সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
(মূল গল্পের নাম: Price for Fragrance of Food!) [প্রচলিত লোককথা]
ভিখুরাম একদিন রাস্তার ওপর থেপসি গেদে বসে যে লোকই রাস্তা দিয়ে পেরোচ্ছিল তার কাছেই খাবার চাইছিল।
এই রকম একজন পথচারীর ভিখুরামকে দেখে মনে দয়ার উদ্রেক হল আর সে তাকে কয়েকটা রুটি দিল।
একটু দূরে একটা খাবারের দোকান ছিল যেখানে টাটকা টাটকা খাবার তৈরি হচ্ছিল।
দোকানের মালিক দেখল তার দোকানে যেখানে তরকারী রান্না হচ্ছে তার কাছেই ভিখিরিটা হাতে রুটিগুলো নিয়ে গোগ্রাসে খাচ্ছে।
এই না দেখে দোকানদারটা তো বেজায় চটে গেল আর ভিখুরামকে ধমকে বলল, “এই মাকড়া, কী কচ্ছিস এখেনে, অ্যাঁ ভেবিছিস'টা কী? তোর বাপের জমিদারি পেয়িছিস?”
ভিখুরাম মিনমিন করে বলল, “তরকারির ঘেরাণ থেকে তরকারির সোয়াদের আন্দাজ করি সিটো দিয়েই রুটি ক’টা খেছি মাই বাপ”।
মালিক বলল, “তা’লে তরকারির ঘেরাণ তো মুফতে মিলবেক নাই, সিটোর দাম দিতে হবেক, হঁ”।
বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে ভিখুরাম কোনক্রমে বলল, “কিন্তু, বাবু, আমি তো আপনের কোনও কিছু নিই নাই”।
তর্কাতর্কি বাড়তে লাগল, মালিকের গলা চড়তে লাগল, ভিখুরামের চিঁ চিঁ গলা চ্যাঁ চ্যাঁ হয়ে উঠতে শুরু করল, শেষমেশ মালিক ভিখুরামকে ঘাড় ধরে গাঁয়ের মোড়লের কাছে নিয়ে গিয়ে হাজির করল।
মোড়লমশাই গোটা ঘটনাটা দোকানদারের মুখ থেকে আদ্যোপান্ত শুনলেন তারপর তাকে মৃদু অথচ দৃঢ় স্বরে বললেন, “আমি তোমার তরকারীর দাম মিটিয়ে দেব”।
একথা বলেই মোড়লমশাই তাঁর পাঞ্জাবির পকেট থেকে খুচরো টাকা পয়সার একটা গেঁজেল বের করে দোকানদারের মুখের সামনে কয়েকবার ঝনঝন করে নাড়ালেন তারপর যথাস্থানে মানে তাঁর পকেটে ঢুকিয়ে ফেললেন।
দোকানদার তো তাজ্জব বনে গেল।
সে মোড়লমশাইকে শুধোল, “আমার দামটা কই দিলেন?”
মোড়লমশাই বললেন, “এইতো এইমাত্র তোমায় কড়ায় গণ্ডায় শোধ করে দিলাম”।
মালিক তোতলাতে তোতলাতে বলল, “কই কোথায়…আমি তো কিছু পেলাম না”।
মোড়লমশাই প্রত্যুত্তরে বললেন, “এই ভিখিরি তোমার তরকারির গন্ধ নিয়েছিল…আমিও তাই পয়সার ঝনঝনিতে তোমাকে দাম মিটিয়ে দিয়েছি।”
মোড়লের এই কথা শুনে দোকানের মালিক বিফল মনোরথ হয়ে মাথা নিচু করে জীবনের চরম শিক্ষা পেয়ে দোকানে ফিরে গেল।
(www.theoffnews.com folk tales story)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours