সুবীর পাল, দ্য অফনিউজ, কলকাতা: 

এই প্রতিবেদনের ছবিটি ফারজানা আঁখি'র। বাংলাদেশের বাসিন্দা। ফেসবুক সূত্রে আলাপ। সেই আলাপের সূত্রে আমাদের বন্ধুত্ব। বেশ কয়েক বছরের। অত্যন্ত উদার। ভীষণ সামাজিক। তীব্র মানবিক। অনন্য স্বনির্ভরতা। স্পষ্ট বক্তা। পথশিশুদের মসিহা। দরিদ্র বৃদ্ধ বৃদ্ধার অকৃত্রিম সাথী। মেলামেশায় সাবলীল তবে সীমানাটা জানেন। অসম্ভব দায়িত্বশীলা তবু নীরব সংযমী। অত্যন্ত আধুনিকচেতা যদিও অসৌজন্যতায় নৈব নৈব চঃ।

নিজের জীবনটাকে একা টেনে এনেছেন। না মুখে কোনও আক্ষেপের বক্রোক্তি নেই। একফোঁটাও। পারিবারিক ও সামাজিক যুদ্ধটা তাঁর কাছে সহজ ছিল না মোটেই। তবু নিয়ত সংগ্রামকেই বেছে নিয়েছিলেন মাথা তুলে বাঁচার তাগিদে। আজ তিনি দৃষ্টান্তের প্রতিষ্ঠিত। স্রেফ আপন মুন্সিয়ানায়।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের প্রতি উৎপীড়ন আজ বিশ্ব নিন্দিত। বছর খানেক আগের কথা। বাংলাদেশের প্রবাসী আইনজীবী ও মার্কিন মুলুকের বাসিন্দা প্রিয়া সাহা। তদানীন্তন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি প্রিয়া সাহা সরাসরি সাক্ষাৎ করে অভিযোগ করেছিলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর সংখ্যাগুরুদের নিপীড়নের কাহিনী। প্রিয়াদেবীর মুখে আমিও একাধিকবার শুনেছি ওই অত্যাচারের ধিকৃত বিবরণ। সেই ধর্মীয় মৌলবাদী অত্যাচার সম্প্রতি আরও বেশিমাত্রায় ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে।

বছরখানেক আগে মহিলাদের কপালে টিপ পরা নিয়ে প্রতিবাদে সারা দেশ জুড়ে তোলপাড় হয়েছিল। সেদিনও এই ফারজানা আঁখি প্রতিবাদী হয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। চলতি বছরের দুর্গোৎসবে কত যে প্রতিমা চুরমার করা হয়েছে তার ইওত্তা নেই। বাংলাদেশে পুজো বন্ধ করার দাবিতে এবার মৌলবাদের মিছিল হয়েছে নানা রাজপথে। অথচ প্রশাসন থেকেছে অদ্ভুত রকমের নীরব। এমনকি ময়মনসিংহে এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংবাদিক স্বপন ভদ্রকে মন্দিরের সামনে প্রকাশ্যে নৃশংস ভাবে খুন করে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা গত শনিবার।

এমনই এক ভয়ার্ত পরিবেশে সমাজের ঠিক উল্টো স্রোতে সাঁতার কেটে ফারজানা আঁখি সোজা হাজির হন বাংলাদেশের এক স্থানীয় পুজো মন্ডপে। চলতি শারদীয়া দুর্গোৎসবে অংশ নিতে। সেই ছবি তিনি পোস্ট করেছেন তাঁর প্রোফাইলে। তাঁর অনুমতি নিয়েই আমি এই লেখায় উনার ছবিটি ব্যবহার করেছি। ওই পোস্টে একজন কমেন্ট করেছেন, 'আমি ছবি তুলে পোস্ট করার সাহস পাই না'। উত্তরে তিনি বলেছেন, 'দুই দিনের জীবন সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চাই'। আবার কোথাও লিখেছেন, 'অসাম্প্রদায়িক মানবিক বাংলাদেশ চাই'।

ফারজানা আঁখি শুধু মুখের কথায় সম্প্রীতির বার্তা প্রচার করেই ক্ষান্ত হননি। ইউনূসের বাংলাদেশে সটান সদর্পে হাজির হয়েছেন দুর্গাপুজোর মন্ডপে। এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় দাপটের সঙ্গে জানানও দিয়েছেন একইসঙ্গে।

সম্প্রীতি রক্ষায় তাই মানতেই হবে, এই ছবি স্থানীয় মৌলবাদীদের গালে একটা সপাটে থাপ্পড়ের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। ব্র্যাভো ফারজানা আঁখি। সেলাম তুঝে সেলাম।

(www.theoffnews.com secularism Bangladesh)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours