মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:
(ছবি সৌজন্যে: প্রতিবন্ধী সহায়ক কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'ভয়েস অফ ওয়ার্ল্ড'এর পালিত রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠান)
বিশের বিষ পেরিয়ে একুশে পা। তবুও স্বস্তিতে নেই আমরা। অতিমারীর প্রকোপের মধ্যেই হয়ে গেল ভোট উৎসব। রক্তের ছিটেয় বড় বেদনার রঙ নিয়ে ভোট পরবর্তী চাপান উতোর চলছেই। ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা, অস্থির সময়ের আস্ফালন আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। এর মাঝেই নীরবে এসে গেল আপামর বাঙালি তথা ভারতবাসীর আরও এক উৎসবের দিন।
পঁচিশে বৈশাখ। রবিকিরণে উজ্জ্বল এক দিন যা আমাদের হৃদয়ের উৎসবে পরিণত হয়েছে।
বাঙালি তার অনেক কিছুই ভুলেছে কিন্তু তাদের প্রাণের মানুষকে নীরবে হৃদয়ে রেখেছে। ছোটবেলা থেকে বরাবরই পঁচিশে বৈশাখের প্রস্তুতি শুরু হত বৈশাখের শুরুতেই অথবা চৈত্রের শেষ থেকে। পাড়ায় পাড়ায় মঞ্চ তৈরী করে আনাড়ী শিল্পীদের অনুষ্ঠানই ছিল প্রধান আকর্ষণ। বিনোদন বলতে ওটুকুই।
আজ বিনোদনের প্রচুর উপায় রয়েছে অথচ কি আশ্চর্যজনক ভাবে দাড়িবুড়োর জন্মদিনটা কেউ ভোলে না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তিনি ঘিরে রয়েছেন আমাদের তার আশ্চর্য ক্যারিশমায়। এখনো গীতবিতান, সঞ্চয়িতার পাতা উল্টে চলে রবীন্দ্রজয়ন্তীর রিহার্সাল। গত বছর থেকেই করোনার করুণায় ঘরবন্দি আমরা আর আগের মত মঞ্চ তৈরি করে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে পারছি না। কিন্তু তবুও দেখা যাচ্ছে যে তাঁর জন্মদিনটি আমরা যেন আরও উৎসাহ নিয়ে পালন করতে পারছি। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্ৰুপে, পেজে, অনলাইনে রবি কবির ম্যাজিক ছড়িয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রমুগ্ধ হচ্ছি আমরা। এ ঘোর কাটার নয়। তবে হ্যাঁ শুধু একদিনের হুজুগে মেতে প্রতিদিনের রবীন্দ্রচর্চাকে ভুললে চলবে না। এই রবীন্দ্রচর্চার অর্থ কেবল গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ বা তত্ত্বের কচকচি নয়। তাঁর গান, কবিতার অর্থকে উপলব্ধি করা, তাঁর দর্শনকে অনুভব করা সর্বপরি তাঁকে দেবতার আসনে বসিয়ে দূরে ঠেলে না দিয়ে ভালবেসে হৃদয়ে স্থান দিতে হবে। তবেই তিনি কেবল ১৬০ বছর নয় বহুবছর ধরে আমাদের প্রাণের মানুষ হয়ে থেকে যাবেন। সেই প্রিয়তমের সঙ্গে আমাদের প্রাণের খেলা প্রবহমান নদীর মত চলবে। আমাদের সুখ দুঃখের সাথী হিসেবে থেকে যাবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সকল সৃষ্টি নিয়ে।
(www.theoffnews.com - Rabindranath Tagore)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours