সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
প্রত্নতাত্ত্বিকরা নেনমারা বন বিভাগের কোলেনগোড রেঞ্জের একটি পাহাড়ের চূড়ায় অস্বাভাবিক সংখ্যায় মেগালিথিক কলস সমাধি আবিষ্কার করেছেন। সমাধিগুলি ২,৫০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন হতে পারে।
নেনমারা বন বিভাগের মালামপাল্লা বা মালাপ্পুরম পাহাড় নামেও পরিচিত, কুন্ডলিক্কাদ পাহাড়ে সমাধিগুলি প্রত্নতাত্ত্বিকদের গোচরেই আসত না যদি না কোডুভায়ুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বৃষ্টির জল সংগ্রহ প্রকল্পের অংশ হিসাবে একদল শ্রমিক পাহাড়ে ৬০টি গর্ত না খুঁড়ত। কলস সমাধিগুলি পরীক্ষা করে একজন প্রত্নতাত্ত্বিক বলেছেন যে এগুলি কেরালায় মেসোলিথিক বা পুরাতন প্রস্তর যুগ এবং লৌহ যুগের মধ্যে সংযোগের একটি গভীর ধারণা দিতে পারে।
পালাক্কাদ সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ কে. রাজন ওই প্রত্নস্থলে প্রাপ্ত মাইক্রোলিথগুলি পরীক্ষা করে বলেছে - "পাহাড়ের চূড়ায় এমন একচেটিয়া কবরের সমাধি পাওয়া বিরল৷ কবরগুলি আড়াই হাজার বছরেরও বেশি পুরনো হতে পারে। কিন্তু আরও খনন ছাড়া আমরা নিশ্চিতভাবে এগুলির বয়েস বলতে পারব না”।
ডাঃ রাজন কেরালায় মেসোলিথিক এবং লৌহ যুগের মধ্যে যোগাযোগগুলি অন্বেষণ করছেন৷ তিনি বলেছেন, “বেশিরভাগ পার্বত্য অঞ্চলে আমরা সাধারণত যা দেখি তা হল সীমানা বোঝানোর জন্য পাথরের ঢিবি এবং পাথরের শবাধার এবং স্মৃতিস্তম্ভ ও পাথরের গোলাকার স্থাপত্য যাদের মাঝে পাথরের শবাধার ও পাথরের ডলমেন বা চ্যাটাল পাথর। কিন্তু এই পাহাড়ে আমরা অস্বাভাবিক রকমের বেশি ক্ল্যাসিক কলস সমাধি খুঁজে পেয়েছি”।
এখানের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় শ্রমিকরা গর্ত খোঁড়ার সময়ে অসতর্ক অবস্থায় বেশ কয়েকটি মৃৎপাত্র ভেঙে ফেলেছে। একটি কলস সমাধির ঢাকনা বা ক্যাপস্টোন অক্ষত আছে।
তিনি আরও বলেছেন, “এই প্রত্নস্থলে প্রাপ্ত অসংখ্য ঘটকর্পর বা খোলামকুচি থেকে প্রাচীন যুগের কালো মৃৎপাত্র, লাল মৃৎপাত্র এবং কালো ও লাল মৃৎপাত্রের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। মেগালিথ নির্মাতারা ৮ মিমি থেকে ২ সেন্টিমিটার পুরুত্বের বিরাট কলসি রেখেছিল। একটি গর্তে যে কলসি পাওয়া গেছে তাতে আঙুলের ছাপ ছিল। ছোট পাত্রের খোলামকুচিতে দড়ির ছাপের নকশা দেখা যায়। পাহাড়ের অনেক জায়গায় পাথরের ওপর ছেনির দাগ থেকে বোঝা যায় যে ক্যাপস্টোন এবং গোলাকার বোল্ডারগুলো ছেনির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছিল”।
ডাঃ রাজন বিস্তৃত গবেষণার আবেদন জানিয়ে বলেছেন যে “যদিও পাহাড়ি অঞ্চলের অনেক জায়গায় মেসোলিথিক আর্টিফ্যাক্টস বা পুরাতন প্রস্তর যুগের সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, তবে মেসোলিথিক এবং লৌহ যুগ, এই দুই যুগেরই চিহ্ন একসঙ্গে পাওয়া যায় এমন প্রত্নস্থান খনন করা সম্ভব হয়নি। এই প্রত্নস্থানের খননকার্য অবশ্যই আমাদের পুরাতন প্রস্তর যুগ এবং লৌহ যুগের জন্য একটি স্ট্র্যাটিগ্রাফিক সিকোয়েন্স বা ভূতাত্ত্বিক ক্রমের সন্ধান দিতে পারে"।
(www.theoffnews.com archaeology Kerala)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours