সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ: যাবো যাবো বসন্তের পড়ন্ত বিকেলের সূর্যাস্ত উপভোগ করছিলেন। বলতে গেলে একাকীই।ক্ষণিকের আবেগে মোবাইলে ক্যামেরা বন্দীও করলেন সেই অনিন্দ্য প্রাকৃতিক দৃশ্য। কলকাতার এক বহুতলের ঝাঁ চকচকে বহুতলের ব্যালকনি থেকে। চোস্ত হিন্দি বলতে পারেন। বাংলাও অল্পস্বল্প বোঝেন না এমনটা নয়। রবিকবির ভাষায় উনার পরিচয় জানতে গেলে অবশ্যই বলতে হয়, তুমি বিদেশিনী গো সুমন্দ ভাষিণী দূর দ্বীপবাসিনী। তাঁর নাম হার এক্সিলেন্সি ডানিয়েলা মারিয়ানা সেজোনভ তানে। তিনি ভারত সহ বাংলাদেশ ও নেপালে অবস্থিত রোমানিয়া দূতাবাসের বর্তমান রাষ্ট্রদূত। ভারতে অবস্থান কালে এই দেশের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি যখন আত্মস্থ করেছেন তখনই তিনি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন, ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম। হয়তো তাই তীব্র ব্যস্ততার এক চিলতে অবসরে ভারত আকাশের সূর্যকে এভাবেই তাড়িয়ে তাড়িয়ে হৃদয় তন্ত্রীতে গেঁথে রাখছিলেন। এই রোমানিয়ান নন্দিনী বিলক্ষণ জানেন, বিশ্ব জুড়ে যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ঘোড়দৌড় চলছে ডিজিটাল ফরম্যাটে তাতে ভারত নামক এই সূর্যের দেশ হলো হালফিল বাজির কালো অশ্ব। এহেন মুহূর্তে ভারতীয় তেজি বুলের অবস্থান যে পৃথিবীতে পঞ্চম। চতুর্থ স্থান কব্জাগত করার জন্য ইতিমধ্যেই জাপানের ঘাড়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে বিশ্বের এই সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশটি। আজকের ভারত যে আর্থিক বুনিয়াদে এক অতি শক্তিশালী বাণিজ্যিক পীঠস্থান তা উপলদ্ধি করেই বুখারেস্টের থিং ট্যাঙ্কের কর্তারা হয়তো এই দেশকে একটু বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে বসেছেন দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্রের নিরিখে। হয়তো তাই গত বুধবার রোমানিয়ার এই রাষ্ট্রদূত ভারত সূর্যকে লেন্সে সেফ করার ঠিক প্রাক মুহূর্তে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় পুঁজিপতিদের সঙ্গে। মহানগরের ভারত চেম্বার অফ কমার্সের নিজস্ব ভবণে। ওই বৈঠকের উপলক্ষ্য ছিল একটা আলোচনাচক্র। 'আর্থিক সহযোগিতা প্রেক্ষাপটে ভারত ও রোমানিয়ার বর্তমান এবং ভবিষ্যতের অবস্থান' শীর্ষকে। তবে আলোচনার উপলক্ষ্যের মঞ্চে অর্জুনের পাখির চোখের লক্ষ্য ছিল অমৃত মন্থন সম 'ভারতীয় বাণিজ্য'। যা অবশ্য খুল্লামখুল্লা স্বীকার করে নিয়েছেন ডানিয়েলা মারিয়ানা সেজোনভ তানে। বৈঠকে উপস্থিত ভারতীয় পুঁজিপতিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "ভারতের সঙ্গে রোমানিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত করতে আন্তরিক ভাবে আমরা স্বচেষ্ট। আপনাদের আমাদের দেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভু্ক্ত এই দেশে আপনারা বিনিয়োগ করুন স্বচ্ছন্দে। আমরা আপনাদের সবরকমের সহায়তা করতে প্রস্তুত। রোমানিয়াতে অত্যাধুনিক বাণিজ্য সহায়ক পরিকাঠামো রয়েছে। বিভিন্ন খাতে সরকারি শুল্ক হ্রাসের ব্যবস্থাও আছে। আপনারা রোমানিয়াতে আসুন। আপনাদের পুঁজি আমাদের দেশে নিবেশ করুন শিল্প গঠনের জন্য। আপনাদের উৎপাদিত পন্য বিপননের জন্য বিরাট বাজার রয়েছে গোটা রোমানিয়া সহ সমগ্র ইউরোপ জুড়ে। বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে ইউরো নির্বিশেষে সবাই আয় করুন। এছাড়া ভারতের সঙ্গে রোমানিয়ার আমদানি ও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দুই দেশ একযোগে কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস রাখি।" এই বক্তব্যকে সমর্থন করে ভারতের রোমানিয়া দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক মন্ত্রকের দায়িত্ব প্রাপ্ত সেই দেশের মন্ত্রী ইয়োনুত ভিজিরু ওই আলোচনাচক্রে মন্তব্য করেন, "ভারতের সঙ্গে রোমানিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক ৭৫ বছরের। ২০০৪ সালে নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্জানাইজেনের (ন্যাটো) অন্তর্ভুক্ত হলেও এবং ২০০৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েও রোমানিয়া ভারতের বন্ধুত্বকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়ে এসেছে বরাবর। রোমানিয়া আজ আবহাওয়া হাব হিসেবে বিশ্বে সুপরিচিত। এখানকার গড় তাপমাত্রা ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইউরোপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাইসাইকেল উৎপাদন করেছে আমাদের দেশ ২০২২ সালে সংখ্যার নিরিখে ২.৬ মিলিয়ন তৈরি করে। ১৯ মিলিয়ন নাগরিকের এই ইউরোপীয় দেশে ২০২০ সালে কোভিডের মন্দায় আমাদের জিডিপির পতন ঘটেছিল ৩.৭%। ঠিক সেখান থেকে আমরা ২০২১ সালেই উল্লেখযোগ্য ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম ৫.৮% জিডিপির উচ্চমাত্রায়। রোমানিয়াতে ৮,৭০,০০০ টি কোম্পানি রয়েছে বর্তমানে যার মধ্যে বৈদেশিক কোম্পানির সংখ্যাই ২,৪৪,০০০ টি। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আওতাভুক্ত দেশগুলোর বাইরে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ২০২৩ সালে রপ্তানি ব্যবসা করেছিলাম ১৪,৯৮৪.৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের। একই বছরে আমদানি ব্যবসা করেছি ১৮,৬৭৬.৬ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। সুতরাং রোমানিয়ায় মাটিতেও ভারতীয় পুঁজিবাজার যে অত্যন্ত সুরক্ষিত তা হলফ করেই বলা যায়। ভারতীয়রা আমাদের দেশে বাণিজ্যিক লক্ষ্যে এগিয়ে আসুন। রোমানিয়া আপনাদের স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছে।" (www.theoffnews.com - Romania)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours