সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
একদিন সকালে দরজার ঘন্টি বেজে উঠল। কমলেশ দরজাটা খুলে দেখল সুন্দর সুঠাম চেহারার একটা লোক তার সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
কমলেশ বলল, “হ্যাঁ, বলুন।”
লোকটি বলল, “আসলে আমি সে-ই যাকে তুমি রোজ পুজো কর”।
কমলেশ হতভম্ব হয়ে বলল, “স্যরি স্যার, কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না”।
লোকটি আরও মিষ্টি হেসে বলল, “ভাই, আমিই তোমাকে সৃষ্টি করেছি। আমি ঈশ্বর। তুমি সব সময় বলতে আমি সদাই রয়েছি তোমার নয়নে নয়নে কিন্তু তাও তুমি আমাকে দেখতে পাওনা। এই দেখ তোমার সামনে আমি। আজ আমি সারাদিন তোমার সঙ্গে থাকব”।
কমলেশ চটেমটে বলে উঠল, “মাজাকি হচ্ছে?”
লোকটি প্রত্যুত্তরে বলল, “ভাই, এটা কোন মাজাকি নয়। শুধু তুমিই আমাকে দেখতে পাবে। তুমি ছাড়া আমাকে আর কেউ দেখতে বা শুনতে পাবে না”।
কমলেশ কিছু বলার আগেই তার মা পেছন থেকে বলল, “ওখানে একলা একলা দাঁড়িয়ে কী করছিস? ভেতরে আয়, তোর চা রেডি”।
এবারে কমলেশ ভাবল লোকটার কথায় কিছুটা সত্যি তো আছে তাও সে লোকটাকে একেবারেই আমল দিল না।
ঘরের ভেতরে গিয়ে সে সোফায় বসল, লোকটাও বসল ঠিক তার পাশে।
মা চা নিয়ে এল। এক চুমুক দিয়েই সে চীৎকার করে বলল, “মা, এটা কী করেছো…এত চিনি দিয়েছো কেন?”
এই কথা বলেই তার মনে হল এই লোকটি যদি সত্যিই ভগবান হয় তাহলে তো আমি যে মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলাম সেটা একেবারেই পছন্দ করবে না।
এই ভাবনা তার মনে হতেই সে নিজের মনকে শান্ত করল আর নিজেকেই বোঝাল, “আজ তুমি ভগবানের নজরে থাকবে, খুব ভেবে চিন্তে চলবে”।
এখন হল কি, কমলেশ যেখানেই যায়, লোকটি ছায়ার মত তার সঙ্গে লেগে থাকে।
যাইহোক, তৈরি-টৈরি হয়ে সে মন্দিরে গেল আর জীবনে প্রথম সে ঠাকুরের কাছে সত্যিকারের নমো করল কারণ আজ তার সততা আর আন্তরিকতা প্রমাণের দিন।
সে অফিসের জন্য বেরলো, তার গাড়িতে বসল আর দেখল যে লোকটি ইতিমধ্যেই তার পাশে বসে আছে। ঠিক সেই মুহূর্তে তার মোবাইল বেজে উঠল। সে নিজেকে বললো, “ভুলে যেও না তুমি আজ ভগবানের স্ক্যানারে আছো”।
তারপরে সে ফোনটা ধরলো আর কথা বলতে বলতে তার মুখ দিয়ে প্রায় বেরিয়ে গিয়েছিল - আপনার কাজটা করতে হলে কিন্তু খরচা আছে…কিন্তু ঠিক তখনই তার মনে পড়ল সে ঘুষ চাইতে যাচ্ছে আর সেটা অন্যায়, সেটা পাপ।
ভগবানের সামনে সে পাপকাজ করে কি করে।
সেইজন্য সে ফোনে বলল, “নিশ্চয়ই, চলে আসুন। আপনার কাজ হয়ে যাবে”।
সেদিন সে তার স্টাফদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করল না, একজন কর্মচারীর সঙ্গেও তর্কাতর্কি করল না। অকারণে মুখ খারাপ করা তার সাধারণ অভ্যাস ছিল কিন্তু সেইসব খিস্তির বদলে সে বলতে লাগলো - ওকে, নো প্রবলেম…
চাকরিজীবনে এই প্রথম একটা দিন গেল যেদিন তার রাগ, অহংকার, গালিগালাজ, অসততা, মিথ্যা কথা তার সারাদিনের রুটিনে রইল না।
অফিসের ছুটির পর সে তার গাড়িতে গিয়ে বসার পর লোকটিকে বলল, “ভগবান, প্লিজ আপনার সীট বেল্টটা বাঁধুন, আপনাকেও কিছু কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে…”
কমলেশের মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল।
রাতের বেলা যখন তাকে খাবার দেওয়া হলো, এই প্রথম সে বলল, “ভগবান, প্লিজ আপনি প্রথমে অন্ন গ্রহণ করুন”।
একথায় ভগবান হেসে এক কণা খাবার মুখে দিলেন।
খাওয়া শেষ হয়ে গেলে মা বলল, “অবাক ব্যাপার! এই প্রথম তুই খাবারে কোন খুঁত খুঁজে পেলি না…! আজ সূর্য কী পশ্চিমে উঠেছে?”
সে মাকে বলল, “মা, আজ সূর্য আমার মনে উদয় হয়েছে, অন্যদিন আমি শুধু খাবার নিয়ে চিন্তা করতাম কিন্তু আজ আমি ভগবানকে নিবেদন করা প্রসাদ খেয়েছি আর তাতে কোনও কিছুর কমতি নেই”।
খানিকক্ষণ পায়চারির পর সে তার ঘরে গিয়ে শান্ত মনে তার বালিশে মাথা রাখল।
তখন ভগবান স্নেহভরে কমলেশের মাথায় হাত রেখে বললেন, “বাবা, ঘুম আসার জন্য আজ তোমার কোনও গান বা ওষুধ বা কোন বইয়ের দরকার নেই?”
কমলেশের গভীর ঘুম ভাঙলো তার গালে চাপড় পড়ায়…
সে তার মায়ের গলার আওয়াজ পেল, “খোকা, আর কত ঘুমোবি?”
হতে পারে এটা স্বপ্ন, সে ভাবলো - তুমি রয়েছো আমার নয়নে, নয়ন তোমারে পেয়েছে দেখতে…
সেদিন সে বুঝল, ভগবান সবকিছু দেখছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। স্বপ্নে দেখা একটা ভাবনাও আমাদের চোখ খুলে দিতে পারে।
(www.theoffnews.com God)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours