প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূর্ব বর্ধমান:
ওরা তো চাটুকার নয়। লেজ নাড়িয়ে যা বলবে তাই মেনে নেবে। ওরা শিক্ষিত ছেলেমেয়ে। ওরা বোঝে মিথ্যা, প্রলোভন, চাতুরী। বন্ধুর হত্যার তদন্ত চেয়ে ওদের আন্দোলনের শুরু। চোখের সামনে দেখেছে পুলিশের সহায়তায় মেডিকেল কলেজের পাঁচ তলা ভেঙে তছনছ করে দিতে। প্রমান লোপাটের চেষ্টা দেখেছে স্বচক্ষে। ওরা দেখেছে, প্রিয় বন্ধুর মা-বাবাকে হেনস্থা করতেও।
আইন বহির্ভুত নিয়মে সন্ধ্যার ঘন অন্ধকারে বন্ধুর পোষ্টমর্টেম থেকে শুরু করে বিধায়ক ও কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে দ্রুততার সাথে বডি পুড়িয়ে দিতে দেখেছে।
ওরা এরপরই ক্ষোভে দুঃখে বারুদে পরিণত হয়েছে। যে বারুদ জলে ভিজলেও নিষ্ক্রিয় হয় না। সব দলের নেতা নেত্রীকে 'গো ব্যাক' স্লোগান দিয়ে খেদিয়ে দিলেও ওরা পারেনি মীনাক্ষী, কলতানদের ধর্ণা স্থান থেকে খেদিয়ে দিতে। কারন কি?
ওরা জানে সেদিন রাতে মীনাক্ষী গাড়িটা না আটকালে পোষ্টমর্টেম টুকুও হতো না। ওরা শাসকের রাগের কারণ জানে। ওরা শিক্ষিত, বুদ্ধিমান।
লক্ষ লক্ষ সাধারণ বঙ্গবাসীকেও ওরা ধর্ণা মঞ্চ থেকে তাড়িয়ে দেয়নি। কারন, ওরা বুঝেছে ওদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সমর্থন রয়েছে। রাত দখলের লড়াইয়ে সাধারণ মানুষ পথে না নামলে ওরা এই আন্দোলনের রসদ পেত না। তাই ওরা সাধারণ মানুষের কথা ভাবছে। আন্দোলনের প্রতিটি মুহূর্তে সাধারণ মানুষের পালস বুঝে পা ফেলছে। সম্মান জানাচ্ছে আমনাগরিকদের।
ওরা বিপ্লবী। সমাজের সাধারণ ছন্দকে ওরা বদলে দিয়েছে এই কয়েকদিনে। যা স্বাধীনতার পর নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। সারা ভারতেও নজির।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘুম ভাঙল নয়, বরং মুখ্যমন্ত্রী চাতুরী করেই ওদের ধর্ণা মঞ্চে এসেছেন তাও ওরা বুঝেছে। বুঝেছে বলেই ওরাও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ডাকা মিটিংয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কমন মিনিমাম সম্মান জানানো উচিত। ওরা শিক্ষিত। ওরা এটুকু বুঝেই গিয়েছিল গতকালকের সভায়। সম্মান জানাতে। আপনি ধর্ণা মঞ্চে গেছেন, আমরাও এলাম আপনার বাড়ি। আমরা বিচার চাই। তথ্য লোপাট করেছে প্রশাসন। বিচার চাই বান্ধবীর উপর নির্মম অত্যাচার ও খুনের।
ওরা জানতো এই সভাও হবে না। কারন উনি বলেছেন সভায় পনেরো জন উপস্থিত থাকতে পারবেন। ওরা উপস্থিত হলেন পঁয়ত্রিশ জন। দাবিতে অনড়। অর্থাৎ স্ট্রিমিং যদি নাও করতে দেন তবে দুপক্ষের ভিডিও রেকর্ডিং করতে হবে। কারন ওঁরা বুঝে ফেলেছিল, নিরাপত্তার অছিলা দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে লাইভ স্ট্রিমিং প্রশাসন করতে দেবে না। ওদের হাতে, ভিডিও রেকর্ডিং তাই থাকা উচিত।
ওরা ঘন্টার পর ঘন্টা জলে ভিজে দাঁড়িয়ে রইলেন দরজার সামনে। তবুও দুপক্ষের ভিডিও রেকর্ডিংয়ে প্রশাসন রাজি হলো না। রাজি হলে যে ভিডিওটি এডিট করে কিছু অংশ বাদ দেওয়া যাবে না। রাজি হলে যে ছাত্রদের হাতেও তথ্য থাকবে। কথার ওলট পালট করা যাবে না।
এরপর বলা হলো যারা মিটিংয়ে আসতে চাও তারা এসো। ডিভাইড এন্ড রুল। অর্থাৎ আন্দোলনকারীদের মধ্যে দ্বিমত সৃষ্টি করার প্রয়াস। তাও বুঝে গেল জুনিয়ার ডাক্তাররা।
জোর হাত করে দাঁড়ালো, বলল আমরা আলোচনা চাই। সকলেই উপস্থিত থাকব আলোচনা হোক। বসতে না দিলে দাঁড়িয়ে থাকব। ওদের ঐক্য ভাঙতে ব্যর্থ হলো সরকার।
একটা প্রবচন আছে, বিপ্লবী হওয়ার প্রথম শর্ত শিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষিত না হলে বিপ্লবী হওয়া যায় না। সে কথারই প্রমান দিল জুনিয়ার ডাক্তাররা। এরই মধ্যে মিটিং বানচাল। কারন দেখানো হলো দু'ঘন্টা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি। আর মিটিং নয়। চা খাও। তোমাদের জামা এনেছি। ভিজে জামা খুলে নতুন জামা পর।
হাস্যকর।
মিটিং না হবার আসল কারন তো অন্য। নিশ্চয় ততক্ষনে খবর পৌঁছে গেছে সিবিআই ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসিকে গ্রেপ্তার করেছে। টেনে হিঁচড়ে নিজেদের কাস্টডিতে নিয়েছে।
(www.theoffnews.com - Kolkata junior doctors agitation rape)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours