি যে ছাত্রছাত্রীর কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম। সে আরেকবার নিট পরীক্ষায় বসতে চায়। র্যাঙ্ক ভালো না হলে প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবে।
জেনারেল ক্যাটেগরির দ্বিতীয় ছাত্র সুশোভন ভট্টাচার্য সেও কলকাতায় একটি প্রাইভেট কলেজে ডেন্টালে পড়ে পাশ করে প্র্যাকটিশ করছে। যেখানে সে কোচিং নিত, তারাই সেই মেডিক্যাল কলেজের নাম সাজেস্ট করে দেয়। এটিও একটি ব্যবসা। তাই সঠিক কলেজ আপনাকেই নির্বাচন করতে হবে। না হলে প্র্যাকটিস জমবে না। কারণ সঠিক মানের শিক্ষাটা দরকার। শুধু রেজাল্ট নয়।
তৃতীয় ছাত্রী স্নেহা ভট্টাচার্য প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে ডেন্টালেই পড়ছে। শুধু জেনারেল ক্যাটেগরি নয়, সব ক্যাটেগরির ছাত্রছাত্রীরা শুধু সরকারি কলেজ নয়, আর্থিক সামর্থ্য থাকলে তারা এক্সোপাজার, এডুকেশন কোয়ালিটির উপর গুরুত্ব দেয়।
উত্তর ভারতের কথা বলতে গেলে সেখানে তেমন উন্নত মানের মেডিক্যাল কলেজ নেই বললেই চলে। ভারতের অন্য প্রান্তে অবশ্যই আছে। কিন্তু পিছিয়ে পড়া উত্তর পূর্বাঞ্চলে ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজ একটি উল্লেখ যোগ নাম। ২০২৪ সালে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তালিকাভুক্ত ২১ র্যাঙ্ক করা মেডিক্যাল কলেজের নাম ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ। এই কলেজের একটি ব্যাকগ্রাউণ্ড আছে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বোলপুরে এই সংস্থার আছে শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ। সেখানে আলাদা ক্যাম্পাসে স্পেশালিটি কোয়ালিটির মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আছে। অর্থাৎ সেখানে ক্যানসারের মতো অসুখের স্থায়ী ট্রিটমেন্ট, জটিল অপারেশন হয়ে থাকে। তাদেরই আরেকটি মেডিক্যাল কলেজ ত্রিপুরাতে। স্পেশালিটি তকমার একটা বিশেষত্ব আছে। অনেক ডিস্ট্রিক্ট হসপিটালে সমস্ত সুবিধা না থাকায় শুধুমাত্র ক্লিনিকে পর্যবসিত হয়েছে। তাই নতুন প্রজন্মের পড়ুয়ারা সাধারণত এগুলো মাথায় রাখে। সরকারি রামপুরহাট গভর্ণমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি পলাশ দাসের সঙ্গে কিছু নাম করা মেডিক্যাল কলেজ প্রসঙ্গে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেই প্রসঙ্গে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের কথাও উঠে আসে। সেখানে কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে বীরভূমের শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কথা। তিনি বলেন, আমাদের সিস্টেম থেকে যাঁরা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, তাঁরাই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যান। তাঁদের প্রচুর অভিজ্ঞতা ও প্রশ্নাতীত দক্ষতা। এখন দেখতে হবে ছাত্র ছাত্রীরা নিজেরা পড়াশোনা করছে কিনা।
(www.theoffnews.com medical college)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours