দীপ্তি জামান, লেখিকা, বাংলাদেশ:

কোথাও কোনো পাপ নেই পঙ্খিলতা নেই৷ পাপ-পুণ্য মাপার নিদির্ষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই। নিয়তি নীরব রহস্যময় দেবতার মতো যার কোনো সম্ভাবনা যাচাই করা যায় না৷ তাই ন্যায় ও ন্যায্যতা, যুক্তি ও তর্ক দিয়ে যতদূর যাওয়া যায়৷ পৃথিবীর অস্তিত্ব একটি মুদ্রার ন্যায় যার একপিঠে পাপ অন্যপিঠে পুণ্য৷ জীবন নামের মানবিক অধ্যায়টি পাপ ও পুণ্যের মুখোমুখি হয়ে নিরন্তর বয়ে চলে এবং ঈশ্বর আশির্বাদ ও দূর্ভাগ্যের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে না পেয়ে জড়িয়ে পড়ে বিভ্রান্তিতে৷ কখনো কখনো জীবনের প্রতি খেই হারিয়ে জীবন পড়ে সংশয় ঝুঁকিতে৷ মানুষ খোঁজে নিরর্থক জীবনের তাৎপর্য। মেনে নিতে হয় নিরার্থকতার পর নিরার্থকতাকে৷ তাৎপর্য থেকে যায় তাৎপর্যহীনতার মধ্যে৷ পথের শেষ মৃত্যুতে৷ সব কামনা-বাসনাতর অবসান ঘটে নির্বিকার ক্ষুধার্ত মাটি আর আগুনের মধ্যে৷ মৃত্যুর মধ্যে চূড়ান্ত বিনাশ৷ তাই জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে জ্ঞানের চেয়ে উত্তম কোনো অর্জন নেই৷

ঈশ্বরের পুত্রগণ --

ঈশ্বরের প্রথম সারির পুত্রগণ ঈশ্বরের প্রতি পূর্ণ বিশ্বস্ত। যেমনটি ধারণা করা হয়, ঈশ্বরের এই বিশ্বস্ত পুত্রগণ পুনরুত্থান পর্বে ঈশ্বরের সাথে অনন্তকাল স্বর্গীয় জীবন-যাপন করবেন৷ স্বর্গীয় জীবন-যে জনম অবিনশ্বর ধারণার ওপর নির্ভরশীল ৷ যার ভীত তৈরি হবে বিশ্বস্ত পুত্রগণের দেহ দিয়ে আর দেয়াল তৈরি হবে তাদের উৎসর্গকৃত অশ্রু আর স্বেদ দিয়ে৷ কারা ঈশ্বরের একান্ত পুত্রগণ? এরা হলেন নশ্বর জগতের দুর্ভাগ্যকবলিত ঈশ্বর আশীর্বাদপুষ্ট অনাথ বালকগণ৷ যারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় নিবিড় প্রাচীরের মধ্যে বেড়ে ওঠে৷ যেখানে পৌঁছায় না আলোকিত পৃথিবীর আলো৷ লাগে না পরিবর্তন-বিবর্তনের ছোঁয়া৷ পৌরাণিক কাহিনী রপ্ত করে বিশ্বস্ত থাকে ঈশ্বরের বিমূর্তলোকে৷ ঈশ্বরের পুত্রগণ জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইহলৌকিক সময় পার করে মধ্যযুগীয় অন্ধকার গহ্বরে৷ বিশ্বাসের সাথে বাস্তবতার সমন্বয় ও বিশ্লেষণের সকল পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়৷ তাই তাদের জীবদ্দশায় থাকে না মানসিক মধ্যস্থতা, থাকে না নিজস্ব মতামত৷ জীবনের উপসংহার টানতে হয় যুক্তি-তর্কহীন বাস্তবতার সাথে সম্পর্কশূন্য এক কল্পরাজ্যে৷ স্বর্গ আর মর্তের মধ্যে তৈরি করে চলে রহস্যকরণ, জন্ম দিতে থাকে  রূপকথার মিথ৷ রূপকথার তালিম নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোলাচলে বিশ্বাসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় ঈশ্বরের দ্বিতীয় সারির পুত্রগণ৷ যারা ঈশ্বরের একান্ত পুত্রদের পৃষ্ঠপোষকতা বা করুণা করে স্বর্গের সিঁড়ি হিসেবে৷ তারা তাদের উপার্জনের উচ্ছিষ্টাংশ ব্যয় করেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এতিমখানা মসজিদ মাদ্রাসায় অবস্থানরত ঈশ্বরের অনুগত পুত্রগণের ভরণপোষণে একই সাথে জপেরমালা, ধর্মীয় আচার -অনুষ্ঠানিকতা পালন করে থাকেন জাগতিক আরাম- আয়েস, সুখ-সমৃদ্ধি মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখার নিমিত্তে৷

(www.theoffnews.com - Bangladesh)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours