সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
কর্ণাটক রাজ্যের উড়ুপি জেলার উড়ুপি শহরে সম্প্রতি কিছু বিরল ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলি বিশেষজ্ঞদের মতে হিন্দু দেবতা মাইলারেশ্বরের। দাক্ষিণাত্য এবং উপকূলীয় কর্ণাটক অঞ্চলে মাইলারেশ্বর সম্প্রদায়ের একসময় চরম বিকাশ ঘটেছিল। এই আবিষ্কারটি সেই ঐতিহাসিক গুরুত্বের ওপর নতুন আলোকপাত করেছে।
প্রত্নতত্ত্বের অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক টি মুরুগেশি বলেছেন, "যদিও মাইলারেশ্বরকে উৎসর্গ করা একটি মন্দির কুন্দপুরে বর্তমান যেখানে তাঁকে একটি লিঙ্গের আকারে উপাসনা করা হয় এবং অতীতে ময়লারেশ্বরের উপাসনার শিলালৈখিক নিদর্শন পাওয়া গেছে কিন্তু সাম্প্রতিককালে উডুপি জেলায় মাইলারেশ্বরের একটি মূর্তি এবং এই ধরনের তাক্তির আবিষ্কার কর্ণাটকের উপকূলীয় অঞ্চলে এই প্রথম”।
মাইলারেশ্বর মহারাষ্ট্র এবং উত্তর কর্ণাটক অঞ্চলে খন্ডোবা নামে পরিচিত। মাইলারেশ্বর ভজনা একটি সুপ্রাচীন আধ্যাত্মিক ঘটনা, যা দাক্ষিণাত্য এবং উপকূলীয় কর্ণাটক জুড়ে প্রবল অনুরক্তির জন্ম দিয়েছিল। ভক্তির এই ধারা আমাদের বাসরুর কাছে নিয়ে যায় যেটি উদুপি জেলার কুন্দাপুরার কাছে অবস্থিত একটি শহরতলি যেখানে প্রাচীন ইতিহাস নতুন আবিষ্কারের সঙ্গে মিশে যায়। এখানেই উপকূলীয় অঞ্চলে ময়লারেশ্বর পূজার পাথুরে প্রমাণ পাওয়া গেছে। কয়েক মাস আগে আবিষ্কৃত একটি ক্ষুদ্রায়তন পাথরের ফলক ঘুমন্ত ইতিহাসকে জীবন্ত করেছে। এটিতে একটি সুসজ্জিত ঘোড়ার ওপর মাইলারা এবং মাইলালাদেবীর রাজকীয় ভাবে বসার ভঙ্গীতে খোদাই করা আছে। তাদের দুজনের ডান হাতে তরবারি ধরা আছে। এই ১৭ শতকের নিদর্শনটি সে যুগের কারুশিল্প এবং ভক্তির একটি অকাট্য প্রমাণ এবং হালনাদের একটি পুকুরে পাওয়া গিয়েছিল যার মালিক দেবানন্দ শেট্টি এটি মুরুগেশীর কাছে নিয়ে এসেছিলেন।
বাসরু থেকে আরও একটি সাম্প্রতিক আবিষ্কার এই অনুসন্ধান পর্বকে আরও গভীর নিয়ে গেছে - একটি ক্ষতিগ্রস্ত অথচ অসাধারণ সুন্দর ১৫ শতকের ভাস্কর্য একটি কুয়ো থেকে উদ্ধার করা হয়েছে যেটিতে একজন রাজবেশে বীরপুরুষকে ঘোড়ায় চড়া অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। রাজপুরুষের ডান হাতে একটি তলোয়ার আর বাঁ হাতে একটি বাটি - মূর্তিটি থেকে ক্ষমতা এবং গভীরতা - দুইই বিচ্ছুরিত হচ্ছে। তবে ঘোড়ার পিঠে বসে নেই মৈলালাদেবী। ঘোড়াটির বসা ভঙ্গি ভাস্কর্যটিকে আরও অনন্য করে তুলেছে। মুরুগেশী বলেছেন - “সম্ভবত প্রাচীন যুগে এই মূর্তিটি মন্দিরে পুজো করা হত”।
মধ্যযুগীয় ইতিহাসে বাসরু নগরী ছিল একটি ব্যস্ত বাণিজ্য কেন্দ্র, যেখানে ‘উহায়াদেশী’ এবং ‘নানাদেশী’র মতো বিভিন্ন বাণিজ্য সঙ্ঘের নিয়ন্ত্রণে এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলেছিল যেখানে বিভিন্ন ধর্মের বিকাশ ঘটেছিল।
(www.theoffnews.com Udupi archeology)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours