প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূর্ব বর্ধমান:
পরপর দুটো রাত অতিক্রান্ত। আবার সকাল গড়িয়ে ফের একটা দুপুর উপস্থিত।
গত তিন দিন যাবৎ ওরা দাবিপূরণের আশায় বসে রয়েছে। শপথ নিয়েছে অনির্দিষ্টকাল বসে থাকার। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই ডাকছে মিটিংয়ে বসো। চিঠি পাঠিয়েছে একাধিকবার। নিজে আসেনি। দম্ভ এমনি।
লোভ মানুষকে নীচেয় নামায়। লোভ দুর্নীতির জন্ম দেয়। দুর্নীতি অশুভ শক্তিকে সঙ্ঘবদ্ধ করে। দম্ভ এই জায়গা থেকে জন্ম নেয়। ক্ষমতার দম্ভ সব থেকে ভয়ঙ্কর দম্ভ।
দম্ভ ধরাকে সরা জ্ঞান করে। যা হচ্ছে হোক আমি আমার জায়গায় অটল থাকব। দম্ভ শাসককে নিষ্ঠুর করে। ঠিক অত্যাচারী কংসের মত। অত্যাচারী হিটলারের মত।
শাসককে নিষ্ঠুর হতে সাহায্য করে পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থা। শাসন ব্যবস্থার মাথায় যিনি তিনিই নির্দেশ দেন নিষ্ঠুর হতে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির অসংখ্য বার দেখেছি।
তবুও ওরা প্রতিজ্ঞায় অবিচল। ওদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে। ওদের প্রিয় সহকর্মীর চলে যাওয়া ওদের শিখিয়েছে লড়াই না করলে অধিকার অর্জন করা যায় না। তিলোত্তমা শিখিয়েছে সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই না করলে আমার মত এক একজনকে ওরা টুঁটি চেপে ধরবে। তারপর শেষ পরিণাম হবে আমারই মত।
এদেশের আইন ব্যবস্থা নিরপেক্ষ নয়। অনেককে বলতে শুনি আইন সকলের জন্য সমান। আইনের চোখে রাজা, উজির, কৃষক, শ্রমিক, নারী সকলে সমান। এদেশের আইন নাকি নারীদের পক্ষে। নারীকে রক্ষা করে।
এ কথা চরম মিথ্যা।
আইন ধনীর পক্ষে। আইন আজও পুরুষের স্বার্থ রক্ষা করে। সারা দেশের নিরিখে ধর্ষণের শাস্তি পায় মাত্র ২%। ৯৮% ধর্ষক মুক্তি পেয়ে যায়। প্রমান লোপাট, শাসকের অঙ্গুলিহেলনে ধর্ষক সাজাপ্রাপ্ত হয় না।
তিলোত্তমার খুনি ও ধর্ষকদের শাস্তি চাই। শুধু তিলোত্তমা কেন, মণিপুরে অসংখ্য নারীর যারা সম্ভ্রম নষ্ট করেছে তাদেরও চরম শাস্তি চাই। চাই ধর্ষণের বিরুদ্ধে কড়া আইন।
আইনের রক্ষকরা বা সরকার এ আইন প্রণয়ন করতে চায় না। তাই গনআন্দোলনকে জোরদার করতে হবে। ধারাবাহিক আন্দোলন। আন্দোলন না হলে এ আইন প্রণয়ন হবে না। আইন প্রণয়নে বাধ্য করতে হবে। এই কারনেই রাজনীতির রঙ না দেখে গণআন্দোলনে সামিল হতে হবে এদেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে।
উৎসব পালনের ফাঁকেও যেন একথা মনে থাকে। উৎসব যে কেউ পালন করতে পারে। কেউ বাধা দেবে না। উৎসব না পালন করার স্বাধীনতাও আমার মত মানুষদের থাকবে।
উৎসবের দিনগুলিতে প্রতিমুহূর্তে যেন আমাদের স্মরণে থাকে তিলোত্তমা জীবিত থাকলে এবছর উৎসব পালন করতেন। কিন্তু ওকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পরপারে, ওর ক্ষেত্রে উৎশব।
নতুন জামা পড়লে সেই জামায় লিখবেন তিলোত্তমার বিচার চাই।
ধর্ষকের শাস্তি চাই।
কালো ব্যাচ পরে পূজা প্যান্ডেলের সামনে দিয়ে যাবেন।
অন্যান্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আপনিই করুন। উৎসবের দিনে আপনার প্রতিবাদ, আপনার অভ্যাসে পরিণত করুন। প্রতিবাদ অভ্যাসে পরিণত না হলে প্রতিবাদী হওয়া যায় না। প্রতিবাদী হয় তারাই যাদের বিবেক, মনুষ্যত্ববোধ রয়েছে। প্রতিবাদী হয় তারাই যাদের শিরদাঁড়া সোজ।
দেখুন, এত বড় রাজ্যে মাত্র কয়েকটা ক্লাব উৎসবের জন্য সরকারি ভিক্ষা ত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেছে।
বাকিরা?
হাত পেতে ভিক্ষা নেওয়ার জন্য বসে রয়েছে চাতকের মত।
আমি ওই ত্যাগ করা ক্লাবের পক্ষে। ভিক্ষা নেওয়া ক্লাবের পক্ষে নয়। মনে করি ওই টাকায় রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। ওই টাকা মুখ বুজে অন্যায়-অবিচারকে সমর্থন করার জন্য দেওয়া হয়/হবে।
(www.theoffnews.com R G Kar Hospital junior doctors)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours