সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
• লোয়ার স্যাক্সনিতে অবস্থিত হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের জীবাশ্মকৃত পায়ের ছাপ এখনও পর্যন্ত জার্মানিতে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম পায়ের ছাপ।
• তিন লক্ষ বছরের পুরনো প্রত্নস্থলটিতে প্রাচীন মানুষের পায়ের ছাপগুলিকে ঘিরে রয়েছে অধুনালুপ্ত হাতি ও গণ্ডারের পদচিহ্ন।
• শত সহস্র বছর আগে লোয়ার স্যাক্সনিতে জীবনযাত্রা কেমন ছিল তা বুঝতে একটি হ্রদের কাছে সদ্য আবিষ্কৃত এই পায়ের ছাপগুলি বিজ্ঞানীদের প্রভূত সাহায্য করবে।
জীবাশ্ম কাদায় পাওয়া নতুন আবিষ্কৃত পায়ের ছাপের বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীদের দৃঢ় বিশ্বাস যে তিন লক্ষ বছর আগে লোয়ার স্যাক্সনিতে, হোমো হাইডেলবার্গেনসিস প্রজাতির মানুষরা একটি হ্রদের তীরে একটি অধুনা-বিলুপ্ত প্রজাতির হাতির (প্যালেওলোক্সোডন অ্যান্টিকাস ) পাশাপাশি ঘোরাফেরা করেছিল৷
এই ফসিলাইজড পদচিহ্নগুলি নিয়ে গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি কোয়াটার্নারি সায়েন্স রিভিউজ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে যেখানে প্রত্নবিজ্ঞানীরা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন যে কিভাবে একটি উন্মুক্ত বার্চ এবং পাইন বনে অবস্থিত একটি হ্রদের কর্দমাক্ত তীরে হাতি, গণ্ডার, এমনকি জলহস্তীর পাল এবং স্পষ্টত, অধুনালুপ্ত “হেইডেলবার্গ মানুষের একটি পরিবারের সদস্যরা”, স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করতো।
"তিন লক্ষ বছর আগে লোয়ার স্যাক্সনির শোনিনজেনে একটি সাধারণ দিনের জীবনযাপনের চিত্রটা এমনই দেখতে হতে পারে," টুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনকেনবার্গ সেন্টার ফর হিউম্যান ইভোলিউশন অ্যান্ড প্যালিওএনভায়রনমেন্টের ফেলো ফ্লাভিও আলতামুরা একটি প্রেস রিলিজে বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে - “এটাই প্রথমবার যে আমরা শোনিনজেনের দু'টি প্রত্নস্থল থেকে জীবাশ্ম পদচিহ্নগুলির একটি বিশদ পর্যালোচনা করেছি। ওই প্রত্নস্থল থেকে সমস্ত তথ্য এক জায়গায় জড়ো করে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলটি প্রাচীন যুগে বসবাসকারী প্রাণীদের সম্পর্কে এবং অধুনালুপ্ত মানব প্রজাতির জার্মানি থেকে প্রাপ্ত এখনও পর্যন্ত প্রাচীনতম পায়ের ছাপগুলি সম্বন্ধে অজানা পাথুরে ইতিহাস আবিষ্কার করেছেন৷
বিশেষজ্ঞ দলটি তিনজন মানুষের পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছে যা্রা তাঁদের বিশ্বাস অনুযায়ী একটি পরিবারের সদস্য ছিল। মোট তিনটি ট্র্যাকের মধ্যে দুটি সম্ভবত যুবক যুবতীদের। "এই যুবা এবং শিশু এবং কিশোরদের পায়ের ছাপের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে এটি সম্ভবত প্রাপ্তবয়স্ক শিকারীদের একটি দলের পরিবর্তে একটি পারিবারিক ভ্রমণ ছিল", সমীক্ষাটিতে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
আলতামুরা আরও বলেছেন - "কখন কি ঋতু তার উপর নির্ভর করে লেকের চারপাশে বিভিন্ন গাছপালা, ফল, পাতা, অঙ্কুর এবং মাশরুম পাওয়া যেত৷ আমরা যা জানতে পেরেছি তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বিলুপ্ত মানব প্রজাতিগুলি হ্রদ অথবা অগভীর জলের নদীর তীরে বাস করত।"
একটি হ্রদের তীরে একটি পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের এই তিন-ট্র্যাকের স্ন্যাপশট হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের আচরণ এবং সামাজিক গঠন সম্পর্কে আরও অনেক অজানা তথ্য জানাতে পারবে। অন্যান্য প্রজাতিগুলি যেমন যেমন হাতি ও ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীরা যারা নিয়মিত হ্রদে আসত তাদের সঙ্গে হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের কি সম্পর্ক ছিল সে বিষয়েও আলোকপাত করতে পারবে।
মানুষের পায়ের ছাপ নিয়ে এতো বিজ্ঞানী মহলে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এতো আলোড়ন পড়ে গেছে যে এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটা চাপা পড়ে গেছে যে গবেষকরা এখানে অধুনাবিলুপ্ত খুরযুক্ত বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর পায়ের ছাপও খুঁজে পেয়েছেন। বিলুপ্তপ্রায় হাতির প্রজাতি Palaeoloxodon antiquus, তাদের সোজা দাঁত এবং ১৩ টন ওজনের জন্য সুপরিচিত, কোনও ভাবে মানব পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা করেছে। এমনকি তাঁরা যে গন্ডারের ছাপগুলি খুঁজে পেয়েছেন তাও ছিল চমকপ্রদ - সম্ভবত দুটি প্লাইস্টোসিন প্রজাতির একটির পায়ের ছাপ (Stephanorhinus kirchbergensis বা Sephanohinus hemitoechus) - এবং ইউরোপে এটিই প্রথম পাওয়া গেল।
লোয়ার স্যাক্সনির হ্রদের তীরবর্তী প্রত্নস্থল থেকে প্রাপ্ত পায়ের ছাপ তিন লক্ষ বছর আগের মানব ও প্রাণীর মেলামেশা সম্পর্কে নতুন তথ্য জানিয়েছে। এবং সেই পায়ের ছাপ অনুযায়ী, এই মেলামেশা ছিল ‘ফ্যামিলি ফ্রেন্ডলি’।
(www.theoffnews.com oldest footprints human German archaeology)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours