প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূূর্ব বর্ধমান:

রাজনৈতিক দলগুলি জনগনের মতদানের কি কোন মূল্য দেন? বর্তমান সময়ে নির্বাচকদের মনে এই প্রশ্ন গভীর ভাবেই রেখাপাত করছে। 

অনেকেরই মনে হচ্ছে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক দল ও দলের নেতৃত্বের চোখে কেবলই একটি ব্যালট মাত্র। বাম ডান সব দলের কিছু নেতৃত্বের দলবদল এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে দলগুলিকে।

আমি নির্দিষ্ট কোন দলের নেতা নেত্রীর দিকে আঙ্গুল তুলছি না। কারন দেখছি সব দলের নেতা নেত্রীরাই দিন দিন নীতি আদর্শহীনতার পথে পা বাড়াচ্ছেন তাঁদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য। দলবদল করছেন নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। এমনকি দাম্পত্য কলহও দল বদলের কারন হয়ে উঠছে যা হাস্যকর। আপনি আজকে যাঁকে আদর্শবান নেতা ভাবছেন, দলের অনুগত সৈনিক ভাবছেন কালই হঠাৎ যখন তাঁরই অন্য রূপ চোখের সামনে দেখছেন তখন অবাক হচ্ছেন। এরাজ্যে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের অনুপ্রবেশ আজকে নয় বরং বিগত তিন দশক পূর্বেই তার অনুপ্রবেশ ঘটেছে এরাজ্যের রাজনীতিতে। মাটি থেকে শুরু করে কয়লা পাচারকারীদের দলে অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছিল বিগত বাম সরকারের মাঝামাঝি সময়ে। তবুও বলতে হয় সে সময়ে দলের নিয়ন্ত্রণ কখনোই এইসব মাফিয়াদের হাতে চলে যায়নি। ফলে সাধারণ মানুষ সেসব নিয়ে খুব একটা আমল দেননি। কিন্তু বর্তমান তৃণমূল দলটির রাজনীতি ও দলের নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে দুর্বৃত্তদের হাতে চলে যাওয়ায় এ চিত্র লুকিয়ে রাখা যায়নি নির্বাচকদের সামনে। গ্রাম বাংলা, শহর ও শিল্পাঞ্চলে রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীদের এই দুর্বৃত্তদের সাথে প্রকাশ্য মেলামেশা জনমনে রাজনীতি সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব তৈরি করছে। অনেক মানুষই বলতে শুরু করেছেন আজ 'যেই যায় লঙ্কায় সেই রাবন', 'সকলেই চোর' ইত্যাদি কথাবার্তা। যার ফলে সুস্থ রাজনীতি এরাজ্যে ফিরে আসা আর সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। এই দুর্বৃত্তরাজের কারণেই মূল রাজনৈতিক অস্থিরতা ।  

দলের নিয়ন্ত্রনের রাশ এই কারনেই দলের হাতে আর থাকছেও না। একটু স্বার্থহানি হলে দল ছেড়ে অন্য দলে যাওয়া, আদর্শ ত্যাগের ঘটনাও তুচ্ছ আজ রাজনৈতিক দলের কর্মীদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে। মূলত এ প্রবণতা দক্ষিণপন্থী দলের অন্দরে বেশি। বামপন্থী দলেও একেবারে নেই বললেও চলে না। আর এই দলবদল সাধারণ মানুষও মেনে নিচ্ছেন। অথচ নেতাদের দল বদল যে নির্বাচকের ব্যালটের মতদানের মূলে কুঠারাঘাত তা মানুষ ভাবছেন না। 

অনেক মানুষের ভোটে জয়ী একজন বিধায়ক রাতারাতি দলত্যাগ করে অন্য দলে চলে যাচ্ছেন। এতে যে সেই বিধায়ক তার ভোটারদের ঠকালেন এ ভাবনা তারা একবারের জন্যও ভাবছেন না। দলত্যাগ করলে যে বিধায়ক পদে বা সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে করা উচিত এটুকু নৈতিকতা ও তাঁদের নেই। অথচ আদর্শবান হলে, নৈতিকতা বোধ থাকলে তাই করা উচিত। 

ফলে বলতেই হয় নির্বাচকের মূল্য এই সব নেতাদের কাছে "শূন্য"।

(www.theoffnews.com West Bengal politics)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours