সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

(Reading Son’s Homework – Change  in Father’s Thinking)

[প্রচলিত লোককথা অবলম্বনে]

বিরূপাক্ষ সারাক্ষণ বিরক্ত, খিটখিটে আর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে থাকে। তার খিটখিটেমির কারণ হচ্ছে তাকে বাড়ির সব খরচা চালাতে হয় আবার পুরো ফ্যামিলির লোকেদের আর যে সব আত্মীয়রা নিয়মিত আসা যাওয়া করতেই থাকে তাদের সমস্ত দায়িত্বও তার একার কাঁধে। 

এইসব নিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তা করাতে তার প্রায়ই মাথা গরম হয়ে যায় আর ছেলেমেয়েদের অকারণে বকাবকি করতে থাকে আর বৌ ঝর্ণার সঙ্গে এটা সেটা নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয়। 

একদিন তার ছেলে অমল এসে বলল, “বাবা, আমার হোমওয়ার্কে একটু হেল্প করে দাও না”।

বিরূপাক্ষ তেড়ে ছেলেকে গাল দিয়ে তাকে ভাগিয়ে দিল। কিন্তু পরে যখন তার রাগ কমে এল তখন সে তার ছেলের ঘরে গেল, দেখল যে অমল তার হোমওয়ার্কের খাতা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। 

বিরূপাক্ষ খাতাটা তার হাতের মুঠো থেকে আস্তে করে ছাড়িয়ে নিয়ে তার পাশে নামিয়ে রাখতে যাচ্ছিল তখনই হোমওয়ার্কের টাইটেলে তার চোখ আটকে গেল -

সেটা ছিল - 'যে সব জিনিস আমরা প্রথমে পছন্দ করি না কিন্তু পরে বুঝতে পারি তারা ভাল' -

অমলকে এই বিষয় নিয়ে একটা প্যারাগ্রাফ লিখতে হয়েছে। কৌতূহলেবশে বিরূপাক্ষ অমলের লেখাটা পড়তে শুরু করল-

আমি অ্যানুয়াল পরীক্ষার কাছে কৃতজ্ঞ কারণ প্রথমে ভাল না লাগলেও পরীক্ষার পরে ইস্কুলে লম্বা ছুটি থাকে।

আমি তেঁতো ওষুধগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ কারণ প্রথমে তেঁতো লাগলেও তারাই আমার রোগ সারায়। আমি অ্যালার্ম ক্লকের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ বিরক্ত লাগলেও ওটাই আমাকে প্রতিদিন ভোরবেলায় জাগায় আর আমাকে জানায় যে আমি বেঁচে আছি। আমি ভগবানের কাছেও ভীষণ কৃতজ্ঞ যিনি আমাকে অত সুন্দর বাবা দিয়েছেন কারণ তাঁর বকুনি খেয়ে আমার প্রথমে খারাপ লাগলেও পরে তিনি আমাকে খেলনা এনে দেন, দারুণ টেস্টি খাবার খাওয়ান, আমাকে বেড়াতে নিয়ে যান।

ছেলের হোমওয়ার্ক পড়ার পর থেকে অমলের লেখা কথাগুলোই বিরূপাক্ষের মাথায় সারাদিন ঘুরতে লাগল। তার কিছু একটা উপলব্ধি হল। 

সে খানিকক্ষণ চুপ করে বসে তার সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করল। 

ঘরের সব খরচখরচা আমাকে চালাতে হয় মানে ভগবানের দয়ায় আমার একটা বাড়ি আছে, তার মানে যাদের থাকার জন্য একটা আস্তানাও নেই আমি তাদের থেকে অনেক ভাল অবস্থায় আছি।

আমাকে একটা গোটা সংসারের দায়িত্ব নিতে মানে ভগবানের দয়ায় আমার একটি পরিবার, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে আছে আর আমি তাদের থেকে ভাগ্যবান যাদের কোনও পরিবার নেই আর এই জগৎ সংসারে তারা একেবারে একা।

আমার বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়রা আমার বাড়িতে আসতেই থাকে মানে ভগবানের দয়ায় আমার একটা সামাজিক মর্যাদা আছে আর আমার সুখদুঃখের সাথীরা আছে আমাকে সাহায্য করার জন্য। 

'হে ভগবান! এই সবকিছুর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমি ভীষণ দুঃখিত যে তোমার করুণা, তোমার দয়া আমি আগে বুঝতে পারিনি।'

এইভাবে চিন্তা করার পর বিরূপাক্ষের সমস্ত অশান্তি, সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। তার চিন্তা করার ধরণটাই পালটে গেল। সে ছুটে তার ছেলের ঘরে গেল আর তার কপালে চুমু খেল আর ভগবান আর অমলকে কৃতজ্ঞতা জানাতে থাকল।

কী শিখলাম:

আমরা যত সমস্যাতেই পড়ি না কেন যতক্ষণ আমরা নেতিবাচক মনে সেগুলোর মোকাবিলা করব ততক্ষণ আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আর খিটখিটে হয়েই থাকব। কিন্তু যেই আমরা সেই সমস্যাগুলোকেই ইতিবাচক দিক দিয়ে বিচার করব, আমাদের চিন্তা, আমাদের ভাবনা সম্পূর্ণ বদলে গিয়ে আমাদের জীবনধারণকেই সম্পূর্ণ পাল্টে দেবে।

(www.theoffnews.com story folk tales)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours