সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
এ যেন মরা গাঙে ভরা জোয়ার।
আসলে অবাক হতে হয় একটি চমকে যাওয়া তথ্য দেখে। এটাই যেন একটা মিথ। আমাদের রাজ্য যেন শিল্পের মরুভূমি। তবুও সরকারি নথি বলছে, বাংলায় মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের সংখ্যাটা নাকি ৯০ লক্ষ।
আরও অবাক হতে হয়, যখন এহেন ৯০ লক্ষ শিল্পের পরিসংখ্যান জানান দেয়, উত্তরপ্রদেশের পর মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের নিরিখে সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এখানেই শেষ নয়। অবাক হওয়ার পালা আরও রয়েছে। কলকাতা চ্যাপ্টারের মিনিস্ট্রি অফ মাইক্রো, স্মল এন্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস (এমএসএমই) এর জয়েন্ট ডিরেক্টর প্রদীপ কুমার দাস ব্যক্ত করলেন এক বিস্ফোরক শিল্প-আদমসুমারি। তিনি বলেন, "রাজ্যের দেওয়া তথ্য অনুসারে এই ৯০ লক্ষ শিল্পের মধ্যে এমএসএমই'র নথিভুক্তের সংখ্যা মাত্র ১০ লক্ষ। অর্থাৎ বাকি ৮০ লক্ষ রাজ্যের শিল্পের কোনও তথ্য বা হদিশ কেন্দ্রীয় সরকারের এমএসএমই দফতরের কাছে নেই।" এই অদ্ভুতুরে ৮০ লক্ষ বাংলার শিল্পের শিল্পকর্তাদের প্রতি তাঁর আহ্বান, এগিয়ে আসুন আপনারা। সরলীকৃত নিয়ম মেনে আপনারা এমএসএমই'এর নথিভুক্ত হোন। এমএসএমই'এর তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের বহু সহায়ক স্কিমের উপযোগী হন। আমরা আপনাদের সহায়তায় প্রস্তুত।"
এই অবাক করার সুলুক সন্ধান পাওয়া গেল একটি মনোজ্ঞ আলোচনা চক্রে। মহানগরের হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশানালে। গত ৪ এপ্রিল ২৪ তারিখের এই পরতে পরতে বিস্ময় খচিত আলোচনাচক্রের আয়োজক ছিল কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি বা সিআইআই।
সেখানেই বক্তব্যের মাঝে প্রদীপ কুমার দাস আরও বলেন, "উদ্যোগপতিদের আবেদন করবো, এখনও যারা উদ্যোম রেজিস্ট্রেশন করাননি তাঁরা উদ্যোম রেজিস্ট্রেশন শীঘ্রই করিয়ে নিন। দেখবেন আশাতীত সরকারি সহায়তা ও প্রচুর পরিমাণে আর্থিক ছাড়ের সুযোগ পাবেন। এর ফলে আপনাদের উৎপাদিত পন্যে জন্য ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে আপনার বিক্রয়মূল্য সুবিধাজনক অবস্থান লাভ করবে অচিরেই। এছাড়া আমাদের কলকাতার দফতরে এক অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি গঠন করা হয়েছে। যেখানে পানীয় জল ও ফলজাত দ্রব্য ছাড়া সমস্ত রকমের পণ্যের মান অত্যন্ত সুচারু রূপে নির্ধারণ করা হয়। আর এখানকার শংসাপত্র দেশে ও বিদেশের যাবতীয় রপ্তানি ও আমদানি ব্যবসায় এক শক্তিশালী মান্যতার ভূমিকা পালন করে।"
আয়োজক সংস্থার এমএসএমই কাউন্সিলের সর্বভারতীয় কো-চেয়ারম্যান এম পন্নুস্বামী আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, "এই রাজ্য এরকম অনেক শিল্পোদ্যোগীই আছে যাঁরা তাঁদের মাঝারি বা ক্ষুদ্র শিল্প গঠন করে বা করতে গিয়ে বহুবিধ জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমার অনুরোধ আপনারা যোগাযোগ করুন সিআইআইয়ের এমএসএমই সাবকমিটির পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান রবি টোডির সঙ্গে। আশা করবো আপনাদের সমস্যা দূরীকরণের সঠিক দিশা উনি দেখাবেন।" এই বক্তব্যের সঙ্গে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে রবি টোডি উল্লেখ করেন, "দেশের পূর্বাঞ্চলের মাঝারি ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বলবো, শিল্প গঠন বা পরিচালনা করতে গিয়ে আপনারা একাধিক লাল ফিতের ফাঁদে পড়েন হামেশাই। আমাদের কাছে আসুন। সিআইআই আপনাদের সমস্যা নিরসনে পাশে আছে ও থাকবে।"
কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ সামাজিক প্রভাব ও অন্তর্নিহিত বিক্রেতা বিকাশ বিভাগের চিফ ম্যানেজার অনুরাগ অগস্তি সিআইআই আয়োজিত এই ফোরামে এসে এক উল্লেখযোগ্য অ্যাপসের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। জেম অ্যাপস (GeM)। এর ওয়েবসাইটটি হল https://gem.gov.in/ । জেম কথাটির অর্থ হলো গভর্নমেন্ট ই- মার্কেটপ্লেস (Government e-Marketplace)। তাঁর মন্তব্য, এই অ্যাপস বা ওয়েবসাইটটি হলো বিনিয়োগকারীদের কাছে এক মনিমানিক্যের ভান্ডারের মতো অফুরন্ত খাজানা। দেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত এটা একটা উন্মুক্ত বাজার। যা ই-পরিষেবার সহজতম আধুনিক বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম। সরকারি যাবতীয় উৎপাদনের বিস্তারিত হাল হকিকত এখান থেকে জানা যেতে পারে। এখান থেকে বাণিজ্য বাস্তবায়িত করতে গেলে উৎপাদকের দফতরে দৌড়ানোর প্রয়োজনের দিন শেষ। নূন্যতম নথিতে ও একদম কম মূল্যে এর নবীকরণ সম্ভব। সবচেয়ে উৎসাহিত করার বিষয় হলো এই অ্যাপসের মাধ্যমে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ খুব সহজেই মিলবে ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে যদি অর্ডার কপি আপনার সঙ্গে থাকে। এমনকি এর সাহায্যে প্রতিটি রাজ্যের সমস্ত জেলা স্তরে প্রত্যেকটা সরকারি নথিভুক্ত উৎপাদিত পণ্যের পুংখানুপুংখ জানতে পারা যাবে এই অ্যাপস থেকে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এমএসএমই'র ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড ট্রাস্টের সিইও সন্দীপ ভার্মা এবার শোনালেন এবার এক করুণ বিস্ময়কর তথ্য। "যেখানে বিশ্বব্যাঙ্ক ভারতের কাছে অনুরোধ করেছে দেশীয় শিল্প বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে ৪৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণপ্রদান করতে, সেখানে একই ক্ষেত্রে আমাদের দেশে এযাবৎ ঋণদান করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ২৯ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং বাণিজীকরণের খাতে ভারতের ঋণদানের পরিসংখ্যান প্রকৃতই প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট পিছিয়ে।" এমন নিরাশার উদ্বেগ শোনা গেল সন্দীপ ভার্মার কন্ঠে। তিনি অবশ্য বলেন, "এই নেতিবাচক পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা বহু স্থানে বহুবার ক্রেডিট ক্যাম্পের আয়োজন করে চলেছি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের অধীনে। আমি মনে করি ঋণ গ্রহণের জন্য স্বচ্ছতা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। এছাড়া ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও স্বক্ষমতার মান উর্ত্তীণ হলে শিল্পোদ্যোগীদের ঋণ পেতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
(www.theoffnews.com - CII)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours