চন্দ্রিমা দত্ত (সাঁজবাতি), লেখিকা ও শিক্ষিকা, শ্রীরামপুর, হুগলি:
ভারতীয় চিত্রনির্মাতা, চিত্র পরিচালক এবং লেখক ও অনুবাদক চিদানন্দ দাশগুপ্তের নাম সর্বজনবিদিত। তাঁর সম্পর্কে কয়েকটি লাইনে লিখতে গেলে সেটি উচ্চ মাধ্যমিকের রচনা হয়ে দাঁড়াবে। তবু আশা করছি নাতনি হবার সুবাদে অল্প হলেও নতুন কিছু বলতে পারবো।
জন্ম: পরাধীন ভারতের শিলং শহরে ১৯২১ সালে।
বাবা মন্মথ দাশগুপ্ত ছিলেন হাজারীবাগের বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, মা শান্তিলতা দাশগুপ্ত সমাজসেবিকা।
নাম করা ব্রাহ্ম পরিবার। তিনভাই ও এক বোন। চিদানন্দ দাশগুপ্ত সবার বড়ো। ছোট ভাই ছোটবেলাতেই ভুল চিকিৎসায় মারা যান। মেজভাই গৌরাঙ্গ দাশগুপ্তও চলে গেছেন কয়েক বছর আগে। একমাত্র ও সবচেয়ে ছোট বোন মীরা দাশগুপ্ত বর্তমানে শিলিগুড়িতে।
চিদানন্দবাবু বিবাহ করেন ১৯৪৪ সালে কবি জীবনানন্দ দাশের দাদা ব্রহ্মানন্দ দাশগুপ্তের কন্যা সুপ্রিয়াকে। ওনার তিন কন্যা - রীনা, রত্না, লক্ষ্মী। বড় কন্যা রীনা সবার পরিচিত অভিনেত্রী ও চিত্র পরিচালিকা অপর্ণা সেন, এবং নাতনী কঙ্কনা সেন শর্মা ।
১৯৪০ সালে কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্টের সময় হাজারীবাগ সেন্ট কোলাম্বিয়া কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন কলকাতায়। কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইন্সটিটিউটে প্রশান্ত চন্দ্র মহালনবীশের সহকারী হিসেবে কাজ করার পর সিটি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন।
সত্যজিৎ রায় ছিলেন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু, একেবারে হরিহর আত্মা। ১৯৪৭ সালে চিদানন্দবাবু সত্যজিৎ রায়ের সাথে প্রতিষ্ঠা করেন "ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি"। পরে ১৯৫৯ সালে ওনার সাথেই স্থাপন করেন "ফেডারেশন অব্ ফিল্ম সোসাইটিজ অব্ ইন্ডিয়া"।
অনুবাদক হিসেবে তিনি যাঁদের লেখার ইংরেজি অনুবাদ করেন তাঁরা হলেন রবিঠাকুর, মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জীবনানন্দ দাশ।
ফিল্ম সমালোচক হিসেবে তাঁর লেখা ২৫০০ এরও বেশি আর্টিকেল রয়েছে, যা ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসকে করেছে সমৃদ্ধ।
সিনেমা পরিচালক হিসেবে তাঁর সাতটি সিনেমা রয়েছে যেমন "দ্য স্টাফ অব্ স্টিল", "পোট্রেট অব্ আ সিটি ", "আমোদিনী " ইত্যাদি।
লেখক হিসেবে তাঁর লেখা কয়েকটি বইয়ের উদাহরণ দিই - "দ্য সিনেমা অব্ সত্যজিৎ রয়", "সিলেক্টেড পোয়েমস্: জীবনানন্দ দাশ", "দ্য পেইন্টেড ফেস", "টকিং অ্যাবাউট ফিল্মস" ইত্যাদি।
শেষ জীবনটা উনি কলকাতায় কম শান্তিনিকেতনের বাড়িতে বেশি থাকতেন। পারকিনসন্স রোগ তাঁকে পঙ্গু করে হুইলচেয়ারে এনে ফেললেও লেখালেখি থেকে বিরত করতে পারেনি। কিন্তু এই কারণেই তাঁর ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া হয়েছিল।
২০১১ সালের ২২মে তিনি আমাদের ছেড়ে আনন্দলোকে যাত্রা করেন।
(ছবি সৌজন্যে প্রতিবেদক স্বয়ং)
(www.theoffnews.com - Chidananda Dasgupta)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours