দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

আর পাঁচটা দিনের থেকে আলাদা কিছু মনে হয় না সাবিলা বা সেবিনা বিবিদের কাছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘ তো অনেক দূর বীরভূমের মুরারই ১ ব্লকের রাজগ্রাম পঞ্চায়েতের আম্ভূয়া গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে।  কি থিমে গোটা বিশ্ব এই বিশেষ দিনটিকে পালন করছে, তাঁদের কিচ্ছু যায় আসে না। এই নারীরা জানেন না বা জানার প্রয়োজন বোধ করেন না যে এবছরের থিম “নেতৃত্বে নারীঃ কোভিড ১৯ পৃথিবীতে সমান ভবিষ্যৎ লাভ”।  নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার অধিকারও অলীক, তাঁদের বাড়ির উঠোনের মধ্যে অভাবের কাছে। তাই শুধু মাত্র বিশেষ কোন দিন নয়, প্রতিটি দিন তাঁদের কাছে নারী দিবস। তাঁদের কাছে এক একটা দিন অস্তিত্বের লড়াইয়ের, জীবন সংগ্রামের! তাঁদের অনেকেরই স্বামী অসুস্থ। পরিবারকে বাঁচাতে পুরুষ জীবন সঙ্গীর সামনে বুক চিতিয়ে বাঁচার যুদ্ধটা তাঁদেরই চালাতে হয়।

সেবিনা বিবি বিড়ি বেঁধে সংসার চালান। স্বামী মিলন সেখ বহুদিন ধরে অসুস্থ। আছে স্বামীর ওষুধের খরচ। খুব কষ্ট করে পাঁচ ছটি মুখের আহার তাঁকেই জোগার করতে হয়। বড় ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাঁদের আলাদা সংসার। বিড়ির মুখ মুড়তে মুড়তে তিনিই বলেন, ১৮-১৯ বছর ধরে সংসার চলছে এইভাবেই। এই বিড়ি বেঁধেই ছোট ছোট ছেলে মেয়েকে বড় করা। স্বামী কাজ কাম করতে পারে না। বিড়ির বানি বা মজুরি কম দিচ্ছে এখন। আগে দিত ১৫০। এখন দিচ্ছে ১৪০। বিড়ি পট্টি বাদ দিচ্ছে ১০ টাকা। হপ্তা কাটানি বাদ দিচ্ছে ৫ টাকা। ওই ১৩০ টাকা পড়ছে। ছোট ছোট বাচ্চা। পড়া লেখা করাতে পারিনি। কি করবো!      

 একই সুরে সাবিলা বিবি বলেন, আমাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে মাধ্যমিক পাশ করেছে। অভাবের কারণে আর পড়া হয়নি। মেয়ে এবার মাধ্যমিক দেবে। স্বামী মিলন সেখের শ্বাস কষ্ট।  কাজে বের হতে পারে না। তবুও কোন কোন দিন বের হয়। কোন দিন ১০০, আবার কোন দিন ১৫০ টাকা মজুরি হয়। কোনদিন ঘুরে আসতে হয়। এখন মুন্সীরা হাজার বিড়ি পিছু বিড়ি বাঁধার মজুরি ১৪০ টাকা। এর মধ্যে পট্টির জন্য দেড়শো বিড়ি পট্টিতে বাদ। তাহলে তো মজুরি কমে যাচ্ছে।

তবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, বিনে পয়সায় রেশন, কন্যাশ্রীর টাকা, আবাস যোজনায় ঘর পেয়ে যে অনেকটাই উপকৃত সেটা জানাতে ভোলেননি সেবিনা ও সাবিলারা। আবার ক্ষোভও উগরে দিয়ে তাঁরা বলেন, গ্যাসের দাম, ডিজেলের দাম, পেট্রোলের দাম, সব কিছুর এত দাম কেন? আর মজুরির দাম কেন বাড়ানো হয় না? আমরা কি বাঁচতে পারবো না! এসব যারা করছেন, তাদের এত সাহস হয় কি করে! নিজের পরিবার বাঁচাতে এঁরা তখনই হয়ে ওঠেন এক একজন ছোট্ট গ্রেটা থুনবার্গ।

(www.theoffnews.com - international women's day bidi worker lady)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours