মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার ও লেকচারার, আহমেদাবাদ:
ধর্মাবতার,
চোখ বাঁধা রেখে আপনি অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র হলেন বলেই আজ কিন্তু কুরুক্ষেত্রের শঙ্খ বেজে উঠল! পারতেন কিন্তু সব কথাগুলির সাথে একমুঠো সমবেদনা মিশিয়ে দিতে, কত লক্ষ বুড়োবুড়ি থেকে কচিকাঁচা অপেক্ষা করেছিল আপনার মুখ থেকে একটু সমবেদনা শুনবে বলে। কিন্তু যাবার বেলায় একরাশ মানুষের অভিশাপ কুড়িয়ে কেরিয়ারটা শেষ করছেন!
জানি আইনের অনেক কুট কচালি, ধর্ষক ধরা বা তার শাস্তি দেওয়া আপনার কাজ নয়! তবু কোথায় যেন একটু হলেও ওই ছোট্ট মোমবাতির শিখার মত মানুষ আশার আলোটুকু জ্বেলে রেখেছিল। আপনার কাছ থেকে বিবেকবান মনুষত্ব আশা করেছিল, এমন কদর্য পক্ষপাতিত্ব আশা করেনি। ভুলে যাবেন না সব বিচারের রায় কিন্তু আপনার একার দেওয়ার ক্ষমতা নেই, সবার অলক্ষ্যে কোথাও আজও বিচার চলে! সেই মার যখন নেমে আসবে সেদিন আপনারা নিশ্চয়ই বুঝবেন শোক কাকে বলে, হারানো কি জিনিষ! কথাগুলো নিষ্ফলের ক্রন্দন লাগছে তো!
ঠিক এমনই লক্ষ লক্ষ কুরু সেনা নিয়েও ক্ষমতার মদে গর্বিত দুর্যোধন হেরে যাবেন ভাবেনি।
তিলোত্তমা একা ধর্ষিত হননি, বাংলা তথা আপামর ভারত, না, না সারা বিশ্বের মহিলারা এক সাথে ধর্ষিতা হয়েছি, আমাদেরও শরীর জুড়ে আঁচড়ানো, কামড়ানোর দাগ! চোখ দিয়ে আমাদেরও প্রতিনিয়ত জল নয় রক্ত ঝরছে ধর্মাবতার।
শুধু কাল --মহাকালের পদধ্বনি শুনছি আর দিন গুনছি দুঃশাসনের রক্তে ভিজিয়ে খোলা চুল বাঁধবার।
উৎসব এমন ভাবে উদযাপিত হবে যে তার ঢেউ আপনি বা আপনার সাগরেদরা সামলাতে পারবেন না।
আপনি ভেবে দেখুন --- চাইলে এখনও কিন্তু এ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের এড়াতে পারেন! আর হয়ত সময় পাবেন না ভুল শোধরানোর!
কথাগুলো লিখছি আর ভাবছি মামলার নিষ্পত্তি হয়ত আশু হবে না, আবার সবাইকে পেটের ধান্ধায় কাজে ফিরতেই হবে! ঠিক এমন আন্দোলন তো কতই হয়েছে ,আগেও দেখেছেন বৃদ্ধ, বৃদ্ধা যাঁরা । তাঁদের কাছে এ তো নতুন নয়! তবু তাঁরা কেন হাঁটলেন মিছিলে, অসমর্থ শরীর নিয়ে! আসলে যাঁরা সব হারিয়েছেন এক কালে, অথবা যাঁদের আর হারাবার কিছু বাকি নেই তাঁদের তো হাঁটতে কোনো অসুবিধে নেই, তাই কি তাঁরা হাঁটছেন? না, ঠিক তা বোধহয় নয়, সাথে আছে বিবেকের তাড়না! চলে তো যাবই তবু যাবার আগে শিশুর কাছে মনে মনে অঙ্গীকার করছেন আবর্জনা পরিষ্কার করার।
আজকের মধ্য বয়সীরা যাঁরা হাঁটছেন তাঁরা ভাবছেন ভবিষ্যতে নাতি নাতনিরা যখন প্রশ্ন করবে "দাদু, (দিদা) ২০২৪ সালে এমন নারকীয় ঘটনায় সবাই প্রতিবাদ করেছিল, তুমিও হেঁটেছিলে কি? কোনো লাভ হয়েছিল?" ঠিক যেমন তাঁর দাদুকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন "হিটলারের নাৎসী বাহিনী এমন অত্যাচার করেছিল তবু সব দেশ একসাথে হয়ে কেন প্রতিবাদ করেনি?"
তবে সেসময় হিটলারও যেমন ভাবেননি তাঁর চেয়েও শক্তিশালী কেউ আসবে তাকে সরাতে, নির্মূল করতে তাদের বাহিনীকে সাময়িক জিতে যে আকাশচুম্বী অহং বোধ গড়ে ওঠে, কিভাবে যেন কেউ না কেউ এসে তার শেষের ঘণ্টাখানি বাজিয়ে যায়।
তাই হেরে যাবে জেনেও একটা সুন্দর ঝকঝকে সকালের আশায় রাত দখল চালিয়ে যাবে কিছু মানুষ, নীরবে মোমবাতি নিয়ে হাঁটবে কিছু মানুষ, হয়ত আসতে আসতে ভিড় কমে যাবে, তবুও কেউ না কেউ থাকবেই। ক্লান্ত মানুষটির হাত থেকে আধ পোড়া মোমবাতি নিয়ে নতুন উৎসাহে এগিয়ে যাবে কম বয়সী কোনো তরুণ!
(www.theoffnews.com R G Kar Hospital rape case Kolkata)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours