দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

ট‍্যাঁকে টাকা থাকলে আম বাঙালি আম কিনতে কোনদিনই আমতা আমতা করে না। আমেই বাঙালির আমিত্ব বা আমত্ব। এই মরসুমে অর্থাৎ জৈষ্ঠ্যের শুরু থেকে বাজারে হিমসাগর ঢুকতে শুরু করে। কিন্তু কোভিড ও লকডাউনের কারণে বাজারে আমের দাম চড়া। রামপুরহাট শহরে রাস্তার ধারে আমের ঢাকি দেখতে পাওয়া যায়। আর কিছু দিনের অতিথি হিমসাগর আম। বাজারে ইতিমধ্যে ল‍্যাঙড়া ঢুকতে শুরু করেছে। সাথে আছে মধুর মতো মিষ্টি রাণী ও একটু সাইজে ছোট গুটি রাণী। মিডল অর্ডারে ল‍্যাঙড়ার দাপটের পর টেলএণ্ডারে ব‍্যাটে ঝড় তুলতে মাঠে নামবে আম্রপলী। এই আমের খাদ্যমূল্য প্রচুর। তাবড় পুষ্টিবিদদের মতে, আমে ভিটামিন সি একষট্টি থেকে বাষট্টি শতাংশ, একুশ শতাংশ ভিটামিন এ ও যথেষ্ট অ‍্যান্টিঅক্সিড‍্যান্ট থাকে। যদিও সব আমেই জিঙ্ক একই রকম থাকে না। 

বাজারে এখন ভালো হিমসাগর কেজি প্রতি পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু বাজারে কার্বাইড পাকা ত্রিশ টাকায় হিমসাগর পাওয়া যায়। তাই আম রসিকদের স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে আম কিনতে হবে। অনেক বিক্রেতায় "গাছ পাকা" আম বলে দাবি করে থাকেন। কিন্তু পঞ্চাশ টাকায় হিমসাগর কিনতে অনেকেরই এই দুর্মূল‍্যর বাজারে হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। রামপুরহাট দেশবন্ধু রোডে দেখা মিললো আম বিক্রেতা মুর্সেলিম সেখের সাথে। তাঁর বাড়ি পাশের জেলা মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে। বিক্রেতা মুর্সেলিম সেখের কাছ থেকে জানা গেল, লক ডাউনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ছোট ম‍্যাটাডোর "চারশো চার" গাড়িতে তিন জন মিলে তিন কুইন্টাল আম আনে। যার ভাড়া লাগে জনা প্রতি চারশো টাকা। চার পাঁচ দিন লাগে ঘুরে ঘুরে ফেরি করতে। সঙ্গে আছে থাকা ও খোরাকি বাবদ আরও খরচ। এসব কারণেই এবার আমের দাম একটু চড়া। মুর্সেলিম সেখ জানান, বাগানের ডাক মালিকরা সরাসরি আড়তে আম বিক্রি করেন। ফেরিওয়ালারা সেখান থেকে চব্বিশ টাকা কেজি পাইকারি দরে কেনে। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই মেয়ে আছে তাঁর। এতেই সংসার চলে আমের সিজনে। সারা বছর মাঠে মজুরি খেটে সংসার চালাতে হয় মুর্সেলিনকে। 

তার কাছেই শোনা, এক সময়  হরেকরকম আম ছিল। আজ আর পাওয়া যায় না। জানা গেছে, মোট পঁইত্রিশ প্রজাতির আম ছিল এক সময়। যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা ইত্যাদি। এগুলোর মধ‍্যে বেশ কিছুর দেখা আর সহজে মেলে না। আম বাঙালির এই আম কাহিনী ১৪ শতকে প্রথম লিপি বদ্ধ করেন মরোক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা। শোনা যায়, সম্রাট আকবর আম খেতে ভীষণ ভালোবাসতেন। দ্বারভাঙগার কাছে লক্ষ্মীবাগে প্রায় এক হাজার আম গাছ লাগিয়েছিলেন তিনি। 

(www.theoffnews.com - mango)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours