রণজিৎ গুহ, লেখক ও সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:
সেই দুর্গা সপ্তমীর সকালে স্নান সেরে লালপেড়ে শাড়ি পরে ঘোমটা টেনে পুজোর ক'টা দিন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন মা দুর্গার বড় ছেলে গণেশের পাশটিতে। ভক্তজনেরা বলেন কলা বৌ। সুধী জন নব পত্রিকা বলে ডাকেন। ছোটদের কাছে পেটমোটা গণেশ ঠাকুরের বৌ। "কলা বৌ" কি সত্যিই গণেশের বৌ ?
পুরাণগাথায় পাই যে ব্রহ্মার দুই মানস কন্যা ঋদ্ধি ও সিদ্ধির প্রাইভেট টিউটর ছিলেন গণেশ। পড়াশোনায় বুঝি তেমন মতি ছিল না মেয়ে দুটোর। গণেশ রেগেমেগে খুব বকাবকি করেন জেনে ব্রহ্মা এসে দুই মেয়েকেই গণেশের সাথে স্থায়ীভাবে জুড়ে দেন। সেই থেকে গণেশের দুই স্ত্রী ঋদ্ধি ও সিদ্ধি। তাহলে কলা বৌ? গণেশের ইয়ে মানে পরকীয়া কিছু?
না কলা বৌ আসলে শিবজায়া দুর্গারই আরেক রূপ। এখানেই পুরানকর্তাদের কল্পনার আঙিনায় অভিনব বাস্তব বোধের দিক নির্দেশ। প্রকৃতি পুজোই মাতৃ আরাধনা।
কলা বৌ আসলে মা দুর্গার বৃক্ষ রূপ। শরৎ এবং বসন্তে দুর্গার সুসজ্জিত আগমন আসলে প্রকৃতির সৌন্দর্য সমারোহের আবাহন। মানব বিষ্ময়ের স্থুল প্রকাশ আচার অনুষ্ঠানে। "কলা বৌ" প্রচলিত নাম হলেও সুধীজন বলেন নব পত্রিকা। এটি ন'টি গাছের সমাহারে এক মানবী অবয়ব।
"রম্ভা কচ্চী হরিদ্রাচ জয়ন্তী বিল্ব দাড়িমৌ।
অশোক মানকশ্চৈব ধান্যঞ্চ নবপত্রিকা।"
রম্ভা (কলা), কচ্চী (কচু), হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব( ডালিম), অশোক, মানকচু ও ধান গাছ। নবপত্রিকায়, একটি পাতা যুক্ত কলাগাছের সাথে অপর আটটি উদ্ভিদকে শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। কলা গাছটিকে নারী দেহের গঠন দেওয়ার জন্য বেল দুটিকে স্তনযুগলের মতো রাখা হয়।
অতিপ্রাচীন কাল থেকেই প্রকৃতি পূজা ভারতীয় উপমহাদেশের রীতি। অগ্নি, জল, বায়ু, মাটি, পাহাড়, গাছ, নদী সবকিছুতেই ঈশ্বর বিরাজমান - এ ধারণা থেকেই "নবপত্রিকা" বা "কলা বৌ" এর পুজো। উদ্ভিদ প্রকৃতির সজীব অংশ। খাদ্য শস্য, নিঃশ্বাসের বাতাস, জীবনদায়ী ঔষধ এসব কিছুতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উদ্ভিদ। ভক্তদের কল্যাণকারী মা দুর্গা তাই অধিষ্ঠাত্রী দেবী নবপত্রিকার এই উদ্ভিদ গুলোতে। তিনি সর্বত্র বিরাজমান। নবপত্রিকা মা দুর্গার বৃক্ষ রূপ হিসেবে পরিচিত।
মহাসপ্তমীর সকালে "নবপত্রিকা" এর পুজোতে মন্ত্র পাঠ করা হয় -
"নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ" যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় - নবপত্রিকা বাসিনী নবদুর্গা।
(www.theoffnews.com Kolabou Durga Godess)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours