প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূর্ব বর্ধমান:
তিলোত্তমার বিচার চেয়ে জুনিয়ার ডাক্তারদের আন্দোলনের ৩৫ দিন পূর্ন হলো। জুনিয়ার ডাক্তাররা স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধর্ণায় বসে আছেন। ডাক্তারদের অবস্থান দেখে কখনো মনে হয়নি ওনারা আন্দোলন ভুল পথে চালাচ্ছেন। ওনাদের দাবি অনৈতিক। কখনো মনে হয়নি আন্দোলন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
দেখেছি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নাক গলাতে এলেই জুনিয়ার ডাক্তাররা ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছেন। জোর হাত করে তারা আবেদন করেছেন, বিচারের জন্য আন্দোলন যে কেউ করতে পারেন, করুন। তবে আমাদের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতে ক্যাম্পাসে আপনাদের উপস্থিতির কোন প্রয়োজন নেই।
প্রয়োজন নেই ধর্ণা মঞ্চে।
অথচ বারবার দেখছি স্বার্থান্বেষী এক শ্রেণীর মানুষেরা জুনিয়ার ডাক্তারদের এই আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছেন। এদের উপস্থিতি মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরা ডাক্তারদের আক্রমনের পাশাপাশি আন্দোলনকারী সাধারণ জনগণকেও আক্রমন করতে ছাড়ছেন না। হুমকি, মারধর চলছে। হুমকি হাসপাতালেই। এটাই ডাক্তাররা থ্রেট কালচার বলছেন।
সম্প্রতি অর্থাৎ গত ১০ই সেপ্টেম্বর জুনিয়ার ডাক্তাররা স্বাস্থ্যভবন অভিযান করেছিলেন। ফলপ্রসূ হয়নি সেই অভিযান। ডাক্তাররা পথেই বসে পড়লেন। অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করলেন। তাদের দাবিপূরণে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন। চাইলেন প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা। যে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। উপস্থিত থাকবেন আন্দোলনকারী ৩০ জন জুনিয়ার ডাক্তার।
গত পরশু তখনও ভালো করে ভোরের আলো ফোটেনি। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কলকাতা মহানগরী। রাত তিনটে বেজে ৪৯ মিনিট। জুনিয়ার ডাক্তাররা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে অবস্থানস্থল থেকেই একটি মেল করলেন।
চিঠিতে লিখলেন-
'রেসপেক্টেড ম্যাম,
ডেপুটি হেলথ মিনিস্টারের প্রেস মিট দেখে জানতে পারলাম আপনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। স্বাস্থ্যসচিবের কাছ থেকে যে মেল ১০ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে পেয়েছিলাম তাতে তেমন কিছু উল্লেখ ছিল না। সেই প্রসঙ্গে আমাদের মূল দাবি আমরা উল্লেখ করছি। '
১) জাস্টিস ফর অভয়া- এটা রাজ্য সরকারে ব্যাপার নয়, তবে আমরা চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিবিআই, সুপ্রিম কোর্ট তদন্তকে যেন এগিয়ে নিয়ে যায় ও দেরি না করে দোষীদের যেন শাস্তি দেয়।
২) ডিএমই, ডিএইচএস ও স্বাস্থ্যসচিবকে অপসারণ করতে হবে। কারণ সেমিনার রুমের পাশের রুম ভাঙার ক্ষেত্রে তাঁদেরই সই ছিল। আমরা মনে করি গোটা স্বাস্থ্য পরিকাঠামোতে দুর্নীতিতে তাঁরাও জড়িত।
৩) বিনীত গোয়েলকে অপসারণ( রিমুভাল) করতে হবে। তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনার। ডিসি নর্থ ও ডিসি নর্থের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪) সমস্ত হাসপাতাল ও সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপযুক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সমস্ত জুনিয়র ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী বিশেষত মহিলা হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার্সদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৫) সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় থ্রেট কালচারের অবসান ঘটাতে হবে। মেডিক্যাল পড়ুয়া, জুনিয়র ডাক্তার ও ডাক্তারদের গণতান্ত্রিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
ডাক্তাররা বললেন, এই মিটিং এর লাইভ স্ট্রিমিং করতে হবে। কারন, এই আন্দোলন এখন শুধু ডাক্তারদের আন্দোলন নয়, আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। কোটি কোটি জনতা চায় তিলোত্তমার খুনের বিচার। তারা চায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দুর্নীতির অবসান।
গোটা রাজ্য এই মিটিংয়ের অপেক্ষায় রইল। মুখ্যমন্ত্রী মিটিংয়ে বসতে যদিও বা রাজি হলেন লাইভ টেলিকাস্ট করতে রাজি হলেন না।
জানতাম এমনটাই হবে। ক্ষমতার দম্ভ মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে। তাই হলো। মুখ্যমন্ত্রী লাইভ টেলিকাস্ট করতে রাজি হলেন না। কেন রাজি হলেন না?
অন্যান্য প্রশাসনিক মিটিংয়ে তো উনিই লাইভ স্ট্রিমিং করান। জেলার প্রশাসনিক মিটিং সময় লাইভ স্ট্রিমিং হয়। ওনার নির্দেশেই হয়। মিডিয়া ঘন্টার পর ঘন্টা দেখায়।
তাহলে 'জাস্টিস ফর তিলোত্তমা'-র বিচারের দাবিতে জুনিয়ার ডাক্তারদের সাথে আলোচনায় লাইভ টেলিকাস্ট করলে কি ক্ষতি এটাই বাংলার মানুষের প্রশ্ন। তাহলে কি কিছু কথা লুকানোর ভয় এখনো তাড়া করছে মুখমন্ত্রীকে? আইনের কোন ধারায় লাইভ স্ট্রিমিং করা নিষেধ রয়েছে? লাইভ স্ট্রিমিং হলে সত্যকে উনি মিথ্যা বলে চাপা দিতে পারবেন না, এই ভয়েই কি?
(www.theoffnews.com junior doctors agitation Kolkata)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours