সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
যদিও এতে কোনও সন্দেহ নেই যে অনেক মেসোজোয়িক স্তন্যপায়ী জীব খাবার হয়ে উঠেছিল ডাইনোসরের, তবুও এটা জেনে অবাক হতে হয় যে কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীও ডাইনোসরকেই খাদ্যে পরিণত করেছিল। সম্প্রতি একদল গবেষক দাবি করেছেন যে উত্তর-পূর্ব চীনে একটি চমকে দেওয়া জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া গেছে যাতে প্রায় ১২৫ মিলিয়ন বছর আগে একটি খেঁকুড়ে ভামের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী একটি তৃণভোজী ডাইনোসরের ওপরে উঠে তাকে আক্রমণ করে তার পাঁজরে দাঁত ঢুকিয়ে দিয়েছে।
কার্বন ডেটিং-এ প্রমাণিত যে ফসিলটি ক্রিটাসিয়াস যুগের এবং চার পায়ের স্তন্যপায়ী প্রাণীটি রেপেনোমামাস রোবস্টাস - একটি গৃহপালিত বিড়ালের সাইজের - হিংস্রভাবে কামড়ে ধরেছে দুই পায়ের চঞ্চুওলা ডাইনোসর সিটাকোসরাস লুজিয়াটুনেসিসকে যা একটি মাঝারি আকারের কুকুরের মতো বড়। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস যে তারা মারণ যুদ্ধের সময় হঠাৎ একটি আগ্নেয়গিরির কাদার স্রোতে ডুবে গিয়েছিল এবং জ্যান্ত কবরস্থ হয়েছিল।
"ডাইনোসররা প্রায় সবসময়ই তাদের স্তন্যপায়ী সমসাময়িকদের চেয়ে আকারে বড় ছিল, তাই চালু ধারণা ছিল যে তাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া একতরফা ছিল - বড় ডাইনোসররা সর্বদা ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের খেয়েছিল," বলেছেন অটোয়ার কানাডিয়ান মিউজিয়াম অফ নেচারের প্যালিওবায়োলজিস্ট জর্ডান ম্যালন, যিনি সায়েন্টিফিক রিপোর্টস্ জার্নালে গবেষণালব্ধ তথ্য প্রকাশে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
"এটি একটি দারুণ প্রমাণ যে একটি ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী একটি বৃহত্তর ডাইনোসরকে শিকার করছে, যা এই জীবাশ্ম ছাড়া আমরা অনুমান করতে পারতাম না," ম্যালন যোগ করেছেন।
মেসোজোয়িক যুগে, যা ডাইনোসরের যুগ বলে পরিচিত, বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীরা জীবনের বৃহত্তর নাট্যমঞ্চে চতুর কুশীলব ছিল, অন্য কারও মধ্যাহ্নভোজন হওয়া থেকে নিজেদেরকে ভালই এড়াতে পারত। রেপেনোমামাস দেখায় অন্তত কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন পেয়েছে তেমনিই ভালো জবাব দিয়েছে।
ম্যালন বলেন, "আমি মনে করি এখানে আসল কথা হল মেসোজোয়িক যুগে খাদ্য শৃংখলগুলি আমাদের যা মনে করেছিলাম তার চেয়ে ঢের জটিল ছিল।"
লিয়াওনিং প্রদেশের যে অঞ্চলে কার্যত সম্পূর্ণ জীবাশ্ম পাওয়া গেছে তাকে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সমাহিত প্রাণীর বিভিন্ন জীবাশ্মের কারণে "চীনা পম্পেই" বলা হয়।
জীবাশ্মটি পরীক্ষা করা একটি অপরাধ দৃশ্য বিশ্লেষণের মত ছিল। রেপেনোমামাস বৃহত্তর আকারের সিটাকোসরাসের পিঠে উঠে, পাঁজরের মধ্যে কামড়ানোর সময় চোয়াল এবং পিছনের পা আঁকড়ে ধরে আছে। রেপেনোমামাস ১-১/২ ফুট (৪৭ সেমি) লম্বা। সিটাকোসরাস ৪ ফুট (১২০ সেমি) লম্বা। দুজনেই পুরোপুরি পূর্ণ বয়স্ক নয় বলে মনে করা হয়।
কানাডিয়ান মিউজিয়াম অফ নেচার প্যালিওন্টোলজিস্ট এবং অধ্যয়নের সহ-লেখক জিয়াও-চুন উ বলেছেন, "এর আগেও মাংসাশী ডাইনোসরের নমুনা পাওয়া গেছে যা উদ্ভিদ-ভোজী ডাইনোসরদের শিকার করেছে, তবে স্তন্যপায়ী প্রাণীর ডাইনোসর শিকারের উদাহরণ কখনও পাওয়া যায়নি।"
প্রাণীদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখায় এমন জীবাশ্ম পাওয়া বিরল ঘটনা। মঙ্গোলিয়ায় ১৯৭০ এর দশকে পাওয়া আরেকটি জীবাশ্ম দেখায় যে দুটি ডাইনোসর - শিকারী ভেলোসিরাপ্টর এবং উদ্ভিদ-খাদক প্রোটোসেরাটপস - প্রায় ৮০ মিলিয়ন বছর আগে জীবিত কবর দেওয়ার আগে লড়াই করেছিল, সম্ভবত একটি ধসে পড়া বালির টিলায়।
গবেষকরা এই ভাবনাকে প্রশয় দেননি যে রেপেনোমামাস এবং সিটাকোসরাস জীবাশ্ম দেখাচ্ছে যে একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী কেবলমাত্র একটি মড়াকে সাফ করছিল।
"প্রথমতঃ, স্তন্যপায়ী প্রাণীটি ডাইনোসরের উপরে রয়েছে যেন এটি এটিকে বশীভূত করার চেষ্টা করছে, যা স্ক্যাভেঞ্জিং হাইপোথিসিস-এর মানানসই নয়," ম্যালন বলেছিলেন।
“দ্বিতীয়ত, ডাইনোসরের হাড়ে কোনও কামড়ের চিহ্ন নেই, যা আমরা আশা করতাম যদি এটি দীর্ঘক্ষণ বসে থাকত, মৃতভোজীদের সংস্পর্শে থাকত। আর শেষ কথা হল, স্তন্যপায়ী প্রাণীর পিছনের পা ডাইনোসরের ভাঁজ করা পিছনের পা দ্বারা আটকা পড়ে, যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই যদি ডাইনোসরটি ইতিমধ্যেই মারা যেত যখন স্তন্যপায়ী প্রাণীটি এটিকে খুঁজে পেত,” ম্যালন যোগ করেছেন।
যদিও সিটাকোসরাস প্রজাতি শিংওয়ালা ডাইনোসর বংশের প্রাচীন জ্ঞাতি ছিল, কিন্তু তার মুখের শিং এবং মাথার ক্রেস্ট ছিল না। গাছ খাওয়ার জন্য এটির টিয়াপাখির মতো ঠোঁট ছিল।
রেপেনোমামাস, ডাইনোসর যুগের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীর হাত-পা ছিল ছোট এবং ছড়ানো, একটি লম্বা লেজ, একটি পাতলা শরীর, একটি মজবুত মাথার খুলি এবং কাটা কাটা তীক্ষ্ণ দাঁত ছিল। ম্যালন এর চেহারাকে বর্তমানের চীনা ফেরেট-ব্যাজারের সাথে তুলনা করেছেন।
রেপেনোমামাসের ডাইনোসর খাওয়ার অভ্যাসের পূর্বে প্রমাণ ছিল। একই এলাকার একটি রেপেনোমামাস জীবাশ্মের পেটে পিসিটাকোসরাসের হাড় ছিল।
ম্যালন বলেন, "আমাদের (প্রাপ্ত এই) জীবাশ্মটির স্বতন্ত্রতা হল এটি প্রমাণ করে যে রেপেনোমামাস বড় আকারের ডাইনোসর শিকারকে মোকাবিলা করতে সক্ষম ছিল।"
(www.theoffnews. com dinosaur)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours