তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, কলকাতা:
১২ই সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে জানালেন খোলা মনে আলোচনা হবে। সব দাবী নিয়েই আলোচনা হবে কিন্তু সাথে বললেন ১৫ জনের একটি প্রতিনিধি দলকে অনুমতি দেওয়া হবে। শেষে বললেন মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকারি উপদেষ্টারা এই আলোচনা সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না।
অর্থাৎ নো live streaming। অন্যদিকে জুনিয়র ডাক্তাররা বললেন ইমেলের মাধ্যমে আমরা ৩০-৩২ জন যাবো। আমরা আমাদের দাবী থেকে এক চুলও সরে আসবো না। মুখ্যমন্ত্রী রাজি হলেন, মিটিংয়ের সময় ঠিক হল সাড়ে পাঁচটা। এ এক ঐতিহাসিক দিন। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা ও চাঞ্চল্য। ডাক্তাররা বেরিয়ে পড়লেন সদলবলে, গাড়ি ছুটছে নবান্নের দিকে। ওই দিকে স্বাস্থ্য ভবনের ধর্নাতে ক্রমাগত স্লোগান চলছে গানের মাধ্যমে, ছড়ার মাধ্যমে।মুখ্যমন্ত্রী সন্ধে পোনে ছটা নাগাদ নবান্নের সভাঘরে এলেন। ডাক্তার বাবুরা পৌঁছালেন প্রায় সাড়ে ছয়টা নাগাদ। আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের বড় কর্তারা ডাক্তারদের মুখোমুখি হয়ে বললেন নিয়ম ও নির্দেশ অনুযায়ী ১৫ জনকে অনুমতি দেওয়া হবে, ৩০ জন নয়।ডাক্তাররা বললেন গেলে ৩০ জনই যাবে। অনেক আলোচনার পর প্রায় ৩২ জনকে অনুমতি দেওয়া হলো। তারপর শাসক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা বললেন সব মানা হবে, আলোচনা হবে আবার স্বচ্ছতার জন্য ভিডিও রেকর্ডিং হবে কিন্তু নো live streaming।
ডাক্তাররা বললেন নবান্নের নীচে দাঁড়িয়ে লম্বা বৈঠকের পর, live streaming must।এতে লুকাবার কিছু নেই তাছাড়া সাধারণ মানুষও সরাসরি দেখতে ও জানতে চায়। শাসকও বললেন না সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। কেন এই কথা?সরকারের যুক্তি হলো এই পাঁচ দফা দাবীর মধ্যে অপরাধ ও অপরাধীর তদন্ত আর উচ্চতর পুলিশ অফিসারদের শাস্তি নিয়ে কথা বলা যাবে না কারণ এই বিষয়গুলি বিচারাধীন অবস্থায় আছে অর্থাৎ সাবজুডিস ম্যাটার। এইগুলি সরাসরি লোক সমক্ষে আলোচনা করলে সুপ্রিমকোর্টের আইনের বিরুদ্ধে যাবে। কিন্তু এই মন্তব্য আইনের ধারা ও তথ্য সমর্থিত নয়। কারণ সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, হাথরস ও উন্নাওর ঘটনা তো বিচারাধীন বিষয় ছিল তবে সেই সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা কেন সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল? ২০১৯ সালে এই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই, মানুষের জানার অধিকার আছে। তবে এই প্রশ্নে আজ কেন নয়। আসলে যে সাবজুডিস বিষয় শাসকের পক্ষে যাবে সেইটা সম্প্রচার হবে আর বিষয় যদি শাসকের বিরুদ্ধে যায় তাহলে সম্প্রচার হবে না। এতো দ্বিচারিতা বললেন বিশেষজ্ঞরা।আসলে তদন্ত সম্পর্কিত আর ওই হত্যাকান্ড নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করলে হাসপাতালের উচ্চপদস্থ অফিসার ও পুলিশের বড় কর্তারা জড়িয়ে পড়বে। আর ওই হত্যা কাণ্ডের সাথে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্নীতিও যুক্ত তাও আড়াল করা যাবে না।৩০ জন ডাক্তারের প্রশ্ন বানে বিদ্ধ হয়ে তিনি উত্তর দিতে অসমর্থ হবেন, শাসক কুলের মুখোশ খুলে যাবে। এর পর বৈঠক গেল ভেস্তে শুধু এক রাশ হতাশা ও অসন্তোষ নিয়ে ডাক্তাররা ফিরে গেলেন আবার ধর্ণা মঞ্চে। চলে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী প্রেস কে বিবৃতি দিলেন- এঁরা বিচার চায় না এঁরা চায় চেয়ার। জনতা ও কোর্টকে উদ্দেশ্য করে বললেন আমাকে ক্ষমা করুন, আমি পারিনি, চিকিৎসার অভাবে প্রায় ২৩ জন মানুষ মারা গেছেন আর ৭ লক্ষ মানুষ পরিষেবা পায়নি। এতে তো মানুষেরই ক্ষতি হচ্ছে, আসলে এঁদের রাজনৈতিক অভিসন্ধি আছে। তবু আমি এঁদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেব না। ক্ষমা করে দিলাম, দরজা খোলা রাখলাম, উনারা চাইলে আবার আলোচনায় বসব। শেষে বললেন আমি মানুষের জন্য পদত্যাগ করতেও রাজি। আমার কাছে জনগণের স্বার্থই মূল কথা।
সত্যি কি মুখ্যমন্ত্রী আবেগের বশে মনের কথা বললেন? না, সমস্ত আলোচনা ও বর্ণনা থেকে
এটা পরিষ্কার হয় যে একটা সুচিন্তিত ক্ষমতার প্রশ্নে একটি পূর্বপরিকল্পিত সাজানো নাটকের স্ক্রিপ পড়ে শোনালেন। এই প্রেস বিবৃতিকে তিনি ডাক্তার আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোর্টের কাছে ক্ষমতার স্বার্থে তথ্য হিসেবে তুলে ধরবেন যাতে রায় শাসকের পক্ষেই যায়। শুধু তাই নয় উনি ডাক্তার সমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে যুদ্ধ বাঁধে তাই মৃত রুগীর ক্ষোভের সলতেতে আগুন ধরবার চেষ্টা করলেন। উত্তরে ডাক্তার সমাজ বললেন কোন ক্ষমতা দখল নয়, আমরা রাজনৈতিক দলের মত মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইনি, কারণ ক্ষমতায় আসা আমাদের দাবী নয়। আমরা সমস্ত সংসদীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিমন্ত্রণ করিনি উল্টে বলেছি আমাদের অবস্থানকে ব্যবহার করে রাজনীতি করবেন না। এই অবস্থান সব রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কি করে মুখ্যমন্ত্রী বললেন আমাদের রাজনৈতিক অভিসন্ধি আছে।
ডাক্তার সমাজ বুঝে ফেলেছিলেন এই প্রশাসনিক দুর্নীতির সাথে বড় চক্র জড়িত আবার ওই দুর্নীতির সাথে ওই ধর্ষিত তরুণী চিকিৎসকের হত্যাকান্ড জড়িত। তাই দুর্নীতিমুক্ত হাসপাতাল তথা প্রশাসনের হাত থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। কেন তদন্তে এত গড়িমসি, এত হোঁচট, কেন তথ্যপ্রমাণ লোপাট, এই সব প্রশ্নের সমাধানের প্রশ্নে বৈঠক চেয়েছিলেন খোলা মনে যেটা বাংলার জনগণ বুঝে ফেললেন সেইটা সরকার তথা শাসককুল বুঝতে পারলেন না বা বুঝতে চাইলেন না। কারণ শাসক সবসময়ই ক্ষমতা লোভী ও কর্তৃত্বের পূজারী। তাই এই পূজায় জনগণ কোন ফুল দেবে না। বরং ক্ষমতার পূজারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না করেই নীরবে শান্তিপূর্ন ভাবে যুদ্ধ করলেন অরাজনৈতিক ভাবে যাতে এই গণআন্দোলন মজবুত থাকে, সমাজ যাতে দুর্নীতি মুক্ত হয়।দেশের কল্যাণের প্রশ্নে এই মুহূর্তে বাংলার নাগরিক সমাজ আজ এসময়ে প্রথম একত্রিত।
এ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। আমরা এখন ত্রিমুখী অবস্থানে আছি একদিকে বৃহত্তর নাগরিক সমাজ উল্টোদিকে শাসক গোষ্ঠী
আবার অন্য দিকে বিচার ব্যবস্থা।
এই ত্রিমুখী অবস্থানের ওপর শুধু আমাদের নয় সারা পৃথিবীর নজর আছে। এর গতি প্রকৃতি কোথায় গিয়ে শেষ হয় তা জানা নেই। এও হতে পারে হয়তো এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ মানুষকে বৃহত্তর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার সময় দিচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দুইটি গান খুব প্রাসঙ্গিক একটি আগুনের পরশমণি ছোয়াও প্রাণে, দুই, অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো। আগুনের পরশমণি কি মানুদের প্রাণে জেগে উঠছে? যদি সত্যি জেগে উঠে তাহলে বুঝতে হবে এইটাই অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাওয়ার প্রকৃত সময়।রাত দখল দিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়তো আগামীতে তাঁর ভোর আসবে। আলো সব সময়ে অন্ধকার থেকে উৎসারিত হয়। এটাই ইতিহাস আমাদের শেখায়।
তবে এটাও ঠিক পরবর্তী পর্যায়ে, লাইভ স্ট্রিমিং ছাড়াই বৈঠকে বসতে রাজি হন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবণে। বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় যথারীতি ১৬ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত। দাবির মান্যতা আংশিক দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তাঁদের দাবিগুলোর বিষয়ের ভিত্তিতে যে মাইনুটস লিপিবদ্ধ হয়েছে উভয়পক্ষের সম্মতিতে তা সুপ্রিম কোর্ট রেকর্ডভুক্ত করেছে পরের দিন। কিছু দাবি বাস্তবায়ন করলেও বহু দাবি অধরাই থেকে গেছে এখনও। তাই কালক্ষেপন না করে জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের আন্দোলন জারি রেখে ফের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসার তোড়জোড় শুরু করেছেন।
এমতাবস্থায় আরজিকর হাসপাতালের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সমস্ত মানুষের বিবেক ও মনোজগত কম্পিত হলেও আংশিক দাবি কার্যকর করা ছাড়া আক্ষরিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলে বা তার নেতৃত্বের মনোজগতে একটুও অপরাধবোধ বা গ্লানি নজরে আসছে না। এতে সাধারণ ভাবে আজকের সব রাজনৈতিক দলের মানসিক জগতের, নৈতিক ও মানবিক বোধের এক চুড়ান্ত অধঃপতনই প্রতিফলিত হয়।
তবে এটা খুবই মনে হচ্ছে যে মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতির চাপে যদিওবা ডাক্তারদের কিছু দাবি এখনকার মতো মেনে নিয়েছেন, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তিনি ডাক্তারদের সমস্ত রকম সংগঠন ভেঙ্গে ফেলতে খুবই উঠে পড়ে লাগবেন ডিভাইড এন্ড রুল কৌশলে। যদি ২০২৬ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ফের ক্ষমতায় আসেন তবেই এইসব প্রত্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা প্রবল।
এই প্রেক্ষাপটে মনে হয় মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান বানানোর জন্য উদ্যোগী শিল্পপতিদের উৎসাহিত করবেন ও ধীরে ধীরে সরকারি হাসপাতালগুলোকে মুখ থুবড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার দিকে নিয়ে যাবেন। যাই হোক তবে এই প্রসঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক নাটক খুব প্রাসঙ্গিক।
শেখর চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ও পরিচালিত আশির দশকের একটি নাটক ছিল বের্টোল্ট ব্রেখটের 'আর্তুরো উই'। নাটকটির সংক্ষিপ্তসার কি অদ্ভুতভাবে আমাদের এখনকার সময়ের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে!
*The Resistible Rise of Arturo Ui* - জার্মান নাট্যকার বের্টোল্ট ব্রেখট রচিত বিশ্ববিখ্যাত নাটক। গুণ্ডা দলের প্রধান উই ছিল প্রবল নিষ্ঠুর ও আত্মপর মানুষ। সে ছিল সবজি বাজারের মাস্তান, তোলাবাজ, নিয়ন্ত্রক। উই এক হাতে বস্তিতে আগুন লাগায়, অন্য হাতে আগুন নেভায় আর ত্রাণসামগ্রী তুলে দিয়ে মহৎ মানুষ হতে চায়। সে তার বিশ্বস্ত বন্ধু রোমাকেও হত্যা করে সন্দেহের বশে। সে বিরোধীপক্ষের নেতাকে হত্যা করে। উই বিরোধীবিহীন অবস্থা সৃষ্টি করে, গুণ্ডা আর নিজস্ব পুলিশ দিয়ে। নির্বাচন করায় ও সাত লক্ষ ভোটে জয়লাভ করে। ব্রেখটের নায়ক উই মধ্যরাতে হাসপাতালে দশজন গুণ্ডা পাঠিয়ে একজন ডাক্তারকে গণধর্ষণ করার পর হত্যা করে, অমানুষিক নির্যাতনে। কারণ, ওই মহিলা ডাক্তার জেনে ফেলেছিলেন হাসপাতালের সরকারি হর্তাকর্তার ব্যাপক দুর্নীতি। মেয়েটি প্রতিবাদ করেছিল।
একজনকে গ্রেফতার করা হলে, আর্তুরো উই বলে, ওই বন্দিকে ফাঁসি দেওয়া হোক - ও বিচার পাওয়ার যোগ্যই নয়! অর্থাৎ, উই জানে, একজন দোষী বেঁচে থাকা মানেই সত্য বেরিয়ে পড়া। যখন নিহত ডাক্তারের পক্ষে জনগণ আন্দোলন শুরু করে তখন গুণ্ডা ও পোষা পুলিশ দিয়ে বিক্ষোভকারী মহিলাদের চুল টেনে, লাঠি দিয়ে মেরে, আন্দোলন রুখে দেওয়ার চেষ্টা করে। যখন আন্দোলন আগুনের
মত সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন গুণ্ডা বাহিনীর সর্দার আর্তুরো উই তিনটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে :
১) হত্যার প্রমাণ লোপাটের জন্য সংস্কারের নামে ঘরে ভাঙাভাঙি শুরু করে।
২) ৫০ জন গুণ্ডা পাঠিয়ে একদিকে হাসপাতালে ভাঙচুর ও প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা এবং অন্যদিকে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করার সব দোষ বিরোধীপক্ষের ঘাড়ে চালায়। এক হাতে সে আগুন লাগায়, আর অন্য হাতে তা নেভায়। হাহাকার করে। বলে : ওরা কত সম্পত্তির ক্ষতি করেছে! ওরা শত্রু!
৩) আন্দোলনরত কিছু ডাক্তারকে শাস্তি দেয় ও হাসপাতালের দোষী শীর্ষকর্তাকে পুরস্কার দেয়।
ব্রেখটের এই নাটক হিটলার-জার্মানির স্বৈরতন্ত্রের দিনলিপি... আর্তুরো উই চিরকাল অপরাধ করে এবং নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। এবং বলে, আমাকে স্পর্শ করার ক্ষমতা কারোর নেই!
সমগ্র পৃথিবীর মানুষ এক সঙ্গে বলে: উই ওয়ান্ট জাস্টিস। কিন্তু গুণ্ডা বাহিনীর ডন আর্তুরো উই বলে: আমি আন্দোলনের মধ্য দিয়েই উঠে এসেছি, কিছু মানুষ আন্দোলন করলেও আমি আন্দোলিত হচ্ছি না।
আরও যা ভয়ংকর, আর্তুরো উই রাজপথে মিছিল করেন ও বলেন - উই ওয়ান্ট জাস্টিস!
সেই আবার মানুষের কণ্ঠরোধের বৃহত্তর চক্রান্ত করে। এবং বলে, আমার কথাই শেষ কথা। চিৎকার করে লাভ নেই। মাত্র একজন ডাক্তার মরেছে তো কি হয়েছে? আমি এর পরিবর্তে ১০০ জন ডাক্তার তৈরি করার ক্ষমতা রাখি। সামান্য একটি আত্মহত্যা নিয়ে বিরোধী পক্ষ অসামান্য হৈচৈ শুরু করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনও দেশে যা ঘটেনি তা যদি ঘটেও থাকে তা নিয়ে এত মাতামাতির কি আছে? আর্তুরো উই, যার থেকে বড় শয়তান এখনও কেউ গড়তে পারেনি - যা পেরেছেন ব্রেটোল্ট ব্রেখট, কারণ তাঁর আন্দোলন ছিল হিটলারের বিরুদ্ধে!
কি অদ্ভুত সমাপতন ১৯৩০ দশকের জার্মানি আর ২০২৪ এর পশ্চিম বাংলায়।
এখন দেখা যাক এই নাগরিক আন্দোলন এত সজীব কেন?
প্রধান কারণ বাংলার নারীরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। যিনি ধর্ষিত ও খুন হয়েছেন তিনি একজন নারী।
তাছাড়া নাগরিকদের মধ্যে বহুদিন ধরে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ছিল শুধু নারীর হত্যা কান্ড ছাড়াও দুর্নীতি একটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে ফলশ্রুতি হিসেবে এই ক্ষোভ দাবানলে পরিণত হয় একটি নারীর ধর্ষণ ও হত্যাকে কেন্দ্র করে। এই রাত দখল আন্দোলনের প্রথম ডাক দেন রিমঝিম সিংহা নামে এক লড়াকু মহিলা তথা ছাত্রী। ইনি সমাজতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন আর নারীবাদী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের সৈনিক। ইনি যে প্রথম দাবিগুলো রাখেন সেইটা নিম্নে দেওয়া হল। রিমঝিম সিংহা বলছেন তাঁর ঘোষণায়, মানুষ যখনই নিজেদের দাবী করে, তখনই তাদের ঝেড়ে ফেলে দেওয়া হয়। বিজেপি/তৃনমূল/সিপিএম/কংগ্রেস হলো রাজনৈতিক দল। আমরা আমাদের বিকল্প রাজনীতির কথা বলছি, মেয়েদের দাবীও একটি রাজনীতি, সেটা বুঝতে শিখুন। যেমন কৃষকরাও বলেছিলেন।
আমরা দাবী করছি, সুপ্রিমকোর্ট হোক, সিবিআই হোক, মুখ্যমন্ত্রী হোক, আমাদের দ্রুত বিচার চাই:
১। রাতে কর্মরত মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত বিশ্রাম কক্ষ/শৌচালয়
২। রাতে সুরক্ষিত গণপরিবহণ ব্যবস্থা শুরু করতে হবে
৩। স্কুল পাঠ্যে লিঙ্গ সাম্যের বিষয় নিয়ে কোর্স চালু করতে হবে
৪। আইসিসি/এলসিসি (কমপ্লেন্ট কমিটি) গুলোকে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বানাতে হবে
৫। ভিক্টিম ব্লেমিংকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
নারীর ক্ষমতায়নের দাবি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেমন লিঙ্গে সাম্যতা। বাকি সব দাবি সরকারের সদিচ্ছা থাকলে পূরণ করা সম্ভব। বাংলার নারীবাদীরা ও তাঁর সাথে গোটা পৃথিবীর নারীবাদী গোষ্ঠীগুলি এই অভয়ার ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে
বিচার চেয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচুরকে চিঠি দিয়ে সঠিক বিচারের আবেদন জানান। যদি এই বিচারের রায় একপেশে হয় তাহলে নারীবাদীরা সারা পৃথিবী জুড়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলবেন। পৃথিবীর প্রায় ২২টি দেশে এই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। নীচে আমি একটি আবেদন পত্র তুলে দিলাম। আরজিকর ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় নাগরিক পিটিশন যৌন সহিংসতা এবং পুলিশি দমন-পীড়ন মোকাবেলায় কার্যকর আইনি নির্দেশনা চেয়েছে।
আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়ে CJI-এর কাছে একটি খোলা চিঠি
প্রতি
ভারতের প্রধান বিচারপতি
বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়
সুপ্রিম কোর্ট, ভারত
বিষয়: আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় নাগরিক পিটিশন যৌন সহিংসতা এবং পুলিশি দমন-পীড়নের জন্য কার্যকর আইনি নির্দেশনা চেয়ে
প্রিয় স্যার,
আমরা, নারীবাদী, ছাত্র, গণসংগঠন এবং সারাদেশের স্বতন্ত্র নাগরিক হিসাবে,
পশ্চিমবঙ্গে রিক্লেইম দ্য নাইট, রিক্লেইম দ্য রাইটস (RTNRTR) আন্দোলনের সাথে আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যার 'সুওমোটো' জানার পরেও হতাশ। সুপ্রিম কোর্ট (এসসি) দ্বারা, মামলাটি স্থগিত রয়েছে। আমরা উল্লেখ করতে চাই যে এসসি সাধারণ প্রতিবাদী মানুষের অভিযোগ, ক্ষোভ এবং ক্ষোভের সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এক মাস পেরিয়ে গেছে কিন্তু সিবিআই এখনও সেই ভয়ঙ্কর ধর্ষণ ও খুনের কোনও আবিষ্কার প্রকাশ করতে পারেনি। শেষ শুনানিতে এসসি পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভাঙ্গনের জন্য দোষী (কপিল সিব্বল দ্বারা সমর্থিত) হিসাবে শুধুমাত্র প্রতিবাদী ডাক্তারদের দিকে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল। যদিও নাগরিক এবং পুরো চিকিৎসক সম্প্রদায়, প্রবীণ ডাক্তার সহ প্রতিবাদী ডাক্তারদের সমর্থনে, যাদের স্বার্থ একটি উন্নততর সহজলভ্য জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছুই নয়, দুর্নীতির কোলাহল এবং হুমকি সংস্কৃতি থেকে মুক্ত, প্রশ্ন উঠেছে কেন মাননীয় CJI হেরে যাচ্ছেন? আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তের দিকে ফোকাস করুন। আমরা চাই SC বিলম্বিত তদন্ত এবং অপরাধীদের কথিত সুরক্ষা, তারপরে নাগরিক বিক্ষোভের উপর হামলার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করুক।
আমরা ক্ষুব্ধ যে রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় সংগঠন এবং ঘৃণার রাজনীতির প্রবক্তাদের দায়মুক্তির সাথে হিংসাত্মক বক্তৃতা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও বিচার বিভাগ এই সহিংসতা কমাতে ব্যর্থ হয়, ন্যায়বিচারের দাবিতে সমাজকর্মীরা জামিন অস্বীকার করে এবং বিনা বিচারে কয়েক দিন কারাগারে আটক থাকে। সহিংসতার সংস্কৃতি এতটাই বিস্তৃত এবং গভীরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে একজন মহিলা প্রকাশ্য দিবালোকে উজ্জানের একটি প্রকাশ্য রাস্তায় যৌন নিপীড়নের শিকার হন, কেউ তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে না।
দায়মুক্তির এই সংস্কৃতি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। *womxn, queer এবং trans* মানুষ যারা সর্বদা যৌন সহিংসতা মুক্ত সমাজের জন্য সংগ্রাম করেছে।
যতক্ষণ না বিচার বিভাগ তার ঘুম থেকে জেগে ওঠে, যৌন সহিংসতা এবং ঘৃণার রাজনীতি রাজত্ব করতে থাকবে এবং সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশগুলিকে টার্গেট করবে।
মাননীয় SC প্রথম দিনেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কোনো বাধা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরা বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করছি যে যদি পুলিশ এবং রাজনৈতিক দলের স্থানীয় গুন্ডাদের দ্বারা প্রতিবাদকারীদের হুমকি দেওয়া হয় এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে মাননীয় SC কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে এই ধরনের নেক্সাস আপনার এখতিয়ারের অধীনে এবং অন্যান্য বহু রাজ্যেও তা সক্রিয়। আমরা অবিলম্বে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে আমাদের বন্ধু, কমরেড সহ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীরা পুলিশ এবং স্থানীয় গুন্ডাদের দ্বারা নির্মম দমন-পীড়নের সম্মুখীন হচ্ছে। এটা পরিহাসের বিষয় যে *womxn, queer এবং trans* লোকেদের দ্বারা যৌন সহিংসতা এবং শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটেছে যারা ১৪ই আগস্ট, ২০২৪ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে স্বাধীনভাবে প্রতিবাদ করছে। বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন রিপোর্ট আসছে – যেখানে স্থানীয় গুন্ডারা টিএমসি এবং বিজেপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের আক্রমণ করে এবং বিক্ষোভের স্থানগুলিকে ব্যাহত করে।
পুলিশ অতিরিক্ত অ্যাকশন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা, বিক্ষোভকারীদের উপর অবৈধ গ্রেপ্তার এবং মিথ্যা মামলাও দায়ের করা উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাতে সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা। ভিন্নমতের অধিকার গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
আমরা আশা করি যে সিজেআই জানেন, আরজি কর হাসপাতালেও প্রশিক্ষণার্থী ডাক্তারের নৃশংস ধর্ষণ এবং হত্যা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এবং জনসাধারণের মধ্যে যৌন সহিংসতা এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিভিন্ন ঘটনার সাথে যুক্ত যা সারাদেশে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের অপরাধের পেছনে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের রাজনৈতিক যোগসাজশ রয়েছে। কর্তৃত্ববাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ, ক্রমবর্ধমান জাতিগত অত্যাচার, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, সিন্ডিকেট র্যাকেট লিঙ্গ-যৌন সহিংসতাকে চালিত করার রাজনৈতিক অবকাঠামো হয়ে উঠেছে। এমনকি এই সমস্ত উত্তাল নাগরিক বিক্ষোভের মধ্যেও, রাজনৈতিক দলগুলি নির্লজ্জভাবে কিভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল বা ধরে রাখতে হবে তা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।
মণিপুরের মতো, বাংলায়ও, গতও মাসে বিজেপি দলের কর্মীরা নন্দীগ্রামে একজন মহিলাকে নগ্ন করে প্যারেড করিয়েছিল যখন বিজেপি লিঙ্গ অধিকারের ক্রুসেডার হিসাবে কাজ করছে, অনুপ্রবেশ করছে এবং প্রতিটি নাগরিকের প্রতিবাদকে সহযোগিতা করছে। উন্নাও এবং কাঠুয়ার ধর্ষকদের জন্য জাতীয় পতাকা উল্লাস ও উত্তোলনের জন্য দায়ী একটি দল; জোরপূর্বক দাহ করা, প্রমাণ ধ্বংস করা এবং হাতরাসে প্রভাবশালী বর্ণের অপরাধীদের রক্ষা করা; বিলকিস বানো ধর্ষকদের পুষ্পস্তবক অর্পণ; এবং ব্রিজভূষণ শরণকে রক্ষা করা এবং ভিনেশ ফোগাট এবং সাক্ষী মল্লিক এবং সমস্ত প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের কণ্ঠকে দমন করা এখন নারীবাদী আন্দোলন এবং জনগণের প্রতিবাদ হাইজ্যাক করার মরিয়া চেষ্টা করছে। আমরা ক্ষমতাসীন জাতীয় দলের নির্বাচনী রাজনীতির অন্তর্নিহিত পিতৃতান্ত্রিক চক্রান্ত, জাতপাত ও সাম্প্রদায়িক নৃশংসতা প্রকাশ করতে বদ্ধপরিকর।
আমরা অপরাজিতা বিলের বিরোধিতা করি যা নাগরিকদের সাথে কোনো পরামর্শ ছাড়াই টিএমসি তৈরি করেছে। নারীবাদীও হিসেবে, আমরা মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী কারণ এটি জনগণের ক্ষোভকে দমন করার জন্য একটি জনপ্রিয় ব্যবস্থা এবং ন্যায়বিচারের জন্য womxn এর যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে না। আমরা ক্ষমতাসীন দলের গাজর এবং লাঠি নীতির নিন্দা করছি, 'রাত্রির সাথী' অ্যাপস, মহিলাদের কাজের সময় ১২ ঘন্টা সীমিত করা, সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে নিরাপদ অঞ্চল চিহ্নিত করার মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে নাগরিকদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছি। সমাজে স্বাধীনভাবে বাঁচতে এবং শ্বাস নিতে, আমরা স্বাধীনতা এবং মর্যাদা চাই, সুরক্ষার নামে আমাদের নিয়ন্ত্রণ / নজরদারি করে এমন ব্যবস্থা নয়।
এমনকি ১৩ বছর পরেও, কর্মক্ষেত্রে পকসো আইনের প্রয়োগ খুবই খারাপ। ভার্মা কমিটির পরে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির নিয়ম এবং পদ্ধতিগুলি জেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান এবং এলসিসিগুলির মধ্যে আইসিসি স্থাপনের দিকে পরিচালিত করেনি। সরকারের কোন তথ্য নেই। আইসিসি এবং এলসিসি সম্পর্কে ওয়েবসাইট। কোনো কোনো জায়গায় স্থাপন করা হলেও সেগুলো হয় অকার্যকর নয়তো প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে। এটা আতঙ্কজনক যে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক শ্রেণি, মুসলমান, নিপীড়িত বর্ণের নারী, কুইয়ার এবং ট্রান্স মানুষের উপর লিঙ্গ-যৌন সহিংসতার প্রতিদিনের ঘটনা অবিরত রয়েছে। আইন ও নীতি প্রণয়নে নারীবাদী সংগঠন, সমষ্টি এবং প্ল্যাটফর্মের অন্তর্ভুক্তি এবং সম্পৃক্ততা কাজের সকল ক্ষেত্রে পকসো আইনকে কার্যকর করার জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন।
আমরা প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা মান - বিশ্রামাগার, টয়লেট, হোস্টেল, পরিবহন, স্যানিটেশন ইত্যাদি পর্যালোচনা করতে এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চিকিৎসা পেশাজীবীদের দুর্বলতা মোকাবেলার জন্য আরজি করে এসসি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স (NTF) সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ উত্থাপন করি।
ক) প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোগত অভাব শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেই উদ্বেগের বিষয় নয়, অন্যান্য সকল শিক্ষা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন।
খ) নিযুক্ত কমিটির অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা থাকতে হবে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুর্নীতির র্যাকেট এবং পদ্ধতিগত ব্যর্থতাগুলি সনাক্ত এবং সমাধান করার জন্য। এই প্রস্তাবিত কমিটির হাই-প্রোফাইল গঠন নিশ্চিত করে না যে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক, অবকাঠামোগত এবং নৈতিক ত্রুটিগুলি কঠোরতা এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতার সাথে তদন্ত করতে হবে।
c) আরজি করে সিআইএসএফ মোতায়েনে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ভয়, ভীতি ও নজরদারি বাড়ায় এবং দ্রুত তদন্তে সাহায্য করে না।
ঐতিহাসিকভাবে প্রত্যক্ষ করা হয়েছে, ধর্ষণ ও হত্যা শাসক শাসনের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক অস্ত্র। এই মামলার অপরাধীরা সক্রিয়ভাবে অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, প্রমাণ নষ্ট করেছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কলেজ প্রশাসন, রাজ্য প্রশাসন থেকে শুরু করে ধর্ষক ও খুনিদের শৃঙ্খল যারা দোষী বলে গণ্য হয়েছে তারাও শাসক দলের পূর্ণ সুরক্ষা পাচ্ছে। যদিও সিবিআই তদন্ত এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র সন্দীপ ঘোষ এবং তার কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেফতার করতে পেরেছে, এটি চলমান নাগরিক বিক্ষোভের চাপে প্রথমে সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।
এই প্রেক্ষাপটে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমরা আপনাদের সামনে নিম্নোক্ত দাবিগুলো পেশ করছি:
১) ৯ আগস্ট ধর্ষক ও খুনি ও সহযোগীদের চিহ্নিতকরণ, গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যতদিন ধর্ষকরা অবাধ বিচরণ করবে এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে অপরাধীদের র্যাকেট অব্যাহত থাকবে ততদিন চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা নিরাপদ নয়।
২) প্রমাণ ধ্বংসের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা।
৩) ধর্ষণ, প্রশিক্ষণার্থী ডাক্তার হত্যা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটি, স্বাস্থ্যে দুর্নীতির র্যাকেট সম্পর্কিত একটি কার্যকর ও অবহিত তথ্য অনুসন্ধানের জন্য সুপ্রিম কোর্টকে অবশ্যই NTF-এর গঠন পরিবর্তন করতে হবে এবং আঞ্চলিক ভ্রাতৃত্বের ডাক্তার, ছাত্র, কর্মী এবং আইনজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেক্টর এনটিএফকে প্রতিবাদী ডাক্তার, ছাত্র ও নারী, নারীবাদী সংগঠন, প্ল্যাটফর্মের সাথে পরামর্শ করতে হবে যারা এই ইস্যুতে কাজ করছে এবং এই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার।
৪) মামলাটি বাংলার দায়রা আদালতে স্থানান্তরিত হলে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো সহ একটি বিশেষ ফাস্ট ট্র্যাক আদালত প্রতিষ্ঠার নির্দেশ।
৫) ভ্রান্ত পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় দলীয় কর্মী এবং যারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর শারীরিক হামলা চালায় এবং বাংলার বিভিন্ন অংশে নাগরিক সমাবেশে বাধা দেয় তাদের শাস্তির জন্য কঠোর নির্দেশ জারি করুন।
৫) কাজের সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষার জন্য লিঙ্গ নিরীক্ষা করার জন্য শুধুমাত্র চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে নয়, দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, এলাকাতে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করুন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পর্যালোচনা কমিটিতে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মী, নারীবাদী, বিচিত্র আন্দোলন এবং সংগঠনের আইনজীবী থাকতে পারে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের কাজে আলাদাভাবে এই ধরনের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।
৭) পকসো আইনের বিধান অনুযায়ী ICCs, LCCs ইনস্টিটিউট করতে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনিক প্রধানদের (DM/ কালেক্টর) শাস্তিমূলক একটি নির্দেশ জারি করুন।
৮) পকসো আইনে বিচ্ছিন্ন এবং ট্রান্স ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করুন এবং পকসো আইনে বিচ্ছিন্ন এবং ট্রান্স ব্যক্তিদের উপর শারীরিক, যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন এবং সমান ব্যবস্থা গ্রহণ করুন ।
৯) সদ্য পাস করা ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) সংশোধন করুন যেখানে যৌন নিপীড়নের এফআইআর নিবন্ধন করতে সময় লাগে এবং কেউ সরকারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারে না।
রাত পুনরুদ্ধার করুন, অধিকার পুনরুদ্ধার করুন,
যতদিন না সঠিক বিচারের রায় আসছে ততদিন আন্দোলন চলবে। আমার লেখাটিও চলবে তাঁর সাথে সাথে। এই গণজাগরণ দীর্ঘজীবী হোক। যেন আমরা মাঝ সমুদ্রের শান্ততা ও স্নিগ্ধতায় পৌঁছাই।
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
এ জীবন পুণ্য করো,
এ জীবন পুণ্য করো,
এ জীবন পুণ্য করো,
এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে।
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
আমার এই দেহখানি তুলে ধরো
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে। (ক্রমশঃ)
(www.theoffnews.com RGKar hospital rape Kolkata junior doctors agitation)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours