মৌসুমী প্রামাণিক, লেখিকা, কলকাতা:
"হর ঘড়ি বদল রহী হ্যায় রূপ জিন্দেগী
ছাঁও হ্যায় কভী কভী হ্যায় ধুপ জিন্দেগী
হর পল ইঁহা জী ভর জিও
জো হ্যায় সমা কল হো না হো..."
সিনেমার গান অথচ চরম সত্য। এমনই কিছুটা উপলব্ধি আমারও নার্সিংহোম থেকে ঘরে ফিরে আসার পর। শরীর ও মন দুটোতেই একটা অস্বস্তি। শরীরের বিষয়টা প্রিয় ডক্টরের ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু আমার মনের খবর আমি ছাড়া কে রাখবে? তাই প্রশ্ন উত্তর পর্ব চলতেই থাকলো। তারই কিছু অংশ এই প্রতিবেদনে উপস্থিত করতে চলেছি।
লকডাউন পিরিয়ডের শেষদিকে প্রায়ই একটা কথা অনেককে বলতে শোনা যেত; "করোনাতে মরবো তাও ভালো, তবু খিদেতে মরতে চাই না!"
প্রতিবাদে আমি কবিতায় লিখেছিলাম, মৃত্যু মূহুর্তটা বড্ডো রূঢ়। যতোই আমি সাহসী ও বেপোরোয়া হই না কেন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার আগে চোখের কোন দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়বেই। মেঘে ঢাকা তারার মতো বলতে ইচ্ছে করবে; "আমি বাঁচতে চাই, আমায় বাঁচতে দাও..."
বিশেষ নামী দামী অসুখ না হলেও সেদিন যে কারণেই হোক না কেন আমার প্রাণ আর আমার শরীরের মধ্যে থাকতে চাইছিল না। কি যে হচ্ছিল শরীর আর মনের ভিতর বলে বোঝাতে পারবো না। আমি ডক্টরকে বলেছিলাম, আর সহ্য করতে পারছি না এই জীবন এই কষ্ট। আমাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিন।
আর আধ্যাত্মিক মানুষ হিসাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, "আর কষ্ট দিও না...যদি সব কাজ ফুরিয়ে গিয়ে থাকে, আমায় নিয়ে চলো..." তবে যাবার আগে সেই মানুষটির কথা খুব মনে পড়ছিল যাকে আমি সবচাইতে বেশী ভালোবাসি। মনে হচ্ছিল একবার যদি দেখা হতো, যদি সে এসে একবার হাত ধরতো! হয়তোবা শেষবারের মতো!
সত্যি বলতে কি এই জাগতিক জগৎ ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল সেদিন। কিন্তু তাই যদি হয় তবে আমি ঐ শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে কেন পারছিলাম না? মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছিলাম কেন?
দ্বন্দ্বটা এইখানেই। চাইলেই কি আমরা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারি? সে অধিকার আমাদের দেয়নি ঈশ্বর।
আবার অন্যদিকে বাঁচার অধিকারের জন্য আমরা লড়াই করতে ভুলে গিয়েছি। খাদ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, চিকিৎসা, চাষী, রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই তো করছি অনেক। কিন্তু ইনডিভিজুয়ালি নিজেদের বাঁচার জন্য কি করছি? কারখানা, বাস ট্রাকের ধোঁয়া গিলছি, প্রতিবাদ নেই। সুউচ্চ বিল্ডিং শহরের বাতাস রুদ্ধ করছে। প্রতিবাদ নেই। রাস্তায় ঢালাও অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি হচ্ছে মানা করছি না। দৈনন্দিন একঘেঁয়ে জীবনে একঝলক প্রেমের বাতাস বয়ে আসলেও সমাজ সংস্কারের ভয়ে দায়িত্ব নেবার ভয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছি। দাবিয়ে রাখছি আমার সমস্ত আবেগকে।
আমার চোখে সবচাইতে বড় ফাইণ্ডিং আমরা আমাদের যৌন ইচ্ছাকে প্রতিদিন বলি দিচ্ছি, সঙ্গে ডিপ্রেসনের বলি চড়ছি একটু একটু করে। নিজেরাই নিজেদেরকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিচ্ছি।যৌনতাকে মীন কেন ভাবি? এটাও তো আর পাঁচটা প্রবৃত্তির মতোই নেসেসিটি। একদিন বা একরাতের একটি যৌনসম্পর্ক মন ও শরীরকে যে কতোখানি উজ্জীবিত করে তা আমরা ভেবেই দেখিনি। ভাবি সংযম করাটাই মহানতা। না। ভুল ভাবি। হরমোনস নিঃস্বরণেরও প্রয়োজন আছে। অতিরিক্ত হরমোন শরীর ও মনকে ডিসব্যালান্স করে।
তাই নিজেকে ভালো রাখাটা আমাদের নিজেদেরই দাবী হয়ে ওঠা উচিৎ। এর সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে আমার পাশের মানুষটি আমার বন্ধু প্রতিবেশী আপন পর ইত্যাদি মানুষকে যতোটা সম্ভব ভালো থাকার সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টি।
যা! লিখতে লিখতে হারিয়ে ফেললাম লেখাটাকে। পরে আবার লিখবো। শুধু একটাই কথা বলে শেষ করবো, এসো আমরা ভালোবাসা অভ্যাস করি, একে অন্যের যত্ন করি, দেখা না হোক ফোনে অন্তত যোগাযোগটা নিয়মিত রাখি। শুদ্ধ বাতাসকে বইতে দিই তা বসন্তের বাতাস হোক কিংবা মরশুমী। এবং লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, "Make friendship without condition and without any limitation..."
হ্যাঁ তারা না হয়েও আমি আজ বলছি, "আমি বাঁচতে চাই...অনেক কাজ করতে চাই...সকলকে না পারলেও অনেককে পাশে নিয়েও আরো আরো কিছুটা পথ চলতে চাই..."
"একটু দেখা...একটু ছোঁয়া...
একটু অনুরাগ
শতসহস্র কাঁটার মাঝে যেন
ফুটন্ত গোলাপ-সোহাগ...
ঝড়ের বেগে আসা যাওয়া
ঝঞ্ঝার মধ্যে পরিচয়...
বৃষ্টিস্নাত সমাপনে যার সুগন্ধি
খানিকটা হলেও থেকে যায়.."
নামহীন সম্পর্কগুলোর প্রতি শুভকামনা ও আন্তরিক ভালোবাসা জানিয়ে আজকের প্রতিবেদন একখানেই শেষ করছি। সুস্থ থাকবেন। ভালো থাকবেন।
(www.theoffnews.com - stay well health lifestyle)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours