দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

কেন্দ্রীয় জাতীয় শিক্ষানীতিকে বিরোধী তথা দেশের বেশিরভাগ মানুষ কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষা নীতিকে  সার্বিক গৈরিকীকরণ বললেও, সেই জাতীয় শিক্ষা নীতিকে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন বিশ্বভারতীর রেক্ট্রর তথা রাজ্যের গভর্নর জগদীপ ধনকড়। বিশ্বভারতীর একান্নতম সমাবর্তনে কেন্দ্র সরকারের তথা নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষানীতির ভূয়সী প্রশংসা করলেন তিনি। রেক্টর জগদীপ ধনকড় তাঁর বক্তব্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর জাতীয় শিক্ষা নীতিকে “গেম চেঞ্জার” বলে উল্লেখ করলেন। তিনি বলেন, এই নীতির মধ্যে কোন পক্ষপাত নেই। উচ্চমানের এই শিক্ষা নীতি সর্বজন গ্রাহ্য হয়েছে। এই নীতির অনেক ভালো দিক আছে।

বিশ্বভারতীর এসএফআই সদস্য সোমনাথ সাউ বলেন, রেক্ট্রর যেটা বললেন না, সেটা হলো এই জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু হলে পড়াশোনা ব্যয়বহুল হবে। সোজা কথায়, যার টাকা আছে সে পড়বে। যার নেই সে পড়বে না। কর্পোরেট সংস্থার হাতে শিক্ষাকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আর এটাই মোদীর আত্মনির্ভরতা। সাথে আছে আরএসএসের গৈরিকী করণের গোপন এজেণ্ডা আশ্রম ব্যবস্থা চালু করা। আমরা এর বিরোধীতা করছি। এদিকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল তথা রেক্টর জগদীপ ধনকড়, শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক, উপাচার্য সহ অন্যান্য আধিকারিকরা উপস্থিত থাকলেও, এদিনের পড়ুয়া শূন্য অনুষ্ঠান ছিল কার্যতঃ ম্যাড়মেড়ে। সামাজিক মাধ্যমে পড়ুয়ারা একে “অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া” বলে উপহাস করেছেন। কারণ যাদের জন্য অনুষ্ঠান, তাঁরা ছিলেন না।

রেক্ট্রর তাঁর বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যকে প্রেরণামূলক এবং শোনার জন্য অধীর আগ্রহী বলে উল্লেখ করেন। তারপর ভার্চুয়াল ভাষণে শুরু হয় আচার্য নরেন্দ্র মোদীর। আর সেখানেই বক্তব্যের মাঝে উঠে আসে এক ভুল তথ্য। তাকে কেন্দ্র করে বিরোধী মহলে বিতর্ক দেখা দেয়। স্বাধীনতার  পঁচাত্তরতম দেশের ছবি পাল্টানোর পাশাপাশি, স্বাধীনতার শতবর্ষে দেশের কারিগর ও আত্মনির্ভতার লক্ষ্য স্থির করার কথা বলতে গিয়ে “বোলপুর”কে “জেলা” বলে উল্লেখ করলেন বিশ্বভারতীর আচার্য। আগেও শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান বিতর্ক উঠেছে। এব্যাপারে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, বাংলার সংস্কৃতি বা বাংলা নিয়ে তাঁদের আন্তরিকতার অভাব আছে, সেই কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী বাংলার কথা বলতে গিয়ে ভুল বলছেন। বিজেপির রাজ্য নেতারাই তো ভুল বলেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বোলপুরকে জেলা বলবেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। দিল্লীতে কৃষকরা আত্মনির্ভরতার জন্য লড়াই করছে, আর বাংলায় কৃষকদের আত্মনির্ভতার জন্য ছাত্রযুবাদের লক্ষ্য স্থির করে দিচ্ছেন। আসলে বাঙালীর আবেগ নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন।

এদিন ভার্চুয়াল ভাষণে আচার্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতীয় শিক্ষা নীতিতে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। স্কুল শিক্ষায় মেয়েদের ড্রপ আউট দূর করতে মন্ত্রকের ভাবনার উল্লেখ করে ধর্মপাল, টমাস মুনরো থেকে প্রাচীন ঐতিহ্য ও পরম্পরার উল্লেখ করে বলেন, এই জাতীয় শিক্ষা নীতিতে মেয়েদের জন্য আকর্ষনীয় পাঠ্যক্রমের কথা বলেন। আচার্য বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই কার প্যান্ট্রীর মত বিবিধ বিষয়ের অন্তর্ভূক্তি মেয়েদের ড্রপ আউট দূর করবে। যদিও, এব্যাপারে শাসক দলের তরফে কটাক্ষ করে বলা হয়, রাজ্যে বহু আগেই সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী, মিড ডে মিল আছে। এই রাজ্যে মেয়েদের ড্রপ আউট নেই। উনারা আগেও বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও বলেছেন। এসব চমক ছাড়া কিছু নয়। এদিন প্রধানমন্ত্রী দেশের একতা ও অখণ্ডতার পাশাপাশি শিবাজী জন্ম জয়ন্তীর কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের “শিবাজী উৎসব” কবিতার প্রথম পঙত্তি উদ্ধৃত করেন। এছাড়াও, আরও বেশ কয়েকটি কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দেন। জাতি আগে, সফলতা বা অসফলতা যাই হোক সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হওয়া উচিৎ নয় এসমস্ত কথা ছাত্রছাত্রীর উদ্দেশ্যে বলার পাশাপাশি, স্বাধীনতা দিবসের শতবর্ষে লক্ষ্য ছাত্রদের নতুন দিশা তৈরীর আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, বিশ্বভারতী অনেক গ্রাম দত্তক নিয়ে কাজ করে। সেখানকার কৃষক ও কারিগরদের উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারিরকরণ করে দেশকে আত্মনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এদিন বিশ্বভারতীর রেক্ট্রর তথা রাজ্যের গভর্নর জগদীপ ধনকড় ছাত্রছাত্রীদের বলেন, শুধু উৎকর্ষতা নয়, সদিচ্ছা থাকা দরকার। ডিগ্রিপ্রাপকদের অভিনন্দনের পাশাপাশি, বিশ্বভারতীকে  তক্ষশীলা, নালদার মত প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একই সারণীতে বসান। এদিন  করোনাত্তোর কালে দেশের ভ্যাকশিন দিয়ে অন্য দেশের সাহায্য করা নিয়ে প্রশংসা করেন তিনি ।

সমাবর্তন থেকে ফেরার পথে হেলিপ্যাডে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বলেন, "রাজ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবাই জানে কিন্তু কেউ ভয়ে বলতে পারে না। আপনাদের রাজ্যপাল বারবার বলে আসছেন সুষ্ঠু রাজনীতি হোক। তারপর ফের রাজ্যপাল বলেন, "২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে রাজ্যের পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে৷ ভেবে দেখুন, ১৯৪৭ সালে সব বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের স্থান কত উপরে ছিল! বদলের প্রয়োজন আছে৷" কপ্টরে চাপার আগে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,  "আপনাদের এখানে আবার আসব। চায়ে পে চর্চা করব।" আর যেটা বিজেপির নেতাদের ঘোষিত রাজনীতি। প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যপাল কি রাজনীতি করতে পারেন? অনুব্রত মণ্ডল এব্যাপারে রাজ্যপালের তীব্র সমালোচনা করেন।

(www.theoffnews.com - samabartan Viswabharati)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours