মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার ও লেকচারার, আহমেদাবাদ:
পুজোতে চোখে কাজল লাগাতে গেলে মনে হবে "মেয়েটার চোখ থেকে রক্ত বেরিয়েছিল!"
ভ্রুটা আঁকতে গিয়ে ধেবড়ে যাবে, হাড় ভেঙেছে যে ওখানে!
"পেলভিক হাড় কি?" প্রশ্ন করবে যখন বিজ্ঞান প্রিয় সেভেনের মেয়েটা তখন উত্তর দিতে গিয়ে থমকে মনে হবে তিলোত্তমার পেলভিক বোন ভাঙ্গা ছিল!
নির্ভয়ার সময় যখন শুনেছিলাম সবচেয়ে ছোট সদস্যটি যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়েছিল, সারা শরীর কেঁপে উঠেছিল, কামদুনিতে পা টা ছিঁড়ে নিয়েছিল, হায়দরাবাদে মেয়েটাকে লিফট দিয়েছিল তারপর তার বাইক সহ তাকে পুড়িয়ে দিয়েছিল ক্ষেতে।এছাড়াও হরিয়ানা কি রাজস্থানে শুনি দিন দুপুরে বাপ মায়ের চোখের সামনে মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, বিহার, ইউপিতে দলিত মেয়েরা তো ভোগের জন্যই।
সত্যিই এমন রেপ টেপ তো আকছার ঘটছে। অথচ বাঙালিরাইবা হঠাৎ কেন যে ক্ষেপে উঠে এমন দৃষ্টান্তহীন অদ্ভুত রকমের প্রতিবাদ করছে কে জানে? আসলে চারদিকে বাঙালিদের সুনাম খারাপ হয়েছে কিছুকাল ধরে ওই সব নারদা, সারদা নিয়ে। তায় আবার রাজ্যে তো কোনওই চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে কিছু বিচ্ছিন্ন বাঙালি লাইম লাইটে আসতে এই রাত দখলের নাটক শুরু করেছে, শাসকের অভিযোগ এমনই। অনেক আগেই এসব আটকানো যেত, আর দু চারটে লাশ পড়ত, সরকারের অনেক দয়া তাই এখনো বদলা শুরু হয়নি! শুধু ফোঁস পর্ব চলছে এখন।
মানছি না হয় পঙ্গু, বৃদ্ধ, অন্ধ থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা, যৌনকর্মী, ঘটি, বাঙাল, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এক হয়ে প্রতিবাদ করেছে, তার মানেই দেশের আইন কানুন বদলাবে নাকি? এভিডেন্স নেই, সরকার কি নিজের বিরুদ্ধে নিজে মামলা করবে নাকি? একটা আধ পাগলা সঞ্জয় ধরা হয়েছিল ধনঞ্জয়ের মত ফাঁসিতে লটকে দিয়ে দুর্গাপুজোর ধুমধাম শুরু করবে কোথায়, তা নয় -- কেমন যেন প্রতিবাদের নেশা লেগেছে!
বলি পাচ্ছিসটা কি তোরা মিছিলে গিয়ে, না তো ডিম ভাত না কোনো ভাতা, তবে রাত জেগে হেঁটে কি উদ্ধার করছিস বাপ! সেই তো সুড়সুড় করে ফিরতেই হবে, ১৩ বছরে কম জায়গায় জাল ছড়ানো? একটু বেখেয়াল থাকায় আর হঠাৎ আসা হুজুগে হাতটা ফস্কে ছিল তাই বলে ভুলে যাস না বাপ লাটাই কিন্তু আমার হাতেই!
কিন্তু কে জানে কেন এবার মেয়েগুলো ক্ষেপে গেছে। ওই শান্ত শাড়ি, সালোয়ার, বোরখায় সর্বাঙ্গ ঢাকা শান্ত মেয়েগুলো যেমন হাতে খুন্তি, দা, কাটারি বঁটি নিয়ে এগিয়ে আসছে তেমনি ওই বগল কাটা জামা পরা, উড়ু খোলা, সিগারেট ফোঁকা মেয়েগুলোও ক্ষেপে গেছে! বলছে আমাদের শরীর, আমাদের ইচ্ছে! ধর্ষনের দর্শনটা বদলাতেই হবে।অনুমতি নিয়ে শরীর ছোঁবে তো সে স্বামী, প্রেমিক, ধর্ষকামী যেই হও না কেনো! রেপ এর গায়ে লাল টেপের বাঁধন আসুক এবার! আর কবে! আর কবে! আর কবে হবে।
মেয়েগুলো ফুলনদেবীর মত ক্ষেপে গেছে, পারলে ওরা দোষীদের দেখলে নির্বিচারে গুলি চালাবে সামনে দাঁড় করিয়ে। ওদের কারুর বোন, কারুর দিদি, কারুর কন্যা শহীদ হয়েছে! আজ ওরা সবাই দশ মহা বিদ্যার রূপ ধারণ করেছে, দেখুন কেউ ধুমাবতী তো কেউ বগলা, কেউ বা ছিন্নমস্তা! পুজো ওরা নিয়েই ছাড়বে, হয় ভক্তি করুন নয়ত ভয় করতে শুরু করুন।
আর ওই যে ছেলেগুলো যারা অনেক রাত জেগে অনেক পড়াশুনো করে ডাক্তার হবে ভেবেছিল ওরা আজ রাজা রামমোহন রায় হয়ে গেছে! সতীদাহ যদি বন্ধ করা যায় তবে ধর্ষণ, জুলুমগিরি, অন্যায়ও চাইলে বন্ধ করাই যায়। আইন মানুষের জন্য তৈরি হয় যুগে যুগে!
ওরা কেউ আজ বিবেকানন্দ তো কেউ রবীন্দ্রনাথ, কেউ বা ঈশ্বরচন্দ্র। বয়সে বড় হয়েও ওদের আভূমি প্রণাম করতে ইচ্ছে হয়! সত্যিই তো ওরা ভাবী ডাক্তার, ঈশ্বরের মত পূজ্য সাধারণ মানুষের কাছে, সবচেয়ে নোবেল প্রফেশন ওদের। উৎসব তো তাই আমাদের আজ ওদের ঘিরেই!
ওরা ঠিক করেছে কেরিয়ার, চাকরি, সুনাম নষ্ট হবার ভয়ে আর ভয় পাবে না। ওরা সত্যের পথে আছে। জানে, তাই মেরুদণ্ড নোয়াবে না ঠিক করে দিনের পর দিন জল বিস্কুট খেয়ে রোদে বৃষ্টিতে বসে আছে।
প্রবাসে অবাঙ্গলীরা "কলকাতা কাঙ্গাল কা " বলা হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছে, শাজাহানের পরে শুধু আর জি করের খবরটুকু জানলে হয়ত মুচকি হেসে বলত "পশ্চিম বঙ্গাল লেড়কি লগকে লিয়ে বহুত আনসেফ ভাই!"
কিন্তু এই রাত দখল, প্রতিবাদ আবার প্রমাণ করল আজও বাঙ্গালী জাত হিসেবে মরে যায়নি। শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা, দেশের ক্রিম স্টুডেন্টরা লড়ছে, তাদের হাতে হাত মিলিয়ে আছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ।
আজ যেন সারা ভারত শুনছে কচি কচি গলায় পশ্চিমবঙ্গের ছেলে মেয়ে গুলো বলছে "তোর ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি!"
(www.theoffnews.com rape West Bengal agitation)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours