সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

খনার বচন বলে কথা 'মঙ্গলে ঊষা বুধে পা, যথা ইচ্ছা তথা যা'। সেই শুভ বুধবারেই সকাল গড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)'র পশ্চিমবঙ্গ শাখা স্বইচ্ছায় পা রাখলো কলকাতার আভিজাত্য পূর্ণ হোটেল 'দি পার্ক'এ। উদ্দেশ্য যে এক  মনোজ্ঞ আলোচনাচক্র। তবে আলোচনার অভিমুখ ভিন্ন শীর্ষকে গাঁথা। কখনও আলোচনা চলছে সদ্য ঘটে যাওয়া সংস্থার রাজ্য কাউন্সিলের নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে। প্রাতিষ্ঠানিক নানা শিল্পের নিরিখে কৃতিমান একাধিক বাণিজ্য সংস্থাকে দীর্ঘ সময় ধরে পুরস্কার প্রদান পর্বও চললো আয়োজকের তরফে। উপরি পাওনা হিসেবে তিন পর্যায়ে বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মী ইস্যুতে মনোমুগ্ধকর প্যানেল ডিসকাসন বেশ নজর কাড়ে। কখনও আবার রাজ্যে শিল্পের সম্ভাবনা ও পুঁজি নিবেশের পরিবেশ নিয়েও আলোচনা করেন উপস্থিত একাধিক বক্তারা। যদিও একাধিক নির্ধারিত বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আলোচনাচক্রটি ছিল "রাজ্যের উন্নয়ন ভিত্তিক সুনাম, সম্ভবনা, উদ্ভাবন, পরিকাঠামো, পুঁজিনিবেশ ও ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্যের অগ্রগতি ও তার মানচিত্র রূপায়ন।"

এমনই এক আয়োজন বহুল প্ল্যাটফর্মে আয়োজক সংস্থার উল্লেখযোগ্য কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও তত্ত্ব পূর্ণ বক্তব্য রাখেন সুচরিতা বসু, শিব সিদ্ধান্ত নারায়ণ কল, সন্দীপ কুমার প্রমূখ। তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে বলেন, "সমগ্র ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গও আজ আর্থিক ভাবে এগিয়ে চলেছে জেট গতিতে। সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের শোকেস হল এই রাজ্য। জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা এখন যথেষ্টই সদর্থক। পরিকাঠামোগত নির্মাণেও এই রাজ্য বর্তমানে একটা পৃথক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

এমনই এক মনোজ্ঞ আলোচনায় অংশ নেন রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য সহ শিশু এবং নারী উন্নয়ন মন্ত্রী শশী পাঁজা। পশ্চিমবঙ্গের অগ্রগতির প্রশ্নে পরোক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, "এবারের বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশের নিরিখে সামাজিক উন্নয়নের খাতে ২৬,০০০ কোটি টাকা ধার্য করেছে। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের নতুন বাজেটে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে ব্যয় করা হবে ২৬,০০০ কোটি টাকা। সুতরাং এটা সবাইকে মেনে নেওয়ার সময় এসে গেছে যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তদারকিতে আমাদের রাজ্যে সামাজিক উন্নয়নের পটভূমিতে একটা নতুনতর সদর্থক বিপ্লব শুরু হয়েছে।" শশী পাঁজা আরও যোগ করেন, "এই রাজ্যে এখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক, শিশু ও নারী, শিল্প বাণিজ্য এবং সামাজিক উন্নয়নে যথেষ্ট জোর দেওয়া হয়েছে।" তাঁর বক্তব্য, আর্থিক বিকাশের ক্ষেত্রে সমগ্র দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এখন চতুর্থতম আগুয়ান মাইলস্টোন হয়ে উঠেছে। পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে নতুন করে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে জঙ্গলনগরীর। সঙ্গে সেই অঞ্চলে একটি ইস্পাত কারখানা তৈরি করার রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে। সবুজ সাথী প্রকল্পে উদ্দেশ্যে দিদির গ্যারান্টি হিসেবে পশ্চিম মেদিনীপুরে শীঘ্রই নির্মাণ হতে চলেছে সাইকেল প্রস্তুতকারক ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ উৎপাদন ভিত্তিক কারখানা। এছাড়াও তিনি সংযোজন করেন, "লজিস্টিক ক্ষেত্রে রাজ্য এক বিরাট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই খাতে বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে আমরা দেড়শো মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নিতে চলেছি। একইসঙ্গে রাজ্যে সবুজ বাণিজ্য করিডরের সহায়ক হিসেবে সড়ক, আকাশ ও রেল যোগাযোগ আরও উন্নতমানের করার কর্মযজ্ঞ ইতিমধ্যেই চলছে। এমনকি নিরবিচ্ছিন্ন জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করার বিষয়ে আমরা বিনিয়োগকারীদের নিশ্চিত করেছি।"

সিআইআইয়ের মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের শিল্প উন্নয়ণ নিগমের চেয়ারপার্সন কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর রশনী সেন বলেন, "রাজ্যে বিনিয়োগ তরান্বিত করতে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন প্রয়োজন তেমনি দরকার পুঁজিপতিদের জন্য উপযুক্ত সামাজিক পরিবেশ। যেখানে ভয়হীন ও স্বজনপোষণহীন আবহ থাকবে। স্বল্প সময়সীমার মধ্যে নূন্যতম নথির মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগের ছাড়পত্র মঞ্জুর করতে হবে। লজিস্টিক ও এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে অযথা কাঠিন্যের শিথিলতা আবশ্যক।" তিনি জানান যে পশ্চিমবঙ্গে এখন বিনিয়োগ বান্ধব ও শিল্প বান্ধব অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। বর্তমানে সারা রাজ্যে দুশোটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে উঠেছে। একুশটা স্পেশাল ইকোনমিক জোন তৈরি হয়েছে।

(www.theoffnews.com - seminar)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours