শামা আরজু, লেখক, বাংলাদেশ:

আজ সহ তিন রাত আমার ঘুম নেই বললেই চলে। আচ্ছা, আমার জন্য কখনোই তোমার কষ্ট লাগতে নেই বুঝি! আমি তো তোমার কষ্টগুলোকে নিজের কষ্ট করে নিতে শুরু করেছি সেই শুরু থেকেই। তুমি কেন পারলে না! আমার কোথায় ঘাটতি ছিলো বলো!

যতকিছুই করি আমার সময় কাটে আসলে তোমার অপেক্ষায়। জানি তোমার কাছে এই কথাগুলি হাস্যকর মনে হবে। তুমি তো খুব যুক্তিবাদী। আবেগের মূল্য খুব কম। কিন্তু আমাকে তোমার পছন্দ করার কারন গুলোর মধ্যে একটা ছিলো আমার যুক্তিবাদী মনোভাব। হ্যাঁ, আমি এখনো তেমনই আছি। আমি জানি আবেগকে অস্বীকার করে যুক্তি হয় না। ওটা আসলে কুযুক্তি। 

তোমাকে বিশ্বাস করে যেদিন অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালাম সেদিন ভয়ের কাছে পরাজিত হলো বিশ্বাস। তুমি যখন আমার পাশে বসার অনুমতি চাইলে লাজুক ভাবে তখন মনে হলো তুমিই আমার জীবনে প্রথম পুরুষ যাকে আমি পরিণত বয়সে চেয়েছিলাম। বসার পর কিছু কথা। তারপর আবার যখন বললে, আমি কী আপনার হাতটা একটু ধরতে পারি? আমি অবাক হয়ে গেলাম। এ যে দেখি আর্টফিল্মের মতো গো! বাস্তবে পুরুষ এমন হয় কখনো? তোমাকে দেখে শিখেছিলাম পুরুষও পারে সম্মানের সাথে ভালোবাসতে। তুমিই বুঝিয়েছো যৌনতায়ও সম্মান থাকতে হয়, শিক্ষাও থাকতে হয়।ওটাও শিল্প হতে পারে। ওখান থেকে ফেরার সময় যখন গাড়ির ভেতর পেছন থেকে হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলে তখন বুঝলাম আসলে চাইলে পুরুষও পারে ভালোবাসতে। তুমি টের পাওনি আমি সেদিন  আনন্দে কেঁদেছিলাম। অথচ তুমি চাইলে যাচ্ছেতাই আচরণ করতে পারতে আমার সাথে। করোনি।

এই পর্যন্ত খুব ভালোই ছিলো। কিন্তু ভালোটাতো আমার জন্য দুঃস্বপ্ন গো! সেদিন আসলে পুলিশ হোটেলে রেড দিল। রাতের আঁধারে আমাকে নিয়ে গেল পল্টন থানায়। তুমি আর্মিতে চাকুরি করো জেনে তোমাকে ছেড়ে দিলো। আমি সাধারণ মেয়েমানুষ। আমাকে রেখে দিল। সারারাত দুটো মেয়ে পুলিশ আমার কথা শুনে খুব দুঃখ করছিল। আমার কেবল কান্না তখন। আমার ফোনটাও পুলিশ নিয়ে গেল। সকালে আরো বড়ো কোনো পুলিশ এলে তাঁকে সব খুলে বললাম। তিনি বিশ্বাস করলেন। এলাকার গন্যমান্য একজনকে ডেকে এনে তাঁর জিম্মায় আমাকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। জামিনদারকেও আমি চিনি না। দাপ্তরিক কাজ সেরে তিনি চলে গেলেন। আমার ফোনটাও দেওয়া হলো আমাকে। ফোনে আর তোমায় পাই না আমি। ঢাকায় আমি কিচ্ছু চিনি না। কোথায় যাবো, কিভাবে যাবো। একজন পুলিশকে দেওয়া হলো আমাকে বাসে তুলে দেওয়ার জন্য। সে আমাকে একটা হোটেলে গিয়ে ঘুমাতে বললো। আমার চেহারা দেখে তার মায়া লাগলো না লোভ হলো ততক্ষণে আমি বুঝতে পেরেছি। রিকশায় তার বসার ভঙ্গিতেই তার নমুনা ছিলো। আমি বললাম পরে এলে আমি আপনার সাথে অবশ্যই দেখা করবো। বাড়িতে আমার জন্য সবাই খুব চিন্তা করছে। পুলিশ ধরেই নিয়ে ছিল আমি খারাপ। কিন্তু তুমি তো জানতে আসলে আমি কী! বাড়ী আসার পর অনেক চেষ্টা করেছিলে আবার যোগাযোগ করার। আর আমি সেই সুযোগ তোমাকে দিইনি।

দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়া মানেই বাকি জীবন তাকে আরও অন্যায়ের সুযোগ করে দেওয়া, অন্যায় কাজে অনেকটা উৎসাহিত করা।

রাতের বেলা হোটেলে যাওয়া মেয়ে মানেই শখের শরীর বেচা মেয়ে না। মগজে সততা থাকলে এক বিছানায় শুয়েও বডি রিলেশশন না করেও থাকা যায়। আমার একজন মানুষ ছিল যাঁর সাথে আমি অনেক রাত একা এক রুমে একটা বিছানায় বসে বলা শুয়ে সারারাত জীবনের গল্পগুলো শেয়ার করেছি।

সেই মানুষটাই একদিন তাঁর ঘরে ফেরার পথে বাসে বসেই হার্ট এ্যাটাকে নাই হয়ে গেলেন। অথচ আমি এখনো আমার মোবাইল থেকে নাম্বারটা ডিলিট করিনি একরকম অপেক্ষা করি তার ফোনের জানাই এই পেজের উঠল মোবাইল ফোন আর আমি হাতে ফোন নিয়ে দেখলাম তার ফোন এসেছে এখনো আমি তার কথা মনে করে নীরবে কাঁদে যে কান্না কাউকে দেখানো যায় না।

অনেক সময়ই ভেবেছিলাম এই ঘটনাগুো লিখে রাখবো, পারিনি। এই করোনার অস্থির সময়ের নির্ঘুম রাত আমায় সেই সুযোগটা করে দিলো।

এই করোনায় আমি না থাকলেও আমার এই লেখাটা তো থেকেই যাবে।

"হাতের কলম জনম দুঃখী 

তাকে বেইচো না!"

(www.theoffnews.com - Bangladesh self conversation)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours