তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, কলকাতা:
ডাক্তারদের আন্দোলন সাথে নারীবাদী আন্দোলন কত দিন চলবে? এর পরিণতি কি? আমরা এখনো কেউ জানি না।
এই দুই আন্দোলনের দুইটি মৌলিক মিল আছে।একটি হল চিকিৎসক নারী আর দুই হলো দুটি আন্দোলনই অরাজনৈতিক অর্থাৎ পার্টি রাজনীতি তথা সংসদীয় রাজনীতির বাইরে আছে। ঐতিহাসিক ভাবে শাসকের অবস্থান ও চরিত্র কেমন এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ রক্তকরবী নাটকের মধ্যে দিয়ে যে ঐতিহাসিক সত্যতার কথা বলেছেন চরিত্র নন্দিনীর মুখ দিয়ে তা এখানে উল্লেখযোগ্য। রাজা ও নন্দিনীর কথোপকথন। 'রক্তকরবী’ নাটকের স্থানটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের নাম ‘যক্ষপুরী’। স্থান নামের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কৌশলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সেই সমাজ আসলে এক যক্ষ-সমাজ। লোভ, লালসার মরীচিকার পিছনে অবিরাম ছুটে চলাই যক্ষপুরীর ধর্ম। সোনার হরিণের পিছনে ছুটতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে মনুষ্যত্ব। খনি থেকে তাল তাল সোনা তুলে আনার সেই জীবনে নেই কোনও সোনার ঝিলিক। আছে শুধুই অন্ধকার, কেন না সে যে ‘মরা ধনের সাধনা’। সে এক সামাজিক অসুস্থতার লক্ষণ। সেই বদ্ধ জগতে এক ঝলক দমকা হাওয়ার মতো নন্দিনীর প্রবেশ। সেই তো নন্দিনী, যে জীবনকে নন্দিত করে। যক্ষপুরীর লোহার জালের আড়ালে যে অসুস্থ মানসিকতার রাজা বাস করে, নন্দিনী সেই দরজাটা ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে রাজাকে বের করে আনতে চায়। প্রাসাদের বন্ধ দরজা তো আসলে বদ্ধ মনেরই প্রকাশ। রাজা লোভী, ফ্যাসিস্ত। সে বসে শুধু তাল তাল সোনা সাজায়। অন্ধকারের মধ্যে, লোভের মধ্যে, ধনতন্ত্রের স্পৃহার মধ্যে, ক্ষমতার মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকার সাধনা করে মকররাজা। নন্দিনী বলে, ‘মাগো, তোমার হাতে ওটা কী’? রাজা বলে, ‘একটা মরা ব্যাঙ?’ নন্দিনী বলে, ‘কী করবে ওটা দিয়ে?’ রাজা বলে, ‘এই ব্যাঙ একদিন একটা পাথরের কোটরের মধ্যে ঢুকেছিল। তারই আড়ালে তিন হাজার বছর ছিল টিঁকে। এইভাবে কী করে টিঁকে থাকতে হয় তারই রহস্য ওর কাছ থেকে শিখছিলুম; কী করে বেঁচে থাকতে হয় ও তা জানে না।’
ফ্যাসিস্তদের এইটাই একমাত্র ইচ্ছা, শুধু ‘টিঁকে থাকা’। তারা জানেও না, কিভাবে তারা নিজেদের তৈরি সিস্টেমের ভিতরে বন্দি হয়ে থাকে। এই অসুস্থ বাসনার ছবি আজও বারবার ধরা পড়ে আমাদের চারপাশে এবং বুঝিয়ে দেয় ‘রক্তকরবী’ কেন আজও প্রাসঙ্গিক। ধরে নিন আজকের শাসকরা হল যক্ষ রাজার বিবর্তিত রূপ অন্যদিকে প্রজারা হল নাগরিক তথা ডাক্তার এবং নারী সমাজ। এইবার আসি ডাক্তার আন্দোলনের কথায়। জুনিয়র ডাক্তাররা প্রেস রিলিজ করে কি বললেন সেইটি দেখা যাক।
জুনিয়র ডক্টরস ফোরাম
প্রেস রিলিজ ০৯.০৯.২৪
মূল টেক্সটটা ইংরেজিতে লেখা-
নীচে অনুবাদটা রইলো।
আজকের সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পর, আমরা গভীরভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। আমরা লক্ষ্য করেছি যে অভয়াকে ভয়ঙ্কর ধর্ষণ ও হত্যার তদন্তে কোন অগ্রগতি হয়নি, যা সিবিআইয়ের দায়িত্ব ছিল। হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা পুলিশ থেকে সিবিআই পর্যন্ত তদন্ত হস্তান্তর করা হয়েছে, তবুও ন্যায়বিচার অনেক দূরে।
তদুপরি, আমরা রাজ্য সরকার এবং তার আইনজীবী কপিল সিব্বলকে যে কোনও উপায়ে আমাদের আন্দোলনকে থামাতে এবং অপদস্থ করার জন্য একটি লজ্জাজনক ভূমিকা পালন করতে দেখেছি। তাঁদের দাবি, জুনিয়র চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে এবং রোগী সেবা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা সবাইকে স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দিতে চাই যে রাজ্যের প্রতিটি মেডিকেল কলেজে রোগীর পরিষেবা চালু আছে, সিনিয়র ডাক্তাররা অক্লান্ত পরিচর্যা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা জনসাধারণকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে রাজ্যে ২৪৫টি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২৬টি মেডিকেল কলেজ। জুনিয়র চিকিৎসকের সংখ্যা সাড়ে সাত হাজারেরও কম। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৯৩,০০০ নিবন্ধিত ডাক্তার রয়েছে। মাত্র কয়েকটি মেডিকেল কলেজে জুনিয়র চিকিৎসক ধর্মঘটে থাকায় পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিভাবে ভেঙে পড়ছে বলা যায়? এই যুক্তি তথ্য সমর্থিত নয়।
এটি ইঙ্গিত দেয় যে সরকার মিথ্যা প্রচার করছে এবং সুপ্রিম কোর্টকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা বিশ্বাস করি এটি আমাদের আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার এবং এর জন্য ব্যাপক জনসমর্থনকে বিভ্রান্ত করার জন্য একটি ঘৃণ্য সরকারী প্রচেষ্টা। সুপ্রিম কোর্টকে বিভ্রান্ত করার এই জঘন্য প্রচেষ্টার জন্য আমরা কপিল সিব্বল এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সহ স্বাস্থ্য বিভাগের নিন্দা জানাই। আমরা সরকার এবং সুপ্রিম কোর্ট উভয়কেই মনে করিয়ে দিতে চাই যে জুনিয়র ডাক্তাররা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ নয়, তাঁরা শুধুমাত্র প্রশিক্ষণার্থী। যদি আমরা সরকারের পরিসংখ্যানকে সত্য বলে মেনে নিই, তবে শুধুমাত্র জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘটের কারণে যদি স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তবে এটি আসলে সরকারী হাসপাতালে সিনিয়র ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্য সেবা পরিকাঠামোর তীব্র ঘাটতিকে তুলে ধরে। এর দায় স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী এড়াতে পারেন না।
আমরা আরও দেখেছি যে কপিল সিব্বল এবং রাজ্য সরকার ২৭শে আগস্ট একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালীন যে সহিংস কার্যকলাপের জন্য দায়ী তা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমরা তাঁদের স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমরা ২৬শে আগস্ট বলেছিলাম যে ওই রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই, কোনো সহিংস বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করিনি এবং ভবিষ্যতেও করব না। তবে সরকার ও তাদের ২৩জন আইনজীবী যেভাবে সুপ্রিম কোর্টে মিথ্যাচার করেছে, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সরকার বা শাসক যদি সত্যি জনগণের হয়ে থাকে তাহলে কেন এই গণ দাবী ও আন্দোলনের বিরোধিতা করে কোর্টে ভুল তথ্য দিয়ে এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঘটনার ৩০ দিন পেরিয়ে গেলেও আন্দোলনের মূল দাবি নিয়ে কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেয়নি রাজ্য সরকার। তারা সিবিআই তদন্তের উপর সমস্ত দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। পুলিশের গাফিলতি বা স্বাস্থ্য দুর্নীতির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সন্দীপ ঘোষ, বিরূপাক্ষ বিশ্বাস বা অভিক দে-এর সাসপেনশন নিছক আড়াল ভিত্তিক পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। বাস্তবে, সিবিআই গ্রেপ্তারের পরে সন্দীপ ঘোষকে নামমাত্র শো-কজ নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। অভিক দে এবং বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে বরখাস্তের কারণ উল্লেখ করা হয়নি। এই ধরনের দুর্বল স্থগিতাদেশকে চ্যালেঞ্জ করা হবে এবং আদালতে খারিজ করিয়েন নেওয়া হবে ঘুরপথে, এটি জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য একটি মুখোশ ছাড়া আর কিছুই বলে মনে হচ্ছে না। আমরা দাবি করি যে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং স্বাস্থ্য বিভাগ যথাযথ ন্যায্যতার সাথে অভিক দে এবং বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে বরখাস্ত করুক।
আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই আমরা নিরাপত্তার দাবি তুলেছি। আমরা কর্তব্যরত ডাক্তারদের জন্য আলাদা বিশ্রাম কক্ষ এবং বাথরুম, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী, সিসিটিভি এবং মহিলাদের জন্য মহিলা নিরাপত্তা কর্মী, ডাক্তারদের বিশ্রাম কক্ষ এবং ওয়ার্ড ও ওটি কক্ষের বাইরে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করেছি।
যাইহোক, আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই যে শুধুমাত্র পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো এবং ডাক্তারদের কক্ষ আলাদা করা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি হাসপাতালে যথাযথ রোগী সেবা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি সর্বস্তরে বিদ্যমান। উন্নত অবকাঠামো বা কর্মীদের নিয়োগ ছাড়াই বিধ্বংসী অবস্থায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং পেরিফেরাল মেডিক্যাল কলেজে অসংখ্য শূন্যপদ রয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শুধুমাত্র ডাক্তারদের উপর চলে না; এতে জিডিএ, টেকনিশিয়ান, নার্স এবং ডাক্তার জড়িত, যাদের সবাই অবিচ্ছেদ্য, দীর্ঘমেয়াদী।
পাঁচ দফা দাবি দাবি সহ তিন স্বাস্থ্য কর্তার ইস্তফা দাবী- সরকারকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হলো। দাবি মেনে নিলে কর্ম বিরতি বন্ধ। না হলে ঘেরাও তীব্রতর হবে গণ আন্দোলনের রূপে। কর্ম বিরতিও চলবে।
জুনিয়র ডাক্তাররা আরও বলেছেন, রাষ্ট্রীয় অত্যাচার নেমে এলে সিনিয়র ডাক্তাররা কর্ম বিরতিতে যাবেন, এমন কি প্রয়োজন হলে গণইস্তফা দেবেন।
সরকার কি করে এই দুর্নীতি যুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে বাঁচতে পারবে। এই প্রশ্নের উত্তর শাসকের কাছে নেই।
জুনিয়র ডাক্তার ফোরাম দাবি করেছে, আমরা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস বিবৃতি থেকে জানতে পারলাম, সিপি নাকি তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে এসেছিলেন। তিনি নিজে দায় স্বীকার করেছেন তদন্তের গাফিলতির। তারপরেও কেন তার পদত্যাগ জমা নেওয়া হয়নি? পুলিশের কাজ কি শুধুই পুজোয় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা? এঁদের ভরসাতেই কি মেয়েরা কাজ করতে যাবেন? অবিলম্বে তাঁকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। অভয়ার পরিজনকে টাকা দিতে চাওয়া ডিসি নর্থকে তদন্তের আওতায় আনা হোক, মিথ্যে কথা বলে অভীক দে'কে আড়াল করতে চেয়েছেন ডিসি সেন্ট্রাল। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হোক ।
আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা জানি, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোনো সঠিক রেফারেল সিস্টেম অনুসৃত হয় না। কোনো মধ্যকার রেফারাল ব্যবস্থা নেই, বেড দখল সহ চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ডিজিট করার কোনো উদ্যোগ নেই, রোগীদের সমস্যা চালু করার জন্য কোনো ফেসিলিটি আদৌ কাজ না করা। সাধারন মানুষ ছেড়ে দিলে, তারা মেডিকাল রোগীদের রেফার করেন, তাদের কাছে কোনো তথ্য না থাকা অবস্থায় রেফার করা হচ্ছে, তিনি আদৌ চিকিৎসা পাবেন কি না।
জুনিয়র ডাক্তার বন্ধুরা বলছেন চার দিকে সুপার স্পেশালিটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হচ্ছে, খোলা হচ্ছে অগুন্তি মেড সংযুক্ত করা। ব্যবহৃত এই জায়গাতে চিকিৎসার অবস্থা তথৈবচ। যথেষ্ট সংখ্যায় ডক্টর নেই, স্থায়ী নার্স নেই, স্বাস্থ্যবিধিও উধাও। অনেক ক্ষমতাবান নতুন মেডিকেল সদস্য ফাঁকা সংখ্যায় নামমাত্র, মানসিক রোগ পরীক্ষা অন্যান্য সহ পরিকাঠামোর অবস্থা তথৈবচ৷ আমরা মনে করি শুধু গালভরা নাম ও বড় বড় ভবন গঠনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা যায় না, তার জন্য প্রয়োজন হয় সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য বিধি, প্রয়োজন হলে শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিতে হবে। অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা তার কোনো ছবি দেখতে পাচ্ছি না।
সত্যি তো এই সব দাবী পূরণ না হলে আর কতদিন মধ্যযুগীয় বর্বর প্রথায় মানুষ থাকবে। পূর্ব ইউরোপে ও পশ্চিমে এই সব সমস্যাই নেই। বহু আগে সমাধান করা হয়েছে। কেন এই দেশে হয়নি, এই প্রশ্ন তো উঠবেই। কেন হুমকি সংস্কৃতি বা থ্রেট কালচার বন্ধ হবে না যা সব মেডিক্যাল কলেজে চলছে। শুধু স্বাস্থ্য নয় সমাজের সর্বক্ষেত্রে শাসকের হুমকি। শাসক ও নাগরিক সমাজ সংঘর্ষের মুখোমুখি।
দাবি গুলোকে আর একবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক।
১০ই সেপ্টেম্বর জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্না দিয়ে যে আন্দোলন চলছে তাতে মোট ছয় দফা দাবি রয়েছে।
প্রথম, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি।
দ্বিতীয়, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার।
তৃতীয়, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে 'ব্যর্থ প্রমাণিত' কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা।
চতুর্থ, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।
পঞ্চম, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয় মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা।
ষষ্ঠ, রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডি এইচ এস) এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (ডি এম ই)র ইস্তফা। এই দাবি গুলোকে পূরণ করা খুব কি কঠিন। সরকার চাইলেই সমাধান করতে পারে। শুধু কর্তৃত্বের লালসার জন্যই এই দাবি গুলোকে গুরুত্ব দিল না। শুধু অর্থের লালসা নয়, দাবি মেনে নিলে
পার্টির একচেটিয়া একাধিপত্য থাকবে না। কোটি কোটি টাকা খরচা করে কোর্টকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য কেন দিল, যাতে কোর্টের রায় শাসকের অনুকূলে যায়। এখন কোর্ট শেষ পর্যন্ত যদি শাসকের বিরুদ্ধে রায় দেয় রাষ্ট্র যন্ত্রের বিরুদ্ধে আঘাত হওয়া সত্বেও তাহলে এটা হবে গবেষণার বিষয়। বিচারক ও একজন মানুষ, আইন ছাড়াও সেও বিবেকের জালে বন্দি, শুধু এই সব কারণেই মানুষ অপেক্ষায় আছে।আমাদের সংবিধানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও নাগরিকের অধিকারের সপক্ষে যথেষ্ঠ মানুষের জন্য অনুকূল ধারা আছে। সৎ ভাবে আইন প্রয়োগ করলে বিচার নাগরিকদের সপক্ষে যাবে। তাই সবাই অপেক্ষায়। সংবিধান পরিমার্জন করে আইনও বদলানো যায়। কোন আইন বা সংবিধান চরম নয়। যাই হোক
সামনে পুজো তাই সরকার বলছেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী উৎসবে ফিরুন।
উত্তরে নাগরিক কি বলছেন। না উৎসবে ফিরছি না, প্রতিবাদ চলবে।
দুর্গাপুজো বনাম শাসক
হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস প্রধান নেতা বলছেন মোহন ভগবৎ বলছেন যে সরকার অপরাধীদের আড়াল করেননি। উনি ঠিক কাজ করছেন। আমাদের সমর্থন করতে হবে। আর এখানকার রাজ্য বিজেপি ঠিক তাঁর উল্টো কথা বলছেন। এনারা যদি জানেন কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি রাজ্যের শাসককে সমর্থন করা, তাহলে এখানে উল্টো অবস্থান কেন? কেন এই মিথ্যে প্রতিবাদ করছেন, চোখে ধুলো দেওয়া? নিজেদের অবস্থানকে লুকানো তো এক বিপদজনক দ্বিচারিতা।
আসলে মোহন ভগবৎ বুঝতে পেরেছেন, এই আন্দোলন যদি চলতে থাকে একদিন আমাদের বিরুদ্ধেও ঘটবে। তাই সমর্থন। আর তাছাড়া এই আন্দোলনের জন্য যদি সরকার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নামিয়ে আনে। সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে বিজেপি তার সুফল পাবে।
অর্থাৎ শাসকের রাষ্ট্র যন্ত্রকে সহযোগিতা করতে হবে যা সরকারের দমনে নিপীড়নের সহায়ক শক্তি হবে।অর্থাৎ শাসকের চরিত্র সব জায়গায় এক, ভিন্ন ভিন্ন রূপ, আসলে গণ আন্দোলনের গলা টিপে মেরে ফেলা। এই ধরণের আন্দোলন প্রবনতা সব সময়ে সরকার তথা রাষ্ট্র যন্ত্রের বিরুদ্ধে যায়, তাই বলছেন সমর্থন করতে হবে এই সরকারকে। এই কারণেই অনেকেই ক্ষোভে বলছেন এই সরকার আসলে বিজেমূল। আবার সংবিধান সাংবিধানিক ভাবে আইন ও ন্যায়ের ধারা রাষ্ট্র যন্ত্রের শরিক এবং দমন নিপীড়নেরও শরিক। অনেকেই ভাবছেন আইন আদালত ও কোর্ট তথা বিচার ব্যবস্থা একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান, মোটেই তা নয়। শেষ বিচারে শাসকের শোষণ ভিত্তিক কাঠামোর নৈতিক ভিত্তি হল সংবিধান, এটা ভুলে গেলে চলবে না। মানুষের বাক স্বাধীনতা ও আন্দোলন করার অধিকার সংবিধানে স্বীকৃত। কিন্তু এই অধিকারেরও একটা সীমা আছে যা রাষ্ট্র যন্ত্রকে ভাঙার অনুমতি দেয় না।সংবিধানের শেষ উদ্দ্যেশ্য এটাই। তাই যুগে যুগে বিপ্লব আসে রাষ্ট্র যন্ত্রের মূল কাঠামোকে যাতে বদলে ফেলা যায়। এই ইতিহাসটাই আমাদের শেখায়। মানুষকে উৎসব মুখী করে তোলা যাতে প্রতিবাদের ঢেউ একটা সীমিত সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। উৎসবে ফিরে এসো মানে প্রতিবাদ বন্ধ কর। কিন্তু দুর্গা পূজার উৎসব তো নারী শক্তির উদযাপন। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির লড়াই। তাহলে কেন এই সরকার নারী নির্যাতন ও নারীর মুক্তির প্রতিবাদের বিরুদ্ধে এই পুজোকে ব্যবহার করলেন? বললেন উৎসবে ফিরে এসো।যেটা খুবই লজ্জাজনক ও ধিক্কার যোগ্য পদক্ষেপ। কাকে রাখা হবে আর কাকে ছাড়া হবে এটা কি জুনিয়র ডাক্তাররা ঠিক করবে? আমরা সময় নিচ্ছি, ঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেব বললেন মুখ্যমন্ত্রী। একদিকে শাসকের ইগো অন্যদিকে ডাক্তার সহ আমজনতার দাবি। মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকে এটা পরিষ্কার জনগণ কর্তৃক সরকার পরিচালিত হতে পারে না। সরকারের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত, লোক গণতন্ত্রের কোনো প্রশ্ন নেই, পার্টি তথা সরকারের নির্দেশই শেষ কথা।
সব শাসকের চরিত্র এক, রূপ ভিন্ন, ভিন্ন এটা আজ বুঝে নেওয়ার সময় এসে গেছে। এই তরুণী চিকিৎসক নিজের জীবন দিয়ে এই সত্যকে সামনে আনলেন। লক্ষ লক্ষ মানুষকে এক ছাতার তলায় এনে মুক্তির পথকে জনসমক্ষে আলোর সামনে নিয়ে এলেন। দেশবাসী তাই এই অভয়ার কাছে চির ঋণী ও কৃতজ্ঞ থাকবে। জাঁকজমক পূর্ণ পুজো নয়,
প্রতিবাদের আগুনে এই পুজোতে মেতে উঠুন তাহলেই মা দুর্গার সঠিক শক্তির উদযাপন হবে,না হলে এই দুর্গা শক্তির উদযাপন শুধু কলঙ্কিত হবে তাই নয়, মা দুর্গার অসুর নিধন শক্তি পূজার বিরুদ্ধে যাবে।
উপরিউক্ত আলোচনা ও বর্ণনা থেকে এটা বলা যেতেই পারে, এই মূল্যায়ন সঠিক পথকে নির্দেশ করছে এবং এটা সচেতন নাগরিকদেরও বক্তব্য।
সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচুর পোস্টার দেখা যাচ্ছে, না উৎসবে ফিরছি না। এটাই অধিকাংশ নাগরিকদের মনন। অনেকেই বলছেন প্রতিবাদ একটা উৎসবে পরিণত হচ্ছে। গণ আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী করতে গেলে প্রতিবাদটাই উৎসবে পরিণত হয়ে যায়। এই আন্দোলন একটা কালচারে বা অভিনব সংস্কৃতিতে পরিণত হচ্ছে, সেটাই তো নবতম উৎসব। এটা অনেকটা স্টিরিও টাইপ আন্দোলনের থেকে বেশি উৎসব উৎসব মনে হয়। এতে প্রচুর উদ্ভাবনী শক্তির স্ফূরণ ও প্রকাশ নজর কারে। ক্রোধের থেকে এক ধরনের স্বাধীনতা প্রকাশের প্রবণতা বেশি চোখে পড়ে। এটাই নতুনত্ব যেটা পার্টি রাজনীতির বোধের বাইরে থাকে।
এই মুহূর্তে নাগরিকরা জিতবে যুদ্ধে? বিচারের রায় সব মানুষের পক্ষে যাবে না শাসক কুল জিতবে?এটা এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলার নাগরিক ও চিকিৎসক সমাজ যে ধাক্কা দিতে সমর্থ হল। এই নেতৃত্বের রাজনৈতিক ভাবধারায় একটা সুস্পষ্ট সাহস, পরিপক্কতা, অভিনবত্ব ও সংযম লক্ষ্যণীয়। লাল বাজার অভিযান, বিনীত গোয়েলের ইস্তফা দাবি ও তাকে একটা কঙ্কালের মেরুদন্ড উপহার দান এক সাহসী উল্লেখ যোগ্য পদক্ষেপ। ছয় দফা দাবি নিয়ে স্বাস্থ্য ভবন অভিযান আরেক বড় সাহসী পদক্ষেপ।
পরিণত বুদ্ধির ফলে এরা এখনই মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ বা সরকার বদলের কোনো রকম দাবি তোলেননি। একই সঙ্গে দীর্ঘ শান্তি পূর্ণ অবস্থানের ভিত্তিতে শাসক রাজনৈতিক দলের ও রাষ্ট্র প্রশাসনের ঘুম কেড়ে নেওয়ার স্পর্ধা দেখাচ্ছেন।এটাই আজকের আন্দোলনের মৌলিকতা ও অভিনৰত্ব।
তাই আগামীর ইতিহাসে আজকের এই আন্দোলন অরাজনৈতিক রূপে এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।এই শাসক নয় বদলে যাবে কিম্বা মুছে যাবে। আর লড়াকু নাগরিকরা হারলেও শিক্ষা নেবে বা জিতলেও শিক্ষা পাবে এবং লড়াইয়ের পথ আরও গভীরে যাবে, এটাই ইতিহাস শেখায়। আগুনের ব্যবহার থেকে মানুষ যে এই পর্যন্ত এসেছে তা হারতে হারতেই শিখেছে। হাজার হাজার বছর ধরে শাসকরা শিখেছে কি করে টিকতে হয় পুঁজির নিয়মে কিন্তু কি করে বাঁচতে বা বাঁচাতে হয় তা শিখতে পারেনি। তাই ক্রমাগত শাসকের বদল, শোষণের রূপের বদল হয়েছে।
ওই কারণেই রক্ত করবী নাটক আজও গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য। মানুষ সেই দিনই সম্পুর্ন মুক্তি পাবে যখন চেতন ও অবচেতন মনে থাকা সমস্ত শৃংখল ভেঙে বেরিয়ে আসবে। এ এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনন্তকাল ধরে চলছে। মুক্তি ও নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া যা ঘটতেই থাকবে। হৃদয়বৃত্তির সাথে ক্ষমতার লড়াইয়ে পৃথিবী শেষ পর্যন্ত কার দখলে টিকে থাকবে। এটাই প্রশ্ন, আত্ম জ্ঞানী কবিরা বলেন আগে তো নিজেরা মুক্ত হও প্রত্যেকে তবে তো সমাজ মুক্ত হবে। রবীন্দ্রনাথ এইখানে বলছেন বিশ্বজয় বা অস্ত্র যুদ্ধে জেতা কঠিন, তার অনেক বেশি কঠিন নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়া।মাওসেতুং একবার চিৎকার বলে উঠেছিলেন,
পৃথিবী আমাদের, পৃথিবী তোমাদের, অবশেষে পৃথিবী আমাদের।
উনি সাম্যতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এই কথা উল্লেখ করেছিলেন। নারী আন্দোলন ও ভাবনার দাবি আমি পরবর্তী পর্যায় আলোচনা করবো। এই মুহূর্তে ডাক্তারদের আন্দোলনের কথা গুরুত্বপূর্ণ। এই ডাক্তার আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিনা পয়সায় খাবার দিয়ে যাচ্ছেন কারা? ছোট ছোট চায়ের দোকান, কেউ কেউ চাঁদা তুলে খাবার সরবরাহ করছেন, ছোট ছোট খাবারের দোকান ও বহু মধ্যবিত্ত বাড়ি থেকে মায়েরা খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। বাড়িতে বসে খাবার বানাচ্ছেন আর সেই খাবারই ডাক্তার তথা নাগরিকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। খাবার উপচে পড়ছে ,চিকিৎসকরা নাগরিকের প্রনাম জানাচ্ছেন, এটাই তো ভালবাসার ছবি, কলকাতার ছবি, একি ভোলা যায়? এই মায়েদের মনের কি ধরণের যন্ত্রনা, আবেগ ও উদারতা আছে তার কোনো ইতিহাস হয়তো লেখা হবে না কিন্তু এই ছবিটাই মানুষের মনে থেকে যাবে। আজকে ডাক্তার, পুরুষ নারী হিন্দু মুসলিম কিছুই আলাদা করা যাবে না। প্রচুর মুসলিম নাগরিক এই আন্দোলনে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সব রঙ একাকার।
এ এক নজির বিহীন ছবি কলকাতার বুকে। দেবুর চায়ের দোকান। যে দেবু নিজেই ভালো করে সংসার চালাতে পারে না, সেও বিনা পয়সায় সবাইকে চা বিতরণ করছেন। ভাব যায়? এটাই আমাদের বাংলা, এটাই কলকাতা। কারো তিনশো টাকা লাভ হয় চা বিক্রি হয় রোজ কিন্তু এইখানে পাঁচশো টাকা খরচা করে বিনামূল্যে চা বিতরণ করছেন, ভোর হলেই স্বাস্থ্য ভবনের পাশে থাকা কাকিমা মাসিমারা জল খাবার দিয়ে দিচ্ছেন। বরানগরের রঞ্জনদা মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন। এইটাই হলো গণ জাগরণের ছবি।কলকাতা আগে কখনো দেখেনি।
এই আন্দোলনের সমাপ্তি তিনটি উপায় ঘটতে পারে। অর্থাৎ তিনটি সম্ভাবনা আছে। কি কি দেখা যাক।
এক) রাষ্ট্রীয় পুলিশ ও পার্টির গুন্ডাবাহিনী দিয়ে আন্দোলনকে পিষে মেরা ফেলা। যদি এইটি ঘটে সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী ভুল করবেন। কারণ মানুষের ঘৃণা থেকেই যাবে ফলে ২০২৬ সালের নির্বাচনে মানুষ ভোট যুদ্ধে এই সরকারকে পরাজিত করবে।দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার সুযোগ পাবে। ২) যদি সিনিয়র ডাক্তাররা গণ ইস্তফা দেন এবং নারীবাদীদের সক্রিয় সমর্থন থাকে এবং নাগরিকরাও যদি সক্রিয় সমর্থনে থাকেন, তাহলে সরকার ব্যাপক আন্দোলনের ফলে নমনীয় হয়ে বিজেপিকে রুখে দেওয়ার জন্য একটা সমঝোতায় আসবে ডাক্তারদের সাথে। যদি এইটি ঘটে তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যাবে। কিন্তু বৃহত্তর চাপের কাছের নতিস্বীকার করবে শুধু ক্ষণ কালের জন্য। ৩)সম্ভাবনা হলো মেডিক্যাল সিস্টেমের বেসরকারিকরণ। এইটি করতে গেলে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। ২০২৬ সালের নির্বাচনে জিতে আসার পর হাতে সময় থাকবে। এই সময়টা ধরে চলবে স্বাস্থ্যে বেসরকারিকরণের প্রয়াস প্রয়োগ। এখনই শোনা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে মিটিং করার আগ্রহ দেখিয়েছেন।ঘন ঘন প্রতিবাদ বা আন্দোলনকে শেষ করে দেওয়ার জন্য এটাই হল দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। এই পদ্ধতিতে পশ্চিমে অনেক বড় আন্দোলন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। দ্বিতীয় সম্ভাবনা যদি ঘটে তৃতীয় সম্ভাবনা স্বাভাবিক ভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়বে। কারণ শাসকের ক্রোধ ও কর্তৃত্বের লোভ থেকেই যাবে সেই কারণেই এই বিকল্প রাস্তায় হাঁটতে পারে যাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আন্দোলনহীন হয়ে থাকে। এখন দেখা যাক সামনে কি ঘটতে চলেছে।এমনিতেই
আর ১০ বছর পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে হেল্থ কেয়ার সিস্টেম চালানো হবে। আন্দোলন অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে। এতো তো গেল ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের কথা। বর্তমানে দেখা যাক এই আন্দোলনের গতিময়তা কত তীব্র হয়, কত জীবন্ত হয়। সারা ভারত নয় ,সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে কলকাতার দিকে। এই মানবিক গণআন্দোলনের জন্মস্থান হলো কলকাতা। এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্নীতি মুক্ত করতে ডাক্তাররা অনড়। অন্য দিকে শাসকও তার নিজের জায়গায় অনড়। এখন দেখা যাক বাংলার নাগরিক সমাজ ও কলকাতা কি উত্তর দেয়।
সর্বশেষ আন্দোলনের উদ্যোগে, পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আজ ১৪ই সেপ্টেম্বর আবার জুনিয়র ডাক্তাররা রাত দখল করার আবেদন রাখলেন নাগরিকদের কাছে সারা বাংলা জুড়ে। Reclaim the Night, Reclaim the Rights আহ্বানে।
আমি ধন্য ও গর্বিত এইখানে আমার জন্ম বলে। তাই এইখানে জীবনানন্দ দাশের কবিতা আজও আমার কাছে প্রাসঙ্গিক।
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়ি তীরে – এই বাংলায়
মানুষ শঙ্কামুক্ত নয় – সতর্ক বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে, সতর্ক ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে স্বাধীনতা আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।
সতর্কতা বা হাঁস হবো – ছাত্রীর – ঘুঙুর রহিবে লাল পায়, দিনের উত্তর কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে ভেসে। আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালবেসে, জলঙ্গীর ঢেউ এ ভেজা বাংলারি সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।
চতুর্থ পর্বে থাকছে ১২ই সেপ্টেম্বরে সরকার-জুনিয়র ডাক্তার বৈঠক, ফলাফল
দুই পক্ষের বক্তব্য ও কি সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
(ক্রমশঃ)
(www.theoffnews.com agitation Kolkata junior doctors rape)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours