সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ: 

মনুষ্য সমাজে ক্যাবের ব্যবহার, অনলাইন শপিং এক ধাক্কায় আমাদের জীবনধারাকে কতই না পাল্টে দিয়েছে। কিন্তু ভালোবাসা, হিংসা, সম্পর্কের মতো বিষয়গুলো একই ভাবে চিরন্তনী এখনও অনেকাংশে থেকে গেছে। তবু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রভাব এহেন চিরন্তনী অধ্যায়ের উপরেও প্রবল ভাবে আধিপত্য জাঁকিয়ে বসেছে। তা না হলেও ডেটিংয়ের জমজমাট তারল্যে এখন তো ভালোবাসার ভূবনটাই আমূল পাল্টে যাবার জোগাড় হয়েছে। আসলে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জোয়ারে সারা বিশ্ব এখন তথ্য সমৃদ্ধ পরিবর্তিত মহাসমুদ্রের আকার ধারণ করেছে। এটাই হলো সাম্প্রতিকতম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের নব্য যুগ। এমন ভাবেই বক্তব্যের শুরুটা করেছিলেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিশেষজ্ঞ শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় এক মনোজ্ঞ আলোচনা চক্রে।

এমনই আলোচনা চক্র আয়োজিত হয় কলকাতার ভারত চেম্বার অফ কমার্স'এর দফতরে। গত ২৩ অক্টোবর আয়োজিত ওই আলোচনা চক্রে বিষয় নির্ধারিত ছিল 'আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যুগের প্রস্তুতি। ওই বণিকসভার দুই কর্মকর্তা এন জি খৈতান ও নরেশ পাচিসিয়া। 

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আর্থিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য তথা ইংরেজি লেখক সঞ্জীব সান্যাল। তিনিও এই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, আজকের বিশ্বে কোনটাই আর দীর্ঘস্থায়ী নয়। ভীষণ রকম পরিবর্তনশীল হয়ে উঠেছে আমাদের সামগ্রিক জীবন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এই পরিবর্তিত অগ্রগতিকে আরও বেশি উষ্কে দিয়েছে। আমাদের জীবনযাত্রাটাই এখন এই নব্য সূচক নির্ভর হয়ে উঠতে শুরু করেছে ক্রমেই। তথ্যই এখন আমাদের বেঁচে থাকার একান্ত হাতিয়ার। আর সেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হলো আমাদের কাছে স্রেফ একটা ফিঙ্গারিং ক্লিক। পড়াশোনার ক্ষেত্রে চ্যাট জিটিপি তো জ্ঞানার্জনের মাধ্যমের সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিয়েছে। একটা চিপ ও একটা অ্যাপ মানুষের জীবনে তথ্য সংগ্রহের অপার ভান্ডার রূপে হাজির হচ্ছে এক লহমায়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হলো নূন্যতম কর্মদক্ষতা প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মদক্ষতা প্রতিস্থাপন করার এক অদ্ভুত প্রকৌশল। তাঁর মন্তব্য, সারা পৃথিবীতে এর নিয়ন্ত্রণ কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে অনেকটাই আলাদা। যেমন উত্তর কোরিয়া ও চীনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের নিয়ন্ত্রক হলো পরিপূর্ণ কেন্দ্রীয় স্তরে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার। উল্টোদিকে আমেরিকা, বৃটেন সর্বোপরি ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে এর প্রয়োগ নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের বিকেন্দ্রীকরণ আবার যথেষ্ট লক্ষণীয়।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে অপর বক্তা শুভেন্দুবাবু জানান, বর্তমান দুনিয়ায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দাপটে নগদ অর্থনীতি ক্রমশঃ ডিজিটাল অর্থনীতিতে পরিবর্তিত হতে চলেছে। বিটকয়েন এর সর্বশেষ উদাহরণ। ঘরে বসেই আমরা আজ শপিং করতে পারি অ্যামাজন'এর তরফে। শুধু তাই নয়, ক্রয় করার জন্য যে কোনও দ্রব্যের বিষয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ভাবে রেটিং ও রিভিউ জেনে নিতে পারি। গুগল তো আমাদের কাছে ডিজিটাল বিশ্বকোষে পরিণত হয়েছে। আজকের প্রজন্মের কাছে ইউটিউব পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভিডিও গ্রন্থাগার। এসবই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সুফল। তবে পরিশেষে এও তিনি সংযোজন করেন, একজন অজ্ঞ মানুষের কাছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিন্তু এক অসার মৃত মাধ্যম। এই মাধ্যমকে সুচারু রূপে কার্যকর করতে হলে ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন বিষয়ে বা কোনও একটি সাবজেক্টে সম্যক জ্ঞান থাকা অতি আবশ্যক। তাহলেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের কাছে এক তথ্য জ্ঞানের তাৎক্ষণিক নতুন পৃথিবী হয়ে উঠবে।

(www.theoffnews.com Artificial Intelligence Bharat Chamber Of Commerce)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours