সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
[গুয়াতেমালার লোককথা অবলম্বনে]
ডন গুমেরসিন্দো দ্রাইদ্রেগস্-এর একটিই ছেলে আর তার বয়স দেখতে দেখতে ভালই বেড়ে গেছে। সত্যি কথা বলতে কি রোজগার শুরু করার বয়েস তার অনেক দিন আগেই পেরিয়ে গিয়েছিল। তাই ডন গুমেরসিন্দো তাকে একদিন কাছে ডেকে বলল - বাছা, এর মধ্যেই কতটা বেড়ে উঠেছ! তাও এখনও কোনও কাজই করতে জানো না। আমি ঠিক করেছি তোমাকে কোনও একটা ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেবো। কোন ব্যবসা তোমার পছন্দ আমাকে শুধু বল।
ছেলে বলল - আমি? আমি ওইসব – কি যেন বললে – ব্যবসা – কোনও ব্যবসারই নাম জানি না। নামগুলো বলতে শুরু করো – আমার যা মনে হবে তোমাকে জানাব।
- বেশ, বাছা। তাই হোক। আচ্ছা, ছুতোর মিস্ত্রি?
- না, আমি নিজেকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলব।
- কামার?
- ভগবান! নিজেকে পুড়িয়ে ফেলব।
- রাজমিস্ত্রি?
- হায় ঈশ্বর! আমার চোখে চুন ঢুকে যাবে।
- দর্জি?
- আমার হাতে ছুঁচ ঢুকে যাবে।
- মুচি?
- কভি নেহি। আমার হাঁটুতে হাতুড়ি ঠুকে যাবে।
- কুমোর?
- সেটা কী? মাটি নিয়ে? আমি ঘেন্না করি।
ডন গুমেরসিন্দো যে পেশারই নাম নেয় ছেলেটা তার কোনও না কোনও খুঁত বের করে তৎক্ষণাৎ নাকচ করে দেয়। বুড়ো তো মরীয়া হয়ে উঠল। শেষে সে রাগে কাঁপতে কাঁপতে চীৎকার করে উঠল – আমি তোর জন্য একদম সঠিক কাজ বের করেছি! নিষ্কর্মা!
ছেলেটা ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল ভাবে বলল – তুমি যা বলবে তাই চেষ্টা করে দেখবো।
পরের দিন ডন গুমেরসিন্দো তার ছেলেকে জুয়ান আইডলারের হাতে সমর্পণ করল যার কোনও নির্দিষ্ট পেশা ছিল না – লোক ঠকিয়ে আর ছিঁচকে চুরি করে তার দিন চলতো।
শিক্ষানবিশীর প্রথম দিনে জুয়ান তার ছাত্রকে বলল – চলো, রাস্তায় এক চক্কর মেরে আসা যাক। দেখা যাক আমাদের কপালে কোনও শিকে ছেঁড়ে কিনা! ভিক্ষে চাইতে চাইতে তারা সারা রাস্তা ঢুঁড়ে ফেললো কিন্তু একটা ফুটো পয়সাও মিললো না, তারপর খানিকক্ষণ তারা নজর রাখল কোনও মাতাল নজরে পড়ে কিনা তাহলে যদি তাকে টুপি পরানো যায়। কিন্তু সেও গুড়ে বালি।
যেহেতু তাদের পেটে সত্যি সত্যি ছুঁচোয় ডন মারছিল তাই তারা একটা ডুমুর গাছের নিচে এসে দাঁড়াল আর জুয়ান বলল – যাক বাবা, ঠিক জায়গায় এসে গেছি! উপোস করা থেকে অন্তত এগুলো বাঁচাবে। আমি গাছে উঠে ডুমুর পেড়ে তোমাকে দেবো, পেট ভরে খাওয়ার পরে যা বাঁচবে আমার জন্য রেখে দেবে। এই বলে সে গাছে উঠে পড়লো আর কিছু ডুমুর পাড়ার পর সে ঝাঁপ দিয়ে নেমে এলো। দেখল সেখানে তার ছাত্র মুখ হাঁ করে শুয়ে আছে।
- আরে হোলটা কী? তোমার এখনও পেট ভরেনি?
- না, গুরুদেব, ছেলেটি উত্তর দিল - আমার মুখের মধ্যে একটাও পড়েনি।
জুয়ান বলল – আঃ! কি তৈরি মাল তুমি! তোমার বাবা তোমাকে আমার কাছে নিয়ে এলেন কেন! আমার তোমার কাছে যাওয়া উচিৎ, তুমি আমাকে অনেক কিছু শেখাতে পারবে।
(www.theoffnews.com Guatemala folk story)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours