রণজিৎ গুহ লেখক ও সমাজকর্মী দুর্গাপুর
(লেখক একজন গর্বিত প্রাক্তন ইস্পাত কর্মী)
দুর্গাপুর মিশ্র ইস্পাত কারখানায় একদা কর্মরত অবস্থায় জীবনের চল্লিশটা বছর সত্যি বলতে কি ঘুমানো বা ঘুম থেকে ওঠা, প্রাকৃতিক কাজকর্ম সারা কিম্বা দুবেলা খাওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের কোনও বালাইই ছিলনা। মর্নিং শিফট হলে ভোর না হতেই শীত গ্রীষ্ম সাড়ে চারটায় ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে ৫টা দশে বাস স্ট্যাণ্ড। বাড়ি ফিরে স্নান সেরে দুপুরের খাবার খেতে খেতে সাড়ে তিনটে। পরের সপ্তাহে রাত পালি। সারা রাত কারখানায় কাটিয়ে ঘরে ফিরি সকাল সাতটা। হপ্তা শেষে বেলা দুটো থেকে রাত দশটা কারখানা ডিউটি। ঘুমানো বা ঘুম থেকে ওঠা কিংবা দু'বেলা খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় থাকবে কি করে? গত ২০/২২ বছর শিফট ডিউটির বালাই নেই। কারখানায় যাওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। নিজের নিয়ম নিজেই ঠিক করি। তাই বলে ব্রাহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে ওঠার তালে আমি নেই। হাত-পা ছোড়াছুড়ি বা প্রাতভ্রমণ ইত্যাদি স্বাস্থ্য চর্চার ধারে কাছেও নেই আমি। অভ্যেস করেছি অন্যরকম। প্রকৃতির ডাকে ঘুম ভাঙে সকাল ছ'টায়। আরেকটু গড়াই। সাড়ে ছটা নাগাদ বিছানা ছেড়ে শৌচাগার। তারপর মাজন মুখে ছাদে যাই। এই নিয়মে আছি বলেই একেবারে ক্ষণ স্থায়ী আদুরে হেমন্ত সকালকে উপভোগ করার সুযোগ পাই। সামান্য শীত শীত। গামলার জলপদ্মর পাতায় আহা সেই ছবির মতো দু-এক ফোঁটা শিশির বিন্দু। বেগুনি, সাদা দোপাটির শেষ ঝলক। সিম গাছ ফুলে ফুলে ভরা। একটা দুটো স্থল পদ্ম। শিউলি কয়েকটা। টগর। সদ্য লাগানো গাদা ফুলের চারা। এখনও পাতা ছাড়েনি। চন্দ্রমল্লিকা বেড়ে উঠচ্ছে তরতড়িয়ে। ডগা ভেঙে দিই। ডালকাটা গোলাপের কচি পাতা উঁকি মারছে। হঠাৎ করেই কুয়াশার চাদর। আহারে কার্তিকের সকাল! আহারে হেমন্ত!
(www.theoffnews.com late autumn season Hemanta)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours