পলাশ মুখোপাধ্যায়, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:
সদ্য অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া লোকসভা ভোটের পরেই ফের বাড়তে চলেছে পন্যের দাম। সৌজন্যে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার। জাতীয় সড়কে বহুদিন ধরেই টোল আদায় করে কেন্দ্র। সেই টোল বেশ ভাল রকম মূল্যের। পন্যবাহী গাড়িগুলিকে বিপুল টাকা শুধু টোলই দিতে হয় গন্তব্যে পৌঁছতে। সেই মূল্যই পরোক্ষে চুকাতে হয় খুচরো ক্রেতাদের। কারণ পন্যের মূল্যের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় টোলের বাড়তি টাকাও। কেন্দ্রীয় সরকার তাই জাতীয় সড়ক ঠিকাঠাক রেখে আরও টোল প্লাজা নির্মানে বিপুল আগ্রহী। কলকাতা থেকে বম্বে রোড ধরে গেলে দেখা যাবে ওড়িশা এবং ছত্তিশগড়ে অন্তত কুড়িটা নতুন টোল প্লাজা নির্মাণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিনা পয়সায় রাস্তা ব্যবহার করতে দিতে নারাজ কেন্দ্র। এখন তো শুনছি কেন্দ্র ভাবছে নতুন পদ্ধতি বা প্রযুক্তি আনার, যাতে এক কিলোমিটার পথ গেলেও টোল দিতে হবে আপনাকে। একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারা যায় যে শুধু ছোট গাড়িতে যাতায়াত করলেই কত টাকা টোল দিতে হয়। কলকাতা থেকে দুর্গাপুর ১৭৫ কিলোমিটার পথ, এই পথে শুধু গেলে ছোট গাড়িকে টোল দিতে হয় প্রায় তিনশো টাকা। পন্যবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে সেই টোলের পরিমান বেড়ে যায় দুই থেকে তিন গুন। বুঝতেই পারছেন কেন্দ্রীয় সরকার কেন টোল প্লাজা বাড়ানোতে উৎসাহী।
এবার রাজ্য সরকারও সেই রাস্তায় হাঁটতে চলেছে। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার থেকে জাতীয় সড়কের মতো রাজ্য সড়কগুলিতেও টোল ট্যাক্স আদায় করা হবে। রাজ্যের মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টোল ট্যাক্স আদায়ের পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যেই রাজ্য সড়কগুলিতে শুরু হবে টোল আদায়। কোন সড়কে কত টাকা ট্যাক্স ধার্য হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে পূর্ত দফতর। তাদের দাবি এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের ফলে রাজ্যের কোষাগারে যেমন উপার্জন বাড়বে, তেমনই সংস্কারের জন্য নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে না। রাজ্যের অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকার গ্রাম সড়ক যোজনায় বন্ধ রেখেছে বরাদ্দ। এর ফলে মেরামতের জন্য খরচা করতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। কিন্তু নবান্ন যদি গ্রাম সড়কের জন্য খরচা করে তাহলে রাজ্য সড়ক বা স্টেট হাইওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ কোন টাকায় হবে? এই নিয়ে প্রচুর তর্ক-বিতর্কের পর অবশেষে নবান্ন ২৮টি টোল প্লাজা শুরু করতে চলেছে। এই ব্যাপারে আহ্বান করা হয়েছে দরপত্রের।
পূর্ত দপ্তর রাজ্যের যে ২৮টি জায়গার জন্য টোল প্লাজা খুলতে চেয়ে দরপত্র হেঁকেছে সেগুলি হল:
চণ্ডিতলা- শিয়াখালা-চাঁপাডাঙা রোড, সপ্তগ্রাম-ত্রিবেণী-কালনা-কাটোয়া রোড, ডানকুনি-চন্দননগর মগরা রোড, বর্ধমান-আরামবাগ রোড, বিষ্ণুপুর-কোতলপুর-আরামবাগ রোড, বনগাঁ-চাকদা রোড, বড়জোরা-মালিয়ারা-দুর্লভপুর রোড, বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রোড, বাঁকুড়া-শালতোড়া রোড, পুরুলিয়া-রাঁচি রোড, বাঁকুড়া-পুরুলিয়া রোড, মেদিনীপুর-কেশপুর-চন্দ্রকোণা টাউন রোড, কলকাতা-বাসন্তী রোড, বারাসত-বসিরহাট রোড, দমদম-লাউহাটি-হাড়োয়া রোড, ঘোজাডাঙা-সংগ্রামপুর রোড,
সাঁইথিয়া-সুলতানপুর-কান্দি রোড, আহমেদপুর-কীর্ণাহার-রামজীবনপুর রোড, কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপধাম রোড, কাটোয়া-কালনা রোড, চ্যাংড়াবান্ধা-মাথাভাঙা রোড, রায়গঞ্জ-কালিয়াগঞ্জ-বুনিয়াদপুর রোড, পতিরাম-ত্রিমোহিনী- হিলি রোড, মন্তেশ্বর-দাঁইহাট রোড, রামজীবনপুর-কেতুগ্রাম-কাটোয়া রোড, পানাগড়-ইলামবাজার রোড।
তবে জানা গেছে আপাতত কোনও রকম টোল নেওয়া হবে না প্রাইভেট বা ব্যক্তিগত গাড়ির উপর। টোল নেওয়া হবে না ব্যক্তিগত দুই চাকার গাড়ির উপরেও। তিন চাকার ভাড়ার গাড়ি, লাইট কমার্শিয়াল ভেহিকেল, ট্রাক, মাল্টি অ্যাক্সেল ভেহিকেল, আর্থ মুভার এবং ওভারসাইজ তথা ৭ বা বেশি অ্যাক্সেলের পণ্যবাহী গাড়ি থেকে আদায় করা হবে এই টোল ট্যাক্স। তবে আশঙ্কা থেকেই যায়, কেন্দ্রের দেখানো পথেই হেঁটেই টোল আদায় করতে চলেছে রাজ্য। তাই এখন ব্যক্তিগত গাড়িতে টোল না নিলেও রাজস্ব বাড়াতে পরবর্তীতে তা নেওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তবে রাজ্য সরকারের এই সড়কগুলি দিয়েও কিন্তু প্রচুর পন্যবাহি গাড়ি চলাচল করে। যেমন হুগলীর আরামবাগ এবং পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চাষ হয় আলুর। সেখানে অহল্যাবাই হোলকার রোডে দুটি টোল প্লাজা বসানো হচ্ছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আলুর সেই দামেও টোলের বাড়তি টাকা জুড়বেই। অর্থাৎ এই টোল প্লাজাগুলি আশু চালু হলে বাড়তি পন্যমূল্য গুনতে হবে জনগনকে। এমনিতেই কেন্দ্রের অধীনে থাকা জাতীয় সড়কে টোলের পরিমান মাঝেমধ্যেই বেড়ে যায়। ২০২৩ এর এপ্রিলে টোল ট্যাক্স দশ শতাংশ বৃদ্ধি করেছিল কেন্দ্র। শোনা যাচ্ছে সামনে আবার টোল বাড়াতে চলেছে কেন্দ্র। এর সঙ্গে যদি রাজ্যের টোলও যোগ হয় তাহলে আপনার আমার কি হাল হবে বুঝতেই পারছেন নিশ্চয়।
(www.theoffnews.com toll tax India government West Bengal government)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours