রূদ্রাণী মিশ্র, লেখিকা ও কবি, কলকাতা:

কয়েকদিন আগে দেখলাম, বিবাহবিচ্ছেদের আনন্দে একজন মহিলা প্রিওয়েডিং ম‍্যারেজ বা ক‍্যানডিড ছবির মত ডিভোর্সের ছবি তুলেছেন। এ নিয়েও নানাজনে নানা বক্রোক্তি করছেন। কিন্তু কেন? তা আমার মাথায় ঢুকলো না। আমি সবসময় বলেছি। ডিভোর্স ইজ নট এ ব্যাড ওয়ার্ড। তাই ডিভোর্স করা মানে হল, যার সঙ্গে মনের বা মতের  মিল হচ্ছে না, তাকে জীবন থেকে ছেঁটে ফেলে সুন্দর ভাবে বাঁচা, বেস্ট ওয়ে টু লিভ। এই বক্তব্য মানা না মানা আপনার পছন্দ আর আমি এটা বলে আপনাকে উস্কানি দিচ্ছি না, যে আপনি ডিভোর্স করুন। আমি আমার মায়ের একটি কথা আমি মন থেকে মানি।  তা হল 'এ্যালোন ইজ বেটার দ‍্যান নোটোরিয়াস ফ্রেন্ড'।

হ্যাঁ, তবে একথাও সত্যি যে এই সম্পর্কের শুরুতে অনেক টাকা এই বিয়ে নামক অনুষ্ঠানে ইনভেস্ট করা হয়। তাই ডিভোর্স হলে একে তো ইনভেস্টমেন্ট নষ্ট হল। উপরন্তু নানা ঝক্কি ঝামেলাও পোয়াতে হয়। তার উপর সমাজের লোকজনের সমালোচনা তো আছেই। এগুলো আমি অস্বীকার করছি না। কিন্তু জীবনের বাকি পথটা অনেক শান্তির। আবার বলছি এবং মানছি যে 'পথ' মসৃণ নয়। তবে ওই ভিক্ষা চাই না কুকুর বাঁধতে বলার মত একটা স্বগোক্তি মন থেকে বেরিয়ে আসে। এক্ষেত্রে আরেকটি কথা বলার ছিল, তা হল, যে এই ডিভোর্স শব্দটি সবার জন্য কিন্তু সমানভাবে প্রযোজ্য। যদি একজন পুরুষের তার সহধর্মিণীর সঙ্গে মানসিক অনেক দূরত্ব থাকে। সেক্ষেত্রে তারও এই পথ অবলম্বন করা উচিত বলে আমি মনে করি। কয়েক বছর আগে অবশ্য একটা ধারণা ছিল, (বিশেষত মহিলাদের) "আমি ডিভোর্স দেব না। দেখি কি করে?" এটা যে কতটা হাস‍্যকর। তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে অতীব ওয়াইজ ডিসিশন হল, এই 'ঘা' বা 'ক‍্যান্সার' জীবন থেকে কেটে ফেলা।  হ‍্যাঁ তবে মাছওয়ালীর যেমন কাঁচা মাছের গন্ধ না হলে ঘুম আসে না। তেমনি স্বামীর পেটন খাওয়ার অভ‍্যেস হলে, আলাদা কথা। সবার তো আর দৃষ্টি ভঙ্গি এক নয়! যে যেমন বাঁচতে চায়। তবে এসব ক্ষেত্রে চারিপাশের লোকজনের দুঃখ উথলে পড়ে। একজন দুজন তো বলেই ফেলেন, "বাচ্ছার মুখের দিকে তাকিয়ে এডজাস্ট করা গেল না?" কথাটা এতটাই হাস‍্যকর, যে এসব ক্ষেত্রে চুপ করে থাকাই শ্রেয়। আসলে আমরা সব সময় আমাদের জায়গা থেকে অপরকে বিচার করে থাকি। এতো সময় কোথায়, অন‍্যের 'জুতো' পড়ে তাকে বিচার করবো? 

বাবা মায়ের সম্পর্ক যদি একটা গাড়ি ধরা হয়, তাহলে সন্তানকে যাত্রী ধরতে পারি। সেক্ষেত্রে গাড়ির কিছু হলে, যাত্রীকেই মাসুল গুনতে হয়। সে আপনি তাকে যতই না বোঝানোর চেষ্টা করুন না কেন। তাই এসব ক্ষেত্রে সন্তানের দুজনের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়াটাই  বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ আপনার যতই মনে হোক না কেন, সন্তানের বড়ো হওয়ার জন্য মা বাবার প্রয়োজন, তাহলে সঙ্গে এটাও মনে রাখবেন একটা বিষাক্ত পরিবেশে সুস্থভাবে কোন প্রাণী বড়ো হতে পারে না।

Notre Dame University থেকে বলা হয়েছে, বাচ্ছারা এই ঝগড়ায় অভ‍্যস্ত হয় না। ফলে তাদের স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে। তারা depression, loneliness, emotional reactivity , substance dependency, problem with intimacy জাতীয় মানসিক সমস্যার শিকার হয়। ভেবে দেখেছেন কখনও?

তবে বিদেশের মত আমাদের দেশেও যে ডিভোর্সকে সাধারণ ভাবে নিয়ে ছবি তোলা হচ্ছে, এতে আমি খুশি। কম সে কম এই ধারণা দূর হয়েছে যে ডিভোর্সীর সামনে গেলেই আহারে উঁহুরে করতে হবে, শ্রাদ্ধবাসরের মত‌। আর কারো যদি মনে হয়, ব‍্যক্তিগত ব‍্যাপারগুলো বাইরে না আনা ভাল। সেক্ষেত্রে আশা করছি, তারা বিয়ে বাড়ীতে চব‍্যচোষ‍্য খেতে যাবেন না। কারণ ডিভোর্সের মত বিয়েটাও ব‍্যক্তিগত। 

আমি আশাবাদী, তাই ভবিষ্যত প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আশা করছি, একদিন এই সমাজ ডিভোর্স নিয়ে ডিভোর্সীদের সমবেদনা জানানোর নামে মানসিক অত‍্যাচার করবে না। আর তারা মুক্তকন্ঠে বলতে পারবে "বাঁচলাম"।

(www.theoffnews.com - divorce)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours