সুস্মিতা পাল, লেখিকা ও শিক্ষিকা, কলকাতা:

সে ছিল এক সুন্দরী, চিরযৌবনা। কালো কেশে কুরবকের মালা, হাতে ধরা লীলাকমল। কুন্দফুলে সাজত অলকগুচ্ছ, কর্ণমূলে শিরীষ, মেখলাতে কদমের মালার ঘের। স্নান শেষে কেশ সুগন্ধী ধোঁয়ায় সুরভিত, মুখে মেখে নিত লোধ্ররেণু। নোয়ার নৌকো থেকে যন্ত্রযুগের জয়ধ্বনি - সবই তার দেখা, শোনা। 

তার অনুরাগীরা মুগ্ধচোখে দেখে অপলক, গেয়ে যায় সুরেলা গীত, লেখে ছন্দে গাঁথা কবিতা। প্রেমিক হাত ঈষৎ কাঁপন লাগা হাতে ছুঁতে চায় সেই নারীকে। আকুল স্পর্শে উদগ্রীব হয় জ্বালামুখ। তার অধরের লালিমায় প্রেমিকের আঙুল লাল হয়ে ওঠে। চুল তার অন্ধকার নিশা, সেই কালিমা বিস্তীর্ণ রাতের আকাশে। আঁখি-পাখিখানি চঞ্চল, মণিতে থমকে নীল সাগরের জলোচ্ছ্বাস। গমরঙা ত্বকে মোমের আলো ঠিকরোয়, পদ্মপাতায় থিরথির কাঁপে জলের কণা। সে হেঁটে যায় সময়ের অনন্ত পথ, অলক্তরাগে মাটিতে আঁকা হয়ে যায় আলপনা। হলুদ শাড়ি তার শ্যামল যৌবনের প্রান্তরে পাকা ধানীরং জমি। প্রতি অঙ্গ লাগি প্রেমিকের প্রতি অঙ্গ ব্যাকুল, মেতে ওঠে মিলন হোরি খেলায়।

শুধু অজানা ছিল যুগে যুগে প্রেমিক মানুষ তার রূপের ভাঁড়ার লুটে নিঃস্ব করেছে সেই নারীকে। তাই মিলনের উৎসব শেষে যখন প্রেমিক রূপসাগরের অতলে অরূপ রতনের সন্ধানে হাত রাখে হৃদপদ্মে, খসে যায় বিবর্ণ পাপড়িরা। ধূসর কোরকের প্রাণহীন অস্তিত্ব অনুভব করে নির্বাক হয় মানুষ। তার সব রং নির্বিচারে শুষে নিয়েছে মানুষের লালসা, মিথ্যে দিয়ে রঙিন সাজিয়েছে নারীকে। তাই বসন্ত-উৎসবের রঙিন দিনে সে অন্তঃসারশূণ্য, বেরঙ্গিন। সেই নারীর পরিচয়- ধরিত্রী, মানুষের অন্তহীন লোভের শিকার; একমুঠো ভালোবাসার রঙের কাঙালিনী।

"আকাশে উড়ন্ত লাভা,

আগুন লেগেছে বনে-বনে

পথে পথে মরা সাপ,

গাছে গাছে ঘুড়ির কঙ্কাল

ঠোঁটে চুমু খেতে গিয়ে

রক্ত চুষে ফেলছি আনমনে

এ কি দিন এল

আমরা পরস্পর ক্ষুধার্ত, ভয়াল!"

(www.theoffnews.com - dol jatra)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours