প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূূর্ব বর্ধমান:

বার্ধক্যকাল বড়ই যন্ত্রণার। 

সব সময়ই পরমুখাপেক্ষী হয়ে বাঁচতে হয়। ন্যুজ শরীরে, নিজের পরনের কাপড়টাও অনেকেই  নিজে পড়তে পারেন না। কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলা, বেকার হয়ে যাবার কারনে নিকট আত্মীয়দের কাছেও অনেক সময়  মুখ ঝামটানি শুনতে হয় অনেককেই। পরনির্ভরশীল হয়ে অসহায়ের মত জীবন কাটাতে হয় বৃদ্ধ/বৃদ্ধাকে মৃত্যু পর্যন্ত। 

নিকট আত্মীয়রা অনেক সময়ই ভুলে যান তাঁরাও একদিন বৃদ্ধ হবেন, তাদেরও একদিন কর্মক্ষমতা, রূপ- জৌলুস হারাবেন। সময়ের নিয়মে তারাও একদিন সাকার থেকে বেকারও হবেন। 

বাংলায় একটি সুন্দর কথা আছে-

"চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়।"

হাঁ উপরের বাক্যটি সত্য। 

বাস্তবমুখী তারা অবশ্যই স্মরণে রাখেন। তবে অনেক বিচক্ষণ মানুষও সময়ে সময়ে ভুলে যান। আর এই ভুলে যাওয়ার প্রমান পাওয়া যায় তাঁর অহংকারের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে। আমরা সকলেই জীবনের নিয়মে একদিন বার্ধক্যের দরজায় কড়া নাড়াব, আমরাও একদিন বৃদ্ধ হবো। এ কথা চিরসত্য। এই বোধজ্ঞানহীন হয়ে পড়েন শিক্ষিত অশিক্ষিত সব শ্রেণীর মানুষ। 

আমাদের সমাজে  দায়িত্ববোধ শূন্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথাও যেন আমাদের সমাজ আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলির মত আষ্টেপৃষ্টে  আঁকড়ে ধরছে, আমরা নকল করছি ওদের খারাপ গুলিকে। যা কখনও কাম্য নয়। এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আমাদের দেশের অতীত ঐতিহ্যের পরিপন্থী। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে বিশৃঙ্খল করে তুলছে। আজ থেকে বিশ বছর আগেও আমাদের সমাজে "বৃদ্ধাশ্রম" এর এতটা প্রচলন ছিল না। আজ গ্রামেগঞ্জে বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে ব্যবসায়িক বৃদ্ধাশ্রম চালু হচ্ছে। যে গুলিতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কেবলই পণ্য স্বরূপ। 

আজকের দিনে একান্নবর্তী সংসার তো দিন দিন কমে আসছে। একান্নবর্তী সংসারে এই সমস্যাগুলি ততটা ছিল না। এক সময় শৈশবে পড়া হয়ে গেলে মনে পড়ে ঠাকুমার ঘরে ঠাকুমার লেপের তলায় ঢুকে গল্প শুনতাম আমরা অনেকেই। আজকাল ছোট পরিবারগুলোতে শিশুরা সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত। 

আমার ঠাকুমাকে আমি শৈশব থেকেই বিধবার বেশে দেখেছি। ঠাকুমা রোজ রাত্রে মুড়ি আর বেসনের বরা খেয়েই ঘুমাতে যেতেন। মনে পড়ে সে সময় ঠাকুমার ওই থালার মুড়িটা ছিল আমাদের কাছে অমৃতসম। ঠাকুমাও একটু বেশি করে মুড়ি নিতেন, জানতেন আমরাও (ভাই, বোনেরা) এক দুগাল মুড়ি ঠাকুমার সাথে খাব। 

সকলের কাছে অনুরোধ, বয়স্ক মানুষদের একটু শ্রদ্ধা, ভালোবাসা দিন। একটু দায়িত্ব নিন। ওনাদের এখনও অনেক কিছু দেবার আছে এসমাজকে। বাড়ির প্রবীণ মানুষগুলির কাছে শিশুকে বেশিক্ষন থাকতে দিন। আপনার শিশুটির তাতে ভালোই হবে, মন্দ হবে না। আপানি আমি যদি বাড়ির প্রবীণ এই ব্যক্তিদের সাথে ভালো আচরণ করি, দেখবেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও আমাদের সাথে ভালো আচরণই করবে। 

নচেৎ...

যা দেখবে তাই শিখবে।

আপনি আমি যেমন আচরণ করব, ওরাও আমাদের সাথে তেমন আচরণই করবে। অর্থাৎ আমাদেরও শেষ পরিণতি অবহেলা, অবজ্ঞা নয়ত বৃদ্ধাশ্রমে শেষ জীবন। 

(www.theoffnews.com - old age)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours