সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

(প্রচলিত লোককথা অনুসারে)

একদিন দুটো লোক একজন সাধুবাবার কাছে এল যিনি বনের মধ্যে একটা কুঁড়ে ঘরে বাস করতেন। তাদেরকে শিষ্য করে নেওয়ার জন্য তারা তাঁকে অনুরোধ করল।

সাধুবাবা তাদেরকে পরের দিন আসতে বললেন।

পরের দিন তারা আবার যখন সেখানে হাজির হল, দেখল সাধুবাবা দু'হাতে দুটি পাখি ধরে আছেন। তিনি তাদেরকে একটা করে পাখি ধরতে বললেন। 

দুজনেই একটা করে পাখি তাদের হাতে ধরল। এরপর তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিলেন, “যাও, নিজের নিজের হাতের পাখিকে হত্যা করো, কিন্তু একটি শর্ত আছে…”

তারা বলল, “কী?”

সাধুবাবা বললেন, “তোমরা শুধু সেই জায়গাতেই পাখি মারতে পারবে যেখানে পাখি মারার সময় কেউ তোমাদের দেখতে পাবে না…” 

প্রথম জন তৎক্ষণাৎ বনের ভেতর সাধুবাবার কুঁড়ে ঘর থেকে একটু দূরে চলে গেল আর ইদিকে সিদিকে দেখতে লাগল। সে আশেপাশে কারুর টিকি দেখতে না পেয়ে একটা গাছের আড়ালে চলে গেল আর পাখিটাকে মেরে ফেলে সাধুবাবার কাছে মরা পাখিটা নিয়ে এল। 

দ্বিতীয় জন তার পাখিটাকে নিয়ে অনেক দূরে একটা জনমানবহীন নির্জন জায়গায় চলে গেল। সেখানে সে দাঁড়িয়ে গেল পাখিটাকে মারবে বলে।

যখন সে পাখিটাকে হত্যা করার জন্য সেটার দিকে তাকাল, সে ভাবল, “যখন আমি এই পাখিটাকে মারব, সে আমাকে দেখবে আর আমিও তাকে দেখতে পাব…তার মানে দুজন আর ভগবান মিলিয়ে মোট তিনজন সব কিছু দেখছে…কিন্তু সাধুবাবা পাখিটাকে তেমন জায়গাতেই মারতে বলেছেন যেখানে আর কেউ নেই…”

এই সব সাত সতেরো ভেবে লোকটি ওই পাখিটিকে জ্যান্ত অবস্থায় সাধুবাবার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বলল, “মহাত্মাজী…! আমি এমন কোন জায়গা খুঁজে পেলাম না যা লোকচক্ষুর অন্তরালে কারণ ভগবান সর্বত্র বিরাজমান”।

সাধুবাবা তাকে বললেন, “তুমি এক্কেবারে ঠিক বলেছ। তুমি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছো এবং জ্ঞানার্জনের অধিকারী হয়েছো…তুমি আমার শিষ্যত্ব গ্রহণ করার জন্য আসতে পারো”।

তাকে এই কথা বলে সাধুবাবা প্রথম জনকে বিদায় নিতে বললেন কারণ শিষ্যত্ব গ্রহণ করার মতো যোগ্যতা তাঁর ছিল না।

আমরা যদি সবসময় এই কথাটি মনে রাখি যে ভগবান সর্বত্র বিরাজমান এবং আমরা সবার কাছ থেকে আমাদের পাপ কাজকে লুকিয়ে রাখতে যতই চেষ্টা করি না কেন তিনি ঠিকই দেখতে পেয়ে যান…তাহলে পাপ কাজ থেকে আমরা নিজেদেরকে নিবৃত্ত করতে পারব।

(www.theoffnews.com story folk tales)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours