সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ, কলকাতা:

ফাগুন মরশুমে মেঘলা আকাশ। এমনই আদুরে আবহে একটা ক্রিকেট প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পুরুলিয়ার লাল মাটিতে। আর তারই সঙ্গে রচিত হয়ে গেল এই মালভূমির জেলায় এক অনন্য ইতিহাস। হ্যাঁ প্রকৃতই ইতিহাস। কারণ মাঠ জুড়ে ব্যাটে ও বলের লড়াইয়ের কুশীলব যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা। শুক্রবার এমনই অভিনব ক্রিকেট খেলাটি অনুষ্ঠিত হলো বাংলা একাদশ বনাম ঝাড়খণ্ড একাদশের মধ্যে।

পুরুলিয়ার একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল। কাঁটাডি রেলস্টেশনের অনতিদূরে বিবেকানন্দ গ্রাম। সেই মেঠো পথেই রয়েছে নরেন্দ্রদেব বিদ্যা নিকেতনের প্রশস্ত খেলার মাঠ। কলকাতার সমাজসেবী সংস্থা ভয়েস অফ ওয়ার্ল্ডের উদ্যোগে এদিন এখানে আয়োজিত হল দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের এক আমন্ত্রণী ক্রিকেট ম্যাচ। প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের উদ্বোধনী ভাষণে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা গার্গী গুপ্ত বলেন, "আমরা এই এলাকার প্রতিবন্ধী মানুষের আবাসিক পুঁথিগত শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তারই দৃষ্টান্তে এই ক্রিকেট খেলার আয়োজন।"

বিশেষ অতিথি হিসেবে কলকাতার বেহালা অঞ্চলের ভারত সেবাশ্রম সংঘের তরফে খোকন মহারাজ মন্তব্য করেন, "এমন একটা প্রান্তিক এলাকায় প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়ন কল্পে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে আমি অভিভূত। এইধরণের খেলা সত্যি সমাজে প্রেরণার দৃষ্টান্ত।" এছাড়া খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন স্থানীয় শিক্ষাবিদ খগেন গোস্বামী ও সমাজকর্মী বিবেক কাটারুকা, শৈবাল গুহ এবং ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।

এদিন সকাল এগারোটায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেট ম্যাচ শুরু হয়। বাংলা একাদশ ও ঝাড়খণ্ড একাদশের খেলোয়াড়দের মধ্যে কিশোর বয়স থেকে যুবকদের সামঞ্জস্য বেশ নজর কাড়ে। দুই দলেই চারজন করে পূর্ণ দৃষ্টিহীন খেলোয়াড় ছিলেন। বাকিরা আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। প্রথমে ব্যাট করতে নেমেই ঝোড়ো ইনিংস শুরু করে ঝাড়খণ্ড একাদশের খেলোয়াড়রা। কুড়ি ওভারের এই খেলায় ঝাড়খণ্ড একাদশের পক্ষে শতরান করেন রাজীব রঞ্জন। ম্যাচে ১১৬ রান করে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে তিনি সবার নজর কাড়েন। ওই দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন অনীশ কুমার। তারা কুড়ি ওভারের শেষে ৬ উইকেটে ২৩৯ রান করেন।

এই স্কোর কার্ডের জবাবে বাংলা একাদশ মাঠে নেমে কার্যত তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ে ঝাড়খণ্ড একাদশের বোলিং দাপটে। পনেরো ওভারে মাত্র ৭২ রান করে তারা অল আউট হয়ে যান। বাংলা একাদশের হয়ে সীতারাম মাজি সর্বাধিক রান করেন ১৬। খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণী সভার ব্যবস্থাপনা ছিল। স্থানীয় গ্রামবাসীরা এদিন এই অভিনব ক্রিকেট খেলা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

(www.theoffnews.com - blind cricket match Purulia)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours