সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
তখন আমার বয়স ২৩/২৪ হবে হয়তো। কলকাতার রবীন্দ্রসদনে এক আবৃত্তি সন্ধ্যায় আমি আবৃত্তি পরিবেশন করছিলাম, "নিভন্ত এই চুল্লীতে মা একটু আগুন দে, আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি বাঁচার আনন্দে।..." পরিবেশন শেষ হতেই শুরু হল প্রেক্ষাগৃহ ভর্তি হাততালি। আর তখনই আয়োজক সুবীর চ্যাটার্জী কাকু আমাকে ডেকে বললেন, "তোকে শঙ্খদা ডাকছেন।" এটা শুনেই বলির পাঁঠার মতো কাঁপছি। এই কবির কবিতা বলতে গিয়ে কিছু ভুল করলাম নাতো? অন্যদিকে এই মহামানব জ্ঞানপীঠ কবির ডাক উপেক্ষা করার মতো সাধ্য আমার নেই। উনি ডেকেছেন আমায় এটাই যে আমার কাছে এক অসীম হিমালয় প্রাপ্তি। একটু পর কবির মুখোমুখি হলাম। এক লহমায় ভয় গেল কেটে। কি পরম স্নেহে না উনি কথা বলতে শুরু করলেন। আমার পরিচয় কোথায় থাকি জানতে চাইলেন। একইসঙ্গে কবিতা ও আবৃত্তি নিয়ে কিছু উপদেশ দিলেন। যা আমি কখনই প্রকাশ করিনি প্রকাশ্যে। কারণ তাঁর উপদেশ ছিল ব্যক্তিগত। এই এথিক্স আমি চিরকাল মেনে চলেছি। হ্যাঁ এটুকু বলতেই পারি শঙ্খদার সেদিনের উপদেশ আমাকে পদে পদে আজও সমৃদ্ধ করে চলেছে। অনেকটা কলম স্বর্গ মন্থনে অনন্ত অমৃত শব্দব্রহ্ম প্রাপ্তি হয় আমার সেই সান্ধ্য লগ্নে।
এইতো সেদিনের কথা। এক রাজনৈতিক অর্ধশিক্ষিত আহাম্মক অনুব্রত মণ্ডল এই কবির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, "শঙ্খ একটা ভাল জিনিস, সব পবিত্র কাজে লাগে। শঙ্খ ভুল করলে দেবতার অসম্মান হয়। সেই কারণেই ওঁর নাম শঙ্খ রাখা উচিত হয়নি”।
এই অর্বাচীন পশুত্বপ্রলাপ শুধু শঙ্খদাকে সেদিন অসম্মানিত করেনি আপামর বাঙালিয়ানার জ্যাতাভিমানের মাথা হেঁট করে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অদ্ভুত নীরবতায়, এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে। তাই হয়তো "আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি বাঁচার আনন্দে" নিজের লেখা শব্দগুলি বড্ড অভিমানে মনব্রাত্য করেই চলে গেলেন নটে গাছটি মুরালোর সুলুক সন্ধানে।
দাঁড়াও কবি-পথিকবর, কোনও অর্বাচীন তোমার নামের ব্যাঞ্জনার ও তোমার কলম উচ্চতার মার্গদর্শন নাই বা বুঝলো, তাতে তোমার কি যায় এলো? কবি সিন্ধুর উপত্যকায় এরকম উপেক্ষিত তৃণ বিন্দুর মূল্যই বা কতটুকু! তুমি কি শুনিতে পাও তোমার অনন্তলোকের যাত্রাপথে বহিছে কত বিষাদ অশ্রু, কত শঙ্খ নিনাদ?
(www.theoffnews.com - Shankha Ghosh)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours