রণজিৎ গুহ, লেখক ও সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:
(লেখক একজন গর্বিত প্রাক্তন ইস্পাত কর্মী)
আলোর উৎসব দীপাবলি এখন পৃথিবীর নানা দেশে খুবই উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। আমাদের দেশে অতি দূর অতীত থেকেই কার্তিক অমাবস্যায় দীপাবলি পালিত হয়ে আসছে। রামায়ণে উল্লেখিত আছে যে শ্রীরামচন্দ্র রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের নির্বাসনের পর অযোধ্যা ফিরেছিলেন এক কার্তিক অমাবস্যায়। এই উপলক্ষে অযোধ্যাবাসীরা ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে তাদের রাজধানী সাজিয়েছিলেন। সেই উৎসব পরম্পরা আজও দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে। শুধু রামায়ণ নয় মহাভারতের বিভিন্ন পাঠে একাধিকবার এই আলোকসজ্জার কথা উল্লেখ আছে। শ্রীকৃষ্ণ ভূদেবী ও বরাহর পুত্র অত্যাচারী নরকাসুরকে বধ করেন। মৃত্যুর আগে নরকাসুর নিজের মৃত্যুর দিনটি ধূমধামে পালিত হওয়ার বর চান। প্রচলিত আছে, দীপাবলিতেই নরকাসুরকে বধ করেছিলেন কৃষ্ণ। তাই নরকাসুরের কামনা পূরণের উদ্দেশ্যে ধূমধামের সঙ্গে পালিত হয় এই উৎসব।
আবার মহাভারতেরই অন্য এক প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, ১২ বছর বনবাস ও ১ বছরের অজ্ঞাতবাস কাটিয়ে দীপাবলিতেই হস্তিনাপুরে ফেরেন পাণ্ডবরা। দ্রৌপদী ও পঞ্চপাণ্ডবকে স্বাগত জানাতে আলোয় সাজানো হয়েছিল হস্তিনাপুরকে।
আবার জৈনদের মতে, ৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহাবীর দীপাবলির দিনেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেছিলেন। সেকারণেই এই আলোর উৎসব পালিত হয়। বঙ্গদেশে দীপাবলির সাথে কালীপুজোর ধুমধাম কিছু কম নয়।
১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধিগ্রন্থে এই পূজার সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতকে এই পূজার্চনা শুরু করেন। তার সকল প্রজাকে এই উপলক্ষে আগের রাতে নিজের আবাসে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের নির্দেশ দেন। রাজ্যজুড়ে কালীপুজোর আগের দিনে একবেলা শাকান্ন আহারের আদেশ জারি করেন। সম্ভবত সেই থেকেই বঙ্গদেশে কৃষ্ণ চতুর্দশীতে ঘরে ঘরে চোদ্দ শাক খাওয়া ও চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর প্রচলন।
দীপাবলির প্রাক্কালে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, সকলের মঙ্গল হোক। আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠুক সবাইয়ের জীবন।
(www.theoffnews.com Kali puja Dewali Dipawali Kali goddess)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours