পি আর প্ল্যাসিড, প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক, জাপান;
কিছু মানুষের পাষণ্ডতা পশুকেও হার মানায়। এটাই আজকের দুনিয়ায় বাস্তব চালচিত্র। আমাদের চারপাশে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে কতো ঘটনাই না ঘটে চলেছে। সুখ - দুঃখ বা আনন্দের, মর্মান্তিক, হৃদয় বিদারক যে শব্দ দিয়েই ঘটনার বিষয় বোঝানোর চেষ্টা করি না কেন, এসবের কোনওটাই কিন্তু আমরা বেশীদিন মনে রাখি না। মনে না রাখাটাই যেন এখন বড় ঘটনা।
কোনও কারণে কোনভাবে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার কটার বিষয়েই বা আমরা জানি বা এ'সম্পর্কে খবরাখবর রাখি? বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে সামাজিক সাইটে চোখ রাখলে যে দু একটা বিষয় নজর কাড়ে তা নিয়ে দুচার দিন কথা বলি বা ভাবী। ঘটনার বিষয়বস্তু ভাইরাল হলে একটু বেশী জানার আগ্রহ হয়, এটাও বাস্তব।
তেমনি একটি ঘটনার সংবাদ এখন নেট দুনিয়ায় বেশ আলোড়ন তুলেছে। ঘটনা ঘটেছে আমেরিকার কোনও এক শহরে। এক মা তার ষোল মাসের সন্তানকে ঘরে তালা দিয়ে একা বন্ধ করে রেখে বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে দশ দিনের জন্য চলে যায় সাগর বিলাসে, জীবনকে উপভোগ করতে। ফিরে এসে সন্তানকে মৃত অবস্থায় পায়। বিষয়টি এরই মধ্যে আপনাদের জানা হয়েছে মনে করে বিস্তারিত আর এখানে উল্লেখ করিনি।
কি সাংঘাতিক ঘটনা? কি মর্মান্তিক - হৃদয় বিদারক। পুরো বিষয় শুনলে চোখের পানি সংবরণ করা কোনও মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। যদি সে মানবিক হয়ে থাকে। এনিয়ে যারা মুখ খুলেছেন বা কলম ধরেছেন এদের সবার বক্তব্য বা লেখার শেষে একটি কথাই উল্লেখ করছেন এভাবে যে, সন্তান জন্ম দিলেই মা হয় না। কতো কষ্টের অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাদের এই ছোট একটি বাক্যর মধ্য দিয়ে, তা সহজেই অনুমেয়।
আমি মনে করি জন্ম দিলেই মা হয়। তবে মায়ের কার্যকলাপে প্রমাণিত হয় সে যে কেমন মা। পৃথিবীর সকল দেশের মানুষই এক। আমি এই মানুষকে তার আচরণ দিয়ে ভাগ করি এভাবে যে, "মানুষ" আর "অমানুষ"। আমেরিকার নাগরিক অনেকেই। তারা দেখতে মানুষের মতো হলেই যে ফেরেস্তা হয়ে যাবে এমনটা কিন্তু নয়। তবে এটাও সত্য যে, আমেরিকা বলে কথা। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের মুরুব্বি হিসাবে কথিত এই আমেরিকার মানুষদের কাছে অন্য সকল দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা থাকে। তাদের কাছে জানবে, শিখবে, ফলো করবে এমনটাই প্রত্যাশা। এর ব্যতিক্রম হলেই মানুষ তাদের ছিঃ ছিঃ করবে এটা খুবই স্বাভাবিক। আর সেই দেশে যদি এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে তাহলে সত্যিই তা দুঃখজনক।
আমদের দেশেও এমন কিছু ঘটনা ঘটতে শোনা যায় মাঝে মধ্যে। হতে পারে বিষয় ভিন্ন। তবে মায়ের হাতে সন্তান খুন বা অপহৃত বা এমন কোনও ঘটনা যে ঘটে না, তেমনটা নয়। এমনকি বিশ্বের উন্নত দেশ জাপানেও মাঝে মধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটতে শোনা যায় যা শুনলে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না।
গত কয়েকবছর আগে এক মা তার নবজাতক শিশুকে স্টেশনে কয়েন বক্সে রেখে স্বামী সহ ঘুরতে গিয়েছিল। দিন শেষে ফিরে এসে সন্তানকে সেখানে মৃত অবস্থায় পায়। এমন আরও বেশ কিছু ঘটনার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এর কোনোটাই ক্ষমার যোগ্য নয়। তবে আমার কাছে সম্প্রতি আমেরিকায় ঘটে যাওয়া নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া এই ঘটনার পরবর্তী আসামীর মায়ের শাস্তি ও বিচার কাজের ধরন দেখে মনে হলো এটা অনেকের বেলায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বর্তমান ইন্টারনেট ব্যবস্থা এতোটাই উন্নত এবং জনপ্রিয় হয়েছে যে, প্রয়োজন অপ্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। নেটের দৌলতে জানা অজানা অনেক কিছু সহজে চোখের সামনে পেয়ে যায়। অনেক দুর্লভ বিষয় সম্পর্কে জানতে পাই। এর মধ্যে প্রকৃতির জীব জানোয়ার সম্পর্কে বলতে পারি, এরা আমাদের মতো কথা বলতে না পারলেও এদের সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে বংশ বৃদ্ধি প্রক্রিয়াও। এদের বংশ বৃদ্ধি করা মা জাতি তাদের সন্তানদের জন্য কতোটা কি করে তা না দেখলে বুঝতে পারতাম না। কখনও কখনও মনে হয় পশু হলে কি হবে? এরা আমাদের মানবজাতির মায়েদের থেকে কোনও অংশে কম নয়। সেখানে আমেরিকার সেই মহিলা পশুদেরকেও হার মানিয়েছে।
আমি ধিক্কার জানাই মা জাতির কলঙ্ক সেই মাকে। মানবজাতিকে বিতর্কিত করতে এমন মায়ের জন্ম যেন না হয়। প্রার্থনা করি কষ্টে না খেয়ে মারা যাওয়া শিশুটির জন্য, ওর আত্মা যেন স্বর্গ লাভ করে।
(www.theoffnews.com - Japan America mother)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours