পলাশ মুখোপাধ্যায়, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:
জাতীয় সড়ক হোক বা পাড়ার সরু গলি সব ক্ষেত্রেই তাদের অবাধ বিচরণ। এর ফলে দেখা দিচ্ছে যানজট, সমস্যা বাড়ছে টোটোর দৌরাত্ম্যের কারণে। বছর পনেরো আগে যখন টোটো আসে এ রাজ্যে, তখন ভাবা হয়েছিল দূষণহীন এবং শব্দহীন যান, হাওয়া বাতাস খেলে, ভ্যান রিকশার চেয়ে তাড়াতাড়ি যায়, এ বেশ ভালই হয়েছে। কিন্তু পনেরো বছর পরে এখন সাধারণ মানুষের ত্রাহি ত্রাহি রব। কোনও জিনিস চাহিদার চেয়ে অতিমাত্রায় হয়ে গেলে যেমন উপকারের চেয়ে অপকারেই বেশি আসে, টোটোর অবস্থাও তাই হয়েছে। এক মাত্র কলকাতার বেশ কিছুটা অংশ ছাড়া এই মুহূর্তে রাজ্যের সর্বত্র দৌড়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার টোটো। রাস্তার উপরে, যেখানে সেখানে গজিয়ে উঠেছে বেআইনি টোটো স্ট্যান্ড।
এ বার থেকে জাতীয় বা রাজ্য সড়কে চালানো যাবে না অটো রিক্সা বা টোটো। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে পরিবহণ দফতরের সচিব সৌমিত্র মোহন এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন। ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় অটো টোটো ছাড়াও ছিল পরিবহণ দফতরের অনুমোদনহীন তিন চাকার যান। অবৈধ অটো রিক্সা বা টোটো চালানোর ফলে জাতীয় বা রাজ্য সড়কে যানজট তৈরি হচ্ছে। তার প্রেক্ষিতেই এই বিজ্ঞপ্তি। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক বছর পরেও কি ছবি পাল্টেছে বলে মনে হয়? উল্টে আরও শোচনীয় হয়েছে পরিস্থিতি। সেই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, এই ধরনের অবৈধ যান জাতীয় তথা রাজ্য সড়কে চলাচলের ফলে প্রতিদিন যানজট বাড়ছে। আর সেই যানজটের ফলেই বাড়ছে দুর্ঘটনা। সেই দুর্ঘটনা এড়াতেই এই নির্দেশনামা জারি করা হয়। রাজ্যের প্রায় প্রত্যেকটি বড় শহরে টোটোর দৌরাত্ম্যে যানজট তীব্র আকার নিয়েছে। বিশেষত, হাওড়া, শিলিগুড়ির মত বড় শহরে টোটোর বাড়বাড়ন্তের ফলে যানবাহনের গতি কমেছে। হাওড়ায় টোটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব এবং নগরপালকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। গোটা বিষয়টি নিয়ে তিনি কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও করেছেন। অভিযোগ, শুধু হাওড়া শহরেই ২০ হাজারেরও বেশি লাইসেন্সহীন টোটো চলে। হাওড়া থেকে হাবড়া, এই সমস্যা এখন সর্বত্র। বিভিন্ন শহরের সব কটি বড় রাস্তায় টোটো চলায় পথচারীদেরও সমস্যা হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রবল গরমের সময় ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এসি বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারকে। কিন্তু মাঠে নেমে কারণ খুঁজতে গিয়ে অবাক বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা। বিদ্যুৎ পর্ষদ সূত্রে খবর, অধিকাংশ সাবস্টেশনে রাত বাড়লেই বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হচ্ছে। নির্দিষ্ট এলাকায় ট্রান্সফর্মারগুলির যে ‘ক্যাপাসিটি’ বা ক্ষমতা রয়েছে, চাহিদা পেরিয়ে যাচ্ছে সেই সীমা। ফলে বিদ্যুৎ থাকছে না। আবার কোথাও বিকল হয়ে পড়ছে ট্রান্সফর্মারই। শুধু তা-ই নয়, পরিষেবা চালু থাকলেও ভোল্টেজ কম জেলার প্রায় সর্বত্র। ঘটনার কারণ সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে জেলার বিদ্যুৎকর্তারা একাধিক এলাকা পরিদর্শন করে। সেই পরিদর্শক দলটি দেখে এসি নয়, রাত বাড়লে ব্যাটারিচালিত টোটো চার্জে বসানো হচ্ছে। এ জন্য প্রচুর চাপ পড়ছে। লোডশেডিং এর আসল কারণ এটাই।
রক্তবীজের মত টোটোর এই বাড়ন্তে চিন্তিত প্রশাসনও। টোটোর রমরমা আটকাতে সম্প্রতি রাজ্য সরকার আবার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবার কথা ভাবছে। ভাবা হচ্ছে টোটো চালানোর ক্ষেত্রে জোড় বিজোড় নীতি নেওয়া যায় কিনা। এছাড়াও এক ব্যক্তির নামে একাধিক টোটো কেনার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবা হয়েছে। গ্রামে গঞ্জে টোটো সাধারণ মানুষের যাতায়াতের একটা বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যাবৃদ্ধিকে না রোখা গেলে সেটা উপকারের চেয়ে অপকারই করবে বেশি। মানুষজনও বুঝছেন এখন হাড়ে হাড়ে। সরু গলি পথে চলা এখন বিপদজনক রীতিমত। জাতীয় সড়কে ভারি ভারি যানবাহনের সঙ্গে হালকা টোটোর চলাও দুর্ঘটনার আহ্বায়ক। অধিকাংশ বেআইনি কাজের মত এখানেও শাসক দলের প্রত্যক্ষ সমর্থন মিলছে। তাই টোটো চালকেরাও বেপরোয়া। সব মিলিয়ে এখনই রোধ করা না গেলে কিন্তু আগামী দিনে একটা ভয়াবহ সমস্যা হতে চলেছে এই টোটো।
(www.theoffnews.com Toto jam road problem)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours