তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, কলকাতা: প্রথম পর্বটিতে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ও কিছু ঐতিহাসিক প্রশ্ন আছে। এই পর্বে একটি চিঠি তুলে দেওয়া হলো। সাথে কিছু প্রশ্ন ও সম্ভাবনার কথা উপস্থাপিত করা হলো। বিশ্লেষনের সাথে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে। এই মহা মিছিলে বাম পার্টির বাইরে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তি ও পার্টির অভ্যন্তরের কর্মীরাও হেঁটেছেন পতাকার আড়ালে। নিচুতলার প্রচুর তৃণমূল কর্মীরাও হেঁটেছেন পতাকা না নিয়ে। এখনো সব দলে নিচুতলায় প্রচুর সৎ কর্মী আছে যারা মাননীয়ার প্রতি আস্থা রেখেছিলেন। সেই আস্থা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে ঘটনার প্রবাহক্রমে। তাই তাঁরাও বিকল্প খুঁজছেন। রিকশা চালকদের অভাবনীয় মিছিল, কলকাতার প্রায় সমস্ত বাড়ির কাজের মেয়েদের মিছিল,শহরতলী সহ সমাজের সমস্ত স্তরের আট থেকে আশি নারী সমাজের মিছিল, যৌন কর্মীদের মিছিল, তৃতীয় লিঙ্গের মিছিল, সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব পদযাত্রা। শুধু নতুন সকাল দেখার অপেক্ষায়। প্রচুর শিল্পী, কলা কুশলী পদক ফিরিয়ে প্রতিবাদে নামছেন। তাছাড়া এই বঙ্গে ও বাম গণতান্ত্রিক শক্তির আন্দোলনের একটা একটা দীর্ঘমেয়াদী ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। তাই আন্দোলন অতিরিক্ত মাত্রা পেয়েছে। খুব ইন্টারেস্টিং হলো এর মধ্যে সংসদ জহর সরকারের চিঠি। তৃণমূলের অন্তরস্থল থেকেই আসছে প্রতিবাদ। জহর সরকারের চিঠিতে সব প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু এই জহর সরকার কে? ইনি আমলা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিব, প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও। বাম জমানায় এবং তৃণমূল জমানায় বাংলায় কাজ করেছেন যেমন, তেমনই মনমোহন সিংহের আমলেও সচিব ছিলেন। প্রাক্তন আইএএস জহর সরকার তিন বছর আগে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল তাঁকে সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিল। কিন্তু আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এবার সেই পদ ছাড়লেন জহর। শুধু তাই নয়, বীতশ্রদ্ধ হয়ে রাজনীতি থেকেও সরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। (Jawhar Sircar) আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ। ঘরে-বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়ছে তৃণমূল। সেই আবহেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা এবং রাজনীতি ছাড়ার কথা জানালেন জহর। দুই পাতার চিঠিতে আর জি করের ঘটনার যেমন নিন্দা করেছেন জহর, তেমনই যাঁর হাত ধরে রাজনীতিতে আসা, সেই মমতার ভূমিকাতেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। আগের সেই মমতাকে তিনি দেখতে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন জহর। মমতাকে চিঠিতে ঠিক যা লিখেছেন পড়ুন; 'রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের সমস্যাগুলি সংসদে তুলে ধরার সুযোগ দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ আপনার কাছে। আপনাকে জানাচ্ছি যে, সংসদীয় পদ এবং রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি'। 'আপনার জন্যই দেশের রাজনৈতিক ক্রিয়াকর্মকে একেবারে উচ্চস্তর থেকে বোঝার সুযোগ হয়েছে গত তিন বছরে। কিছু পাওয়ার জন্য বা দলে পদ পাওয়ার জন্য রাজনীতিতে আসিনি আমি। রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা থাকলে ৬৯/৭০ বছর বয়সে কেউ রাজনীতিতে আসে না। দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় যোগদান ছাড়া সাংসদ হওয়ার লক্ষ্য ছিল একটিই, বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ববাদী, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতায় লড়াই চালিয়ে যাওয়া। কর্তৃত্ববাদী, বিভাজনকারী, বৈষম্যকামী এবং যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সেই কাজ যে কিছুটা করতে পেরেছি, সংসদ টিভি এবং ইউটিউবে তার প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু যোগদানের একবছর পর, ২০২২ সালে টিভির পর্দায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার প্রমাণ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাই। প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছিলাম যে, সরকার এবং দলকে দুর্নীতি সামলাতে হবে। তাতে দলের সিনিয়র নেতারা হেনস্থা করেছিলেন আমাকে। সেই সময় পদত্যাগ করিনি, কারণ আশা ছিল, আপনি কাটমানি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচার করবেন, যা একবছর আগে শুরু করেছিলেন। প্রত্যেকে জানেন, কোনও দলই দুর্নীতিমুক্ত নয়। শুভাকাঙ্খীরা আমাকে বোঝান, সাংসদ পদে থেকে যেতে, যাতে গণতন্ত্র এবং নাগরিক স্বাধীনতা বিরোধী কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া যায়। সংসদে আমি আমার কাজ করেছি। কিন্তু দুর্নীতি এবং দলের ক্ষমতাশালীদের প্রতি রাজ্য সরকারের যে উদাসীন আচরণ, তাতে মোহভঙ্গ হয়েছে আমার। আপনি জানেন, আমিই একমাত্র অফিসার, যাকে পূর্বতন সরকার সল্টলেক বা অন্য কোথাও কোনও জমি দেয়নি। কারণ আমি তাদেরও সমালোচনা করেছিলাম। কলকাতার মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি। গণ পরিবহণে দমবন্ধ অবস্থায় যাতায়াত করেছি, বাসের পাদানিতে ঝুলে গিয়েছি। তাই ৪১ বছর আইএএস থাকার পর মধ্যবিত্ত, ছোট ফ্ল্যাটে অস্বস্তি ছাড়াই বাঁচতে পারি, যা বস্তির ঠিক পাশেই। ন'বছর পুরনো সাধারণ গাড়ি চালাই। কিন্তু অবাক হয়ে যাই, পঞ্চায়েত এবং পুরসভার নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের বিপুল সম্পত্তির মালিক হতে দেখে, দামি গাড়ি চড়তে দেখে। শুধু আমিই আহত হই না, বাংলার মানুষজনও আহত। এটাও সত্য যে, অন্য দল এবং অন্য রাজ্যের নেতারাও প্রচুর সম্পত্তি করেছেন। কিন্তু বাংলা এই বেহিসেবি দুর্নীতি এবং কর্তৃত্বপূর্ণ আচরণ মেনে নিতে পারছে না। আমি জানি, বর্তমানের কেন্দ্রীয় সরকার ধনকুবেরদের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, যাদের তারা নিজেরাই আরও সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে। একটি দিনও কাটে না, যখন আমি তাদের নোংরা, পুঁজিবাদী নীতির সমালোচনা করি না। কিন্তু কিছু জিনিস একেবারেই মেনে নিতে পারি না আমি, যেমন, দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার (বা চিকিৎসক), যাঁরা সেরা পদ পেয়ে যান, ভাল পোস্টিং পেয়ে যান। বিশ্বাস করুন, বর্তমানে মানুষের মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভ দানা বেধেছে, তা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রশ্রয় দেওয়ার জন্যই। এত বছরে সরকারের বিরুদ্ধে এত অনাস্থা, এত ক্ষোভ দেখিনি আমি, সে সরকার ঠিক হোক বা ভুল। আর জি করের মর্মান্তিক ঘটনার পর একমাস ধৈর্য ধরেছিলাম। আশা ছিল, প্রতিবাদী জুনিয়র চিকিৎসকদের নিয়ে বিষয়টিতে আপনি সরাসরি হস্তক্ষেপ করবেন, সেই পুরনো দিনের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো। এখনও পর্যন্ত তা হয়নি। এখনও পর্যন্ত সরকার যে পদক্ষেপ করেছে, তা অতি সামান্য এবং অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের ঘুঘুর বাসা যদি আগে ভেঙে দেওয়া হতো, দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হতো, এই লজ্জাজনক ঘটনার পরই যদি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে পরিস্থিতি হয়ত স্বাভাবিক হয়ে যেত। আমার মনে হয়, মূলস্রোতের যে আন্দোলন হচ্ছে, তা অরাজনৈতিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত। একে প্রতিহত করা সঠিক নয়, রাজনৈতিক বলে দাগিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। অবশ্যই বিরোধী দলগুলি ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে। কিন্তু যুবসমাজ এবং সাধারণ মানুষ, যাঁরা রাস্তায় রোজ হাজির হচ্ছেন, তাঁরা রাজনীতি করছেন না। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখতে হবে, অভয়ার জন্য এই আন্দোলন রাজ্য সরকার, দলের বিরুদ্ধে। অবিলম্বে ভুল শুধরে নিতে হবে, নইলে রাজ্য দখল করবে সাম্প্রদায়িক শক্তি। এসব লিখে বলতে হল, কারণ কয়েক মাস আপনার সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলার সুযোগ হয়নি। আবারও আপনাকে ধন্যবাদ জানাই তিন বছর রাজ্যের সমস্যা সংসদে তুলে ধরার সুযোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি আর সাংসদ থাকতে চাই না। দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা এবং কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে আমার লড়াই কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির বিরুদ্ধেও। এর সঙ্গে আপস করতে পারব না আমি। শীঘ্রই দিল্লি যাব, রাজ্যসভার চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দেব। রাজনীতি থেকে সরে আসব পুরোপুরি। দয়া করে কিছু করুন রাজ্যকে বাঁচাতে। শুভ কামনা রইল'। (সূত্র আনন্দবাজার আর্কাইভ।) এইতো গত ৮ সেপ্টেম্বর সারা পৃথিবী জুড়ে মিছিল। বলা যেতে পারে এই আন্দোলনের এপি সেন্টার হলো যাদবপুর। গান কবিতা ও পথ নাটিকায় কলকাতা থেকে জেলা একযোগে মুখরিত। এই মিছিলে চিকিৎসক, পড়ুয়া ও বঙ্গের নারীরা হাটতে শুরু করেছেন। একটিই প্রশ্নে, আরজিকর কান্ড সাথে পাহাড় প্রমান দুর্নীতি। একটাই আওয়াজ, ন্যায় বিচার চাই। শুধুমাত্র এটাই কাঙ্খিত ও প্রত্যাশিত দাবি। এখন বিচার্য বিষয় হল পার্টি রাজনীতি ছাড়া যদি বিকল্প মঞ্চ গড়ে উঠে সফল ভাবে এটাও গণ আন্দোলনের ইতিহাসেই ক্ষেত্রে একটা গবেষণার বিষয়। নেতৃত্ব সারা রাজ্য জুড়ে কিভাবে সংঘটিত হয় সেটাও দেখার বিষয়। হাজার হাজার মানুষের রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না যখনই, তখনই মানুষের প্রতিবাদ গণবিস্ফোরণে পরিণত হয়। এধরণের ইতিহাসটাই আমাদের শেখায় এমনতর অপ্রত্যাশিত সুদৃঢ় জন আন্দোলনের। তখনই তো আমজনতার দুয়ারের স্লোগান 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' আর নয়, বদলে যায় তা 'উই ডিমান্ড জাস্টিস' গণ পরিভাষায়। জয় গুরু। বিকল্প মঞ্চ গড়ে উঠুক। মানুষের জয় হোক। গণআন্দোলন দীর্ঘজীবী হোক এটাই এপারের বঙ্গ মানুষদের কাঙ্খিত পদচারণা। আর একটি সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের সৎ নিচুতলার কর্মীরা তৃণমূলের নেতৃত্বকে বদলে দিতে পারে। গবেষক কল্যাণ গুহ সঠিক ভাবে বলছেন এই সম্ভাবনার কথা 'front ranking tmc leaders can be hijacked by the grass root lower range of TMC workers।ife it happens then it will be a matter of research but if it fails the regimented hindu fascist communal power will hijack the West Bengal leadership...its a fight against state power in different forms. যেটা চিঠিতে জহর সরকার উল্লেখ না করেও বোঝাতে চেয়েছেন। 'উই শ্যাল ওভার কাম', এটাই এখন মানুষের ভরসা। কিন্তু ভরসা যতটা না নিজের ওপর তাঁর থেকে বেশি ভরসা সুপ্রীম কোর্টের ওপর। রাত দখলের প্রতিবাদে নাগরিকরা বলছেন বিচার যত দেরি হবে আন্দোলন তত তীব্র হবে। এ এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। নজিরবিহীন ছবি। দেখা যাক এই প্রতিবাদের ধারা নদী পেরিয়ে মহাসাগরে পৌঁছায় কিনা অর্থাৎ ভারতবর্ষের সমস্ত রাজ্য ঘুরে ক্ষমতার কেন্দ্রে আঘাত করতে পারে কিনা? যদি সফল হয় তাহলে সমস্ত সমাজ বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। যে রাজনৈতিক মানুষেরা এর থেকে শিক্ষা নেবে তাঁরাই টিকে যাবে আর যাঁরা শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হবে তাঁরা মুছে যাবে। এই আন্দোলন তখন আন্তর্জাতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে দাঁড়াবে। এই আন্দোলনের বর্ষামুখ হলো রাজ্যের শাসক শ্রেণি। নারীবাদীরা যে বিচার চেয়েছেন বা ছিনিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন তা কি রাজ্য সরকার দিতে বাধ্য থাকবে? তা দেখার বিষয়। নারীবাদীরা কাঠামোগত পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন তা কি সংবিধানের আইন বা ধারা দেখিয়ে দমন করতে পারবেন? কারণ এই বঙ্গের আর্থ প্রশাসনিক কাঠামো সাংবিধানিক ভাবে ভারতের কেন্দ্রীয় কাঠামোর সাথে যুক্ত। তাই কাঠামোর বিরুদ্ধে লড়াই মানে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই। এই কঠিন লড়াই কি নারীবাদীরা শেষ পর্যন্ত লড়তে পারবেন রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্মম আঘাত সত্বেও। এটাই দেখার বিষয়। নারীবাদীদের লড়াইয়ের সাফল্য নির্ভর করবে তাঁদের নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার ওপর। রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দিতে অনুরোধ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী। আরও বলছেন পুজোর উৎসবে ফিরে আসতে। রাজ্যের উকিল কপিল সিব্বল আংশিক তথ্য দিয়ে বিচারককে বললেন এই আন্দোলনের ফলে সরকারি কাজ স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে, ডাক্তাররাও কাজে আসছেন না হুজুর আপনার অনুরোধ সত্বেও। বিশাল চিৎকার ও আওয়াজের মধ্যে দিয়ে সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতি হিসাবে হাসপাতালে বহু রুগীর মৃত্যু ঘটছে। অন্যদিকে ডাক্তারদের পক্ষের উকিল বললেন, এই তথ্য সম্পূর্ণ সত্য নয় কারণ তথ্য বলছে জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলনে থাকলেও তাঁর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ আবার টেলি মেডিসিনের মাধ্যমে এবং কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে রুগীদের প্রত্যক্ষ পরিষেবা দিচ্ছেন। সুতরাং এই তথ্য দিয়ে সরকার পক্ষের উকিল যে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তা শুধু বিভ্রান্তি কর নয় মানবতা বিরোধীও বটে। যাই হোক এর উত্তরে বঙ্গের নাগরিক ও নারী সমাজ ক্ষুব্ধ এবং ব্যথীত হয়েছেন। অনেকেই নাগরিক ও নারী সমাজের আন্দোলনকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন, কারণ এই আন্দোলনে প্রায় প্রত্যেক জায়গায় জাতীয় পতাকার ছবি দেখা গেছে। তাহলে মানুষ কি তাঁর মূল শিকড়ে ফিরতে চাইছেন? যে এটাই তাঁদের আসল পরিচয়? এটাই প্রশ্ন। তবে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এর উত্তর সামনে আসবে, উত্তর আসবে নাগরিক তথা নারীবাদীদের সাফল্য বা অসাফল্যের মূল কারণ ও চাবি কাঠি কি আসলে? এখন প্রশ্ন হলো এই আন্দোলনের কাঠামো পরিবর্তনের মূল দাবিগুলো কি ছিল? এঁদের মূল আহ্বায়ক কারা? এই প্রশ্ন গুলি আলোচিত হবে এই নিবন্ধের তৃতীয় পর্বে। এই পর্ব শেষ করছি স্বামী শুদ্ধানন্দ এর বক্তব্য দিয়ে। উনি শ্রীরামকৃষ্ণ মিশনের প্রেসিডেন্ট। He gave a remarkable statement on R G Kar Hospital scenario. 'It's a fight between dharma and adharma, fighting between evil and non evil Forces'. নিচে অনুবাদটি রাখলাম। এখন, আমি এই বিষয়টি এখানে উত্থাপন করছি কারণ সম্প্রতি এই রাজ্যে যা ঘটেছে তা নিয়ে এতগুলি ফোন কল এবং হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ খুব বেদনাদায়ক গোটা দেশ কেঁপে উঠেছে এবং আমি বলতে পেরে খুশি যে পুরো দেখুন যে পুরো দেশ কেঁপে উঠেছে যা দেখায়। মানুষের এখনও খুব সংবেদনশীল বিবেক আছে আমরা তা হারাইনি তাহলে এই পরিস্থিতিতে আমরা কি করব? বসে বসে কাঁদার অবস্থা এই নয়। আমাদের শক্তিশালী হতে হবে। সবাইকে শক্ত হতে হবে। এটি ধর্ম এবং অধর্মের মধ্যে লড়াই। আমাদের মনে রাখা উচিত এই মানুষদের তারা শুধুই বোঝা। এরা মানুষ নয়, জীব। এই প্রাণীগুলোকে শাস্ত্র বলে তারা সবাই এই গ্রহের বোঝা। তারা এই গ্রহের বোঝা মানে আপনি বোঝা দিয়ে কি করবেন? তুমি শুধু ফেলে দাও। তারা সমাপ্ত হওয়ার যোগ্য। এই ধরনের জীবন্ত প্রাণীর একমাত্র ভাগ্য এটি। তারা মানুষ নয়। যখন আমাদের মন্দের সাথে লড়াই করতে হবে, সেখানে নীতি এবং অনীতির প্রশ্নই আসে না। এই দুষ্টকারীরা, এই প্রাণীগুলি মানুষের আকারে চলাফেরা করে, তাদের নির্মূল করতে হবে। এটাই হল দর্শন, সবচেয়ে ব্যবহারিক দর্শন। এটা অধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আমাদের উচিত ধর্মের অবস্থান নেওয়া এবং প্রতিটি রূপে অধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। অহিংসা এবং এই সমস্ত কিছুর কথা নেই। এমন অবস্থায় অহিংস নেই। আসুন আমরা এই বিষয়টিকে খুব পরিষ্কার করি। অহিংসা শর্তহীন নয়। অহিংসা শর্তসাপেক্ষ। এটি পরিস্থিতি এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। প্রতিটি পরিস্থিতিতে অহিংসার অনুশীলন করা যায় না। অধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ hingsa পুরোপুরি ন্যায়সঙ্গত। কৃষ্ণ অর্জুনকে এটাই শিখিয়েছিলেন। অহিংসা এবং এই ধরনের সব ফালতু কথা বলবেন না। আপনি একদল দুষ্ট লোকের মুখোমুখি হচ্ছেন, তাঁদের মোকাবিলা দুষ্ট লোকদের করতে হবে তাদের নিজস্ব উপায়ে করতে হবে। Link। https://youtu.be/thz0UB7__nk?feature=shared অর্থাৎ এই আন্দোলন যদি হিংস্রতার রূপ নেয় কোনো সময়ে, সেই লড়াইও ন্যায়সঙ্গত হবে। আমি যখন লেখাটি লিখছি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। কারণ আমি এই আন্দোলনের হৃদয়ের সাথে যুক্ত বলে বোধ করছি। চলতি মাসের ৯ তারিখে এক অদ্ভুত প্রতিবাদ দেখা গেল। অর্থাৎ আন্দোলনকারীরা কপিল সিব্বল এর জবাবে প্রতিবাদী আন্দোলনের ধরণ বদলে দিলেন। সেইদিন দেখা গেল কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় পুরো মৌন অবস্থান, প্রতিবাদীদের মুখে কোনো কথা নেই। শুধু জাতীয় পতাকা লক্ষ করে মানববন্ধন তৈরি করা ও রাস্তার ধারে বহু জায়গায় বহু মানুষের মৌনতা লক্ষণীয়। প্রতিবাদের ভাষা মৌনতা, আবার আধ্যাত্মিকতার ভিত্তি হলো মৌনতা। মিলে মিশে একাকার, শুধু স্লোগানে নয় মানবতার প্রকাশ এক ভিন্ন উচ্চ মাত্রা পেল। এ এক ঐতিহাসিক অর্থপূর্ণ বদল। কেন? এ এক গভীর প্রশ্ন। ওই মিছিলের পোস্টারে লেখা আছে ৯৯৯ - এর মানে কি? প্রথম ৯ টি হলো ৯ই আগস্টের রাত, তারপর ৯ মানে ৯ মিনিট মৌনতা আর শেষ ৯ হলো আর নয় আর নয়। এই ঘটনা ভাবা যায়? কল্পনা করা কি সম্ভব এই প্রকাশের অতল কোথায়? এই ৯ মিনিট কলকাতার নাগরিকেরা পালন করলেন বিভিন্ন জায়গায়। যানবাহনের চালকরা গাড়ি স্তব্ধ করে দিয়ে এই মৌন প্রতিবাদের শরিক হলেন। যা অবিস্মরণীয় ও নজির বিহীন। তাই সংবিধান ব্যবহার করে সরকারের বিরোধিতা যত বাড়ছে ও বাড়বে আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ ও বদলে যাচ্ছে ও বদলে যাবে। পুজো কমিটিগুলি দুই ভাবে বিভক্ত হতে চলেছে। প্রচুর পুজো কমিটি অনুদান ফেরাচ্ছেন। বঙ্গের ১৩৫টি পুজো কমিটিকে অনুদান দিয়েছেন এই শাসক। তার মধ্যে প্রায় ৩৫টি পুজো কমিটি অনুদান ফেরত দিয়েছেন। সংখ্যাটি হয়তো আরও বাড়বে।পুজো কমিটির ব্যবস্থাপনায় থাকা নারীরা বলছেন, এই শোকস্তব্ধ আবহে কি করে বরণ করবো উৎসবকে? জাকজমক পূর্নভাবে মাকে? মা তো আনন্দ দেওয়ার জন্য আসেন। মায়ের চোখে যদি জল থাকে, আর্তনাদ থাকে, হাহাকার থাকে, কি করে আনন্দ অনুষ্ঠান করে এই বরণ হবে? এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড মায়ের সপক্ষে নয়। এই আন্দোলন ও প্রতিবাদ তো জীবন্ত দুর্গাদের পদচারনা। পুজো হবে কিন্তু জাঁকজমক না করে।ভাবা যায়? কতটা বুকের যন্ত্রনা থাকলে এই বক্তব্য রাখা যায়? এ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ যা আগে কখনো এই বাংলায় ঘটেনি। এও এক স্বমহিমায় নারীদের অনুভবের ইতিহাস যা তাঁদের প্রকাশ ভঙ্গিতে প্রতিফলিত হয়েছে। অবশ্যই ঐতিহাসিক স্তরে গবেষণার বিষয় এবং যা সরকার তথা শাসক শ্রেণি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। সময় বদলে যাচ্ছে ইতিহাস ও বদলে যাবে, আগামীতে চোখের জল দিয়ে লেখা হবে অন্য ইতিহাস। এই ইতিহাসের সাক্ষী থাকবে বাংলার নাগরিক ও নারী সমাজ, শেষ বিচারে ইতিহাসের চালিকাশক্তি হবে বাংলার মা বোনেরা ও দিগন্ত বিস্তৃত নাগরিক মনন। Salute to the citizens of Bengal. মনে হচ্ছে সবাই যেন এক অন্য অকাল বোধনের অপেক্ষায়। (ক্রমশঃ) (www.theoffnews.com agitation Kolkata we want justice)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours