শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

আফগানিস্তান আজ জঙ্গি আর আফিমের দেশ বলে পরিচিত। যদিও দেশটির রয়েছে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কিছু দিন আগেও দেশটি ছিল আধুনিক। তারা কবিতা লিখতো। এমনকি এখনও কবিতার আসর বসে! তারা গান গাইতো, নাচতো। ঘোড়া দৌড় যাদের প্রিয় খেলা। তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল দেখার মত। আজ সব শেষ! শিক্ষার হার সবে মাত্র বিশ শতাংশের উপর। কেউ স্কুলে যায় না। আবার একদল স্কুলে যেতেও দেয় না। মেয়েরা যাতে স্কুলে না যেতে পারে, তার জন্য নিয়মিত স্কুলগুলোতে বোমা হামলা করা হয়! কোনও বিদেশী বিনিয়োগ নেই। কারখানা নেই, নেই উৎপাদন। আমদানি হয় কেবল অস্ত্র। রপ্তানী হয় জঙ্গি ও জঙ্গি চেতনা। কোনও বিদেশি বেড়াতে আসে না এখানে। আসবে কিভাবে, যেখানে খোদ দেশবাসীদেরই জীবনের নিরপত্তা নেই। নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের জন্য দেশটা সাক্ষাৎ নরক! অথচ, দেশটিতে রয়েছে কত না ঐতিহাসিক স্থান। ইসলাম প্রবেশের আগে,  এদেশে, পৌত্তলিকতা, অগ্নিপুজা, সূর্য পূজা ও হিন্দু ধর্ম সহ বিভিন্ন ধর্মের চর্চা ছিল। স্রেফ পর্যটন শিল্প দিয়েই তারা অনেক কিছুই করতে পারতো। এই বিশালাকার একটি দেশ। আয়তনের তুলনায় কম মানুষ বসবাস করে। আফগানিরা খুবই সহজ সরল। এবং অতিথিপরায়ন ছিল। এক সময় আফগানি মুদ্রাকে বলা হতো কাবুলি রুপি ও কান্দাহারি রুপি। এ দেশটি কখনওই কারো বশ্যতা স্বীকার করেনি। অবশ্য পার্সীরা (ইরানীরা) খৃষ্টের জন্মের আগে আফগান দখলে রেখে ছিল কয়েকশ বছর। তারপর আফগানীরা স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল। বহু উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে কাবুল, আবার যুদ্ধের মাধ্যমে বৃটিশদের থেকে এক চুক্তি বলে, ১৯১৯ সালে স্বাধীন হয়ে যায়৷ অর্থাৎ ভারত পাকিস্তানের অনেক আগেই তারা একটি আধুনিক স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আফগানিস্তান এক সময় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ছিল। তারপর ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়। আর এখন তো শতভাগ শরীয়া আইন চালু করা হয়েছে।

মধ্যযুগে যেখানে বিভিন্ন ধর্মের বৈচিত্র ছিল। আফগানিস্তান আজ একটি আধুনিক রাষ্ট্র হলেও, সেখানে দু চারশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানও নেই! ইসলাম প্রবেশের আগে, এদেশে, পৌত্তলিকতা, অগ্নি পূজা, সূর্য পূজা ও হিন্দু ধর্ম সহ বিভিন্ন ধর্মের চর্চা ছিল। অথচ ১৯ শতক পর্যন্ত আফগানিস্তানের 'কাফেরিস্তান অঞ্চল' ইসলাম ধর্মেও ধর্মান্তরিত করা সম্ভব হয়নি!  

সপ্তম শতকের শেষের দিকেই আরবরা কাবুলে প্রবেশ করে। তবে আজকের মত কট্টর পন্থা কখনওই ছিল না। আশির দশকেও কেউ কল্পনা করেনি। আফগানিস্তান শিক্ষায় ও উৎপাদনে আজ এত পিছিয়ে পড়বে। এত দরিদ্র হয়ে যাবে। আর, শতভাগ শরীয়ায় দেশ চলবে এবং সংখ্যালঘু শুন্য হয়ে উঠবে তাও ছিল কল্পনাতীত। কোটি কোটি আধুনিক চিন্তা চেতনার মানুষ থাকার পরও মুষ্টিমেয় মানুষের কারণে কিভাবে একটি দেশ অন্ধকারে ডুবে গেল পৃথিবী তা দেখলো।

ইতিহাস থেকে নাকি মানুষ শিক্ষা নেয় না৷ এটাই নাকি ইতিহাসের শিক্ষা৷ তবে ইতিহাস বড় নির্মম। কোন ঐতিহাসিক ভুল শোধরানো যায় না৷ ভুগতে হয় অনেক বছর। আবার দুচারজন মানুষের কল্যানে কোন দেশ অনেক এগিয়ে যায়৷ যেমন সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। আমারা কোন দিকে যাবো? সঠিক হলে তো ভালোই। ভুল সিদ্ধান্ত নিলে কি করুণ পরিণতি হয়, হতে পারে। তার দৃষ্টান্তও আছে। সিঙ্গাপুরের এত উন্নতি হবে তা যেমন কেউ ভাবতে পারেনি, তেমনি আফগানিস্তানের এমন অবনতি ঘটবে তাও কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।

(www.theoffnews.com - Afganistan)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours